সোমবার, ৭ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশেষ বিমানে ২৫০ জনকে সীমান্তে এনেছে ভারত, শিগগিরই বাংলাদেশে ‘পুশইন’

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:৪৪ অপরাহ্ন, ৬ই জুলাই ২০২৫

#

ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ উড়োজাহাজে করে আটক ব্যক্তিদের সীমান্ত এলাকায় আনা হয়েছে। ছবি: দেশ গুজরাটের সৌজন্যে

ভারতের গুজরাট রাজ্য থেকে প্রায় ২৫০ জনের বেশি কথিত অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে গত বৃহস্পতিবার (৩রা জুলাই) কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) বিশেষ ফ্লাইটে করে সীমান্তে নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গুজরাট পুলিশ অবৈধভাবে বসবাসকারী কথিত বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করার এ অভিযান পরিচালনা করে। এরপরই তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।

গুজরাট পুলিশের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রোটোকল অনুযায়ী এ নির্বাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আটককৃতদের বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখান থেকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের ‘ফেরত পাঠানো’ হবে।

গুজরাট পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশি নাগরিক, এ ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত। বেশ কিছু অনিবন্ধিত সন্দেহভাজনকে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে পৌঁছে দিতে আইএএফের এয়ারবাস এ৩২১ উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হয়েছে। এ সীমান্ত রাজ্যগুলো থেকে বিএসএফ স্থল সীমান্ত দিয়ে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করবে। গুজরাট এটিএসের (অ্যান্টি টেরর স্কোয়াড) কড়া নিরাপত্তায় ওই কথিত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভাদোদরা বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে আনা হয় এবং বিশেষ বিমানে তোলা হয়।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গুজরাট পুলিশের অস্থায়ী আটক কেন্দ্রে তাদের রাখার পর থেকেই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল। ফেরত পাঠানোর কাজটি করে বিএসএফ। তাই গুজরাট পুলিশ ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের (এফআরআরও) সঙ্গে সমন্বয় করে এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা অনুযায়ী তাদের বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে। গত এপ্রিল মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।’

কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, আটক ব্যক্তিদের বাংলাদেশের কাছাকাছি সীমান্ত রাজ্যগুলোতে নামিয়ে দেওয়া হবে, যেখান থেকে বিএসএফ তাদের সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে পাঠাবে। কর্মকর্তারা আরও জানান, এ সীমান্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে উত্তর-পূর্বের কিছু রাজ্য ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কলকাতার কাছাকাছি কিছু সীমান্তবর্তী এলাকায় ইতিমধ্যে বিএসএফের নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক স্থানীয় সূত্র। তবে বিএসএফের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

এ ঘটনায় রাজনৈতিক মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধ অভিবাসন ও সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্ট উদ্বেগের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে প্রতিবেশী বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যথাযথ কূটনৈতিক সমন্বয় ছাড়া এ পদক্ষেপ ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।

ভারতের মানবাধিকার সংগঠনগুলো এভাবে লোকজনকে নির্বিচারে আটক করে প্রতিবেশী দেশে পাঠানো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, কাগজপত্র ছাড়া কাউকে এভাবে সীমান্তে পাঠানো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন। গত এপ্রিলে গুজরাট পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশি নাগরিক সন্দেহে সাড়ে ৬ হাজার মানুষকে আটক করে। পরে জানা যায়, আটকদের অধিকাংশই ভারতীয়। একই ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী আসাম রাজ্যে।

শুধু নথিপত্র না থাকা এবং মুসলিম ও বাংলাভাষী হওয়ার কারণে ভারতীয় নাগরিকদেরও অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিক বলে শনাক্ত করছে ভারতের পুলিশ। শুধু তাই নয়, তাদের রাতের আঁধারে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠাচ্ছে বিএসএফ।

ভারত পুশইন

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন