ছবি: সংগৃহীত
গত ১৪ই মে তারিখের কথা। কানাডার অন্টারিও প্রদেশের ব্রাম্পটনের বাসিন্দা হারজিৎ সিং ধাড্ডা মাথায় সবুজ রঙের পাগড়ি বেঁধে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন এবং মেয়ে গুরলীনকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নেন। এরপর টরন্টোর ব্যস্ত পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে মিসিসাগায় তার কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন। এটাই ছিল বাবার সঙ্গে গুরলীনের শেষ দেখা।
এদিন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৫১ বছর বয়সী হারজিৎ কর্মস্থলের গাড়ি পার্কিংয়ে পৌঁছানোর পর দুই ব্যক্তি তাকে আটকে ফেলেন। একজন হারজিতের শরীরে একাধিক গুলি করেন এবং একটি চুরি করা গাড়িতে করে পালিয়ে যান। আহত অবস্থায় হারজিৎকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে মারা যান তিনি।
কয়েক ঘণ্টা পর দুই ব্যক্তি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে হারজিৎ হত্যার দায় স্বীকার করেন। তারা নিজেদের ভারতের গুজরাট রাজ্যের সাবরমতি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী থাকা লরেন্স বিষ্ণোইয়ের নেতৃত্বাধীন একটি অপরাধী গ্যাংয়ের সদস্য বলে দাবি করেন। খবর আল জাজিরার।
হারজিৎ হত্যার এক মাসের মধ্যে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারে শহরের এক ব্যবসায়ী এবং হারজিতের শহর ব্রাম্পটনের আরেক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তারা দুজনও ভারতীয় বংশোদ্ভূত। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব হত্যাকাণ্ড ভারতের অপরাধী চক্রগুলোর কানাডায় ছড়িয়ে পড়ার ভয়ংকর নজির। লরেন্স বিষ্ণোই নামের ভারতভিত্তিক একটি কুখ্যাত চক্র এসবে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
কানাডায় প্রায় ৭ লাখ ৭০ হাজার শিখ বাস করেন; যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ দশমিক ১ শতাংশ। ভারতের বাইরে কানাডায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিখের বসবাস। ১৯৮০-এর দশকে ভারতীয় বাহিনী পাঞ্জাব রাজ্যের একটি অংশ নিয়ে ‘খালিস্তান’ নামে আলাদা শিখ রাষ্ট্র গঠনের দাবিদারদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালায়। এতে অনেক শিখ কানাডায় চলে যান।
এখন কানাডার অনেক রাজনৈতিক নেতা বিষ্ণোই গ্যাংকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি তুলেছেন।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার মুখ্যমন্ত্রী ডেভিড ইবি গত ১৭ই জুন এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করা হলে পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত করতে পারবে এবং এ ধরনের তৎপরতা থামাতে পারবে।
বিষ্ণোই গ্যাংকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতা উল্লেখজনক মাত্রায় বাড়বে। তখন তারা সন্ত্রাস–সম্পর্কিত অভিযোগ তুলতে পারবে, গ্যাংয়ে লোক নিয়োগ বা আর্থিক সাহায্য দেওয়া অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা যাবে এবং তাদের ওপর নজরদারির ক্ষমতাও বাড়বে।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন