ছবি: সংগৃহীত
ভরা বর্ষার সময় এখন। যখন-তখন অঝোরে ঝরছে বৃষ্টি। রোমান্টিক মন যাদের, তারা তো ফুরসত মিললেই বৃষ্টিতে ভেজেন বাড়ির ছাদে বা সামনের উঠোনে। মনের আনন্দে ভেজার আগে জেনে নিন, বৃষ্টির পানিতে গোসল করারও অনেক সুফল রয়েছে। ত্বক, চুল ও শরীরের জন্য বেশ উপকারী বৃষ্টির পানি।
তবে বলে রাখা ভালো, বৃষ্টি শুরুর প্রথম কিছুক্ষণ না ভেজা ভালো। বৃষ্টির প্রথম ধাক্কায় বায়ুমণ্ডলে থাকা ধূলিকণা কিংবা অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ মাটিতে নেমে যায়। তারপর ইচ্ছেমতো ভিজতে পারেন।
বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে চুল পরিষ্কার করে। এ পানি সামান্য অ্যাসিডিক বা ক্ষারীয়। বৃষ্টি হলে যারা গোসল করতে ছাদে চলে যান, তারা জেনে রাখুন, নিয়মিত বৃষ্টির পানি দিয়ে চুল ধুলে নিষ্প্রভ চুলও হয়ে ওঠে ঝলমলে। তবে বৃষ্টিতে গোসল করার পর সাধারণ পানি দিয়ে চুল শ্যাম্পু করতে হবে। তাহলেই এই উপকার পাওয়া যাবে। ভালো হয়, যদি নিমপাতার গুণসমৃদ্ধ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়া যায়। এতে বর্ষার দিনে মাথার ত্বকে খুশকিও জমতে পারবে না।
বৃষ্টির পানি ত্বকের জন্য উপকারী। এতে থাকা বিভিন্ন উপাদান ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে।
বৃষ্টির পানি মুহূর্তের মধ্যে আপনার মন সতেজ করে তুলতে সক্ষম। এতে এমন কিছু অণুজীব রয়েছে, যা বিপাকীয় উপজাত হিসেবে ভিটামিন বি১২ তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। আপনি যদি ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি পূরণ করতে চান, তাহলে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য ঝুম বৃষ্টিতে গোসল করতে পারেন। তবে শর্ত একটাই, বৃষ্টির পানিতে গোসল করার পর সাধারণ পানি, সাবান ও শ্যম্পু দিয়ে ভালোভাবে শরীর ও চুল ধুয়ে নিতে হবে।
বর্ষার মৌসুমে নিয়মিত ১০ থেকে ১৫ মিনিট বৃষ্টিতে স্নান করলে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে বলে মনে করা হয়। শুধু তা-ই নয়, কানে ব্যথা ও যে কোনো ধরনের কানের সংক্রমণ দূর করতে বৃষ্টিতে কিছু সময়ের জন্য গোসল করতে পারেন।
এরপর কুসুম গরম পানিতে আবার গোসল সেরে নিন। তবে ১৫ মিনিটের বেশি বৃষ্টিতে না ভেজাই ভালো। তাছাড়া বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস থাকলে বৃষ্টিতে ভেজা থেকে বিরত থাকা উচিত। নইলে জ্বর ও ঠাণ্ডার সমস্যায় ভুগতে হতে পারে।
রোদ ও ঘামের কারণে ত্বকে অনেকের র্যাশ হয়। বর্ষায় এই র্যাশ থেকে মুক্তি পেতে বৃষ্টিতে গোসল করতে পারেন। বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে ত্বক ঠাণ্ডা থাকে ও র্যাশ কমে। ত্বকে ঘামাচি থাকলেও বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে উপকার পাওয়া যায়।
ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন ও এন্ডোরফিন—এই চারটি হরমোনকে হ্যাপি হরমোন বলে। বৃষ্টিতে ভিজলে শরীরে এন্ডোরফিন ও সেরোটোনিন হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন দুশ্চিন্তা দূর করে এবং মন ফুরফুরে রাখতে সহায়তা করে। মানসিক চাপ দূর করতে তাই মৌসুমি বৃষ্টিতে মাঝেমধ্যে ভিজতেই পারেন। তবে মৌসুমের শুরুর দিককার বৃষ্টিতে না ভেজাই ভালো। এতে করে রোগবালাই হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বৃষ্টি শুরুর প্রথম ৫–১০ মিনিট তাতে না ভেজা ভালো। তাতে দূষিত পদার্থ থাকে। জুতা-মোজা পরে বৃষ্টিতে ভিজতে যাবেন না, তাতে ঠাণ্ডা লাগবে বেশি। বৃষ্টির পানিতে ভিজলে পরে সাধারণ পানি দিয়ে গা ধুয়ে ফেলুন। সম্ভব হলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।
শিশুরা বৃষ্টিতে ভিজতে চাইলে তাদের জুতা খুলে দিন, যাতে জুতার ভেতরে পানি জমে যেতে না পারে। বৃষ্টিভেজা শরীরে বেশিক্ষণ থাকবেন না, দ্রুত শরীর মুছে গরম কাপড় পরুন। জ্বর বা ঠাণ্ডার সমস্যা থাকলে বৃষ্টিতে ভিজবেন না।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন