ছবি: সংগৃহীত
সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা কাটছে না। গতকাল রোববার (৩১শে আগস্ট) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকেও নিজেদের আগের অবস্থানই তুলে ধরেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
তবে প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কেউ যদি নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নিয়ে ভাবে, সেটা হবে জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন চায় বিএনপি। তারা সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়নের পক্ষে। তবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দলটি বলেছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বৈধ বা সাংবিধানিক কোনো উপায় থাকলে সেটা তারা মেনে নেবে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে একমত হলেও দেশ একটি নীলনকশার নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছে। তারা সংসদ নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, সনদ বাস্তবায়নে গণভোট এবং সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
আর এনসিপি বলেছে, তারা চায় আগামী যে নির্বাচন হবে, সেটা যেন ‘গণপরিষদ’ নির্বাচন হয়। তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্ট স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তিনি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের যে সময় ঘোষণা করেছেন, নির্বাচন সেই সময়ের মধ্যে হবে।
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান মতভিন্নতার মধ্যে সম্প্রতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস তার সরকারি বাসভবন যমুনায় রোববার এই তিনটি দলের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। সেখানে মূল আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় সংস্কার প্রস্তাব তথা জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচন।
বৈঠক-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হককে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিপেটার ঘটনা এবং জাতীয় পার্টির বিষয়ও আলোচনায় আসে। নুরুল হকের ওপর হামলার বিষয়ে বৈঠকে তিন দলই প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছে, এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ হয়েছে। তারা এই ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
বৈঠকে জামায়াত ও এনসিপি আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলেছে। এ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি বলে দলটি পরে সাংবাদিকদের জানিয়েছে। অবশ্য জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। বিষয়টি জামায়াত ও এনসিপি নিজ থেকে তুলেছে।
এ বিষয়ে পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে জাতীয় পার্টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একেকজন একেক ধরনের মতামত দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা তা শুনেছেন।
বৈঠকে মূলত প্রধান উপদেষ্টা দল তিনটির কাছে বর্তমান পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে মনোভাব জানতে চেয়েছেন। বৈঠকে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি জামায়াতে ইসলামী প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)
খবরটি শেয়ার করুন