শুক্রবার, ৩রা অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে সাম্প্রদায়িক কটাক্ষের শিকার ইয়াশ রোহান, পাশে মেহজাবীন, আরশরা *** দেশের পতাকা নিয়ে গাজামুখী ‘মিডিয়া ফ্লোটিলায়’ শহিদুল আলম *** বিদেশি নম্বর থেকে জাজিরা থানার ওসিকে হত্যার হুমকি, থানায় জিডি *** ইহুদি উপাসনালয়ে হামলাকারী জিহাদ সম্পর্কে যা জানা গেল *** অন্যের ওপর দোষ চাপানো বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ‘অভ্যাস’: ভারত *** পাকিস্তানের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি ভারতের বিমানবাহিনীর প্রধানের *** মানচিত্র থেকে পাকিস্তানকে মুছে ফেলার হুমকি দিলেন ভারতের সেনাপ্রধান *** ফ্লোটিলা বহর আটকের তীব্র নিন্দা জানাল বাংলাদেশ *** ভারতের ধনী নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৫০১৭০ কোটি নিয়ে শীর্ষে জয়শ্রী, ষষ্ঠ বলিউড নায়িকা *** ২০২৬ বিশ্বকাপের অফিশিয়াল বল ট্রাইওন্ডা আসলে কী

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টিকে চান ফখরুল, সামাজিক মাধ্যমে নানামুখী আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৭:০৫ অপরাহ্ন, ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২৫

#

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ চেয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিএনপি অতীতের মতো কাউকে নির্বাচনের বাইরে রাখার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতার পালাবদল হওয়া উচিত। 

সম্প্রতি ঢাকার গুলশানে ভারতের কলকাতার বাংলা  অনলাইন সংবাদমাধ্যম 'এই সময়'-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি গতকাল সোমবার (২২শে সেপ্টেম্বর) প্রচারিত হয়। তার এ সাক্ষাৎকার নিয়ে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানামুখী আলোচনা চলছে। জামায়াতে ইসলামী বিএনপির কার কাছে এই আসনগুলো দাবি করেছে—তার প্রমাণ জাতির কাছে উপস্থাপন করার জন্য দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে দাবি করেছে দলটি।

বিএনপি বলছে, পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমে মির্জা ফখরুলের সাক্ষাৎকার ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তবে সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের কোন অংশ, বা কোন বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, এ বিষয়ে কিছু স্পষ্ট করা হয়নি বিএনপির মিডিয়া সেলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

সংসদ নির্বাচনে ‘৩০টি আসন দেওয়ার প্রস্তাব’ নিয়ে বিএনপির মহাসচিবের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। আজ মঙ্গলবার (২৩শে সেপ্টেম্বর) এ-সংক্রান্ত একটি বিবৃতি দেন তিনি।

এতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘‘এই সময়’’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রদান করেছেন, তার প্রতি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ ধরনের সম্পূর্ণ অসত্য, অমর্যাদাকর ও প্রতিহিংসাপরায়ণ বক্তব্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো প্রবীণ রাজনীতিবিদ দিয়েছেন, তা বিশ্বাস করতে আমাদের কষ্ট হয়। এই বক্তব্যের সঙ্গে সত্য ও শিষ্টাচারের কোনো মিল নেই। জামায়াতে ইসলামী কার কাছে এই আসনগুলো দাবি করেছে—তার প্রমাণ জাতির কাছে উপস্থাপন করার জন্য দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে আহ্বান জানাচ্ছি।’

'এই সময়' অনলাইনে প্রকাশিত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাক্ষাৎকার ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। আজ গণমাধ্যমে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিএনপি মহাসচিবকে নিয়ে ‘এই সময় অনলাইন’ সাক্ষাৎকারটি ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, ভারতের দৈনিক পত্রিকা ‘এই সময়’-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে তিনি এ ধরনের কোনো বক্তব্য দেননি। সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলেও, এটি ভুল ও বিভ্রান্তিকর।

এতে আরও বলা হয়েছে, তিনি (মির্জা ফখরুল) এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের নিন্দা জানান এবং জনগণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, এই বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য।

পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

প্রশ্ন: আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন কি আদৌ হবে? জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি যেভাবে একটার পরে একটা নতুন দাবি তুলছে এবং সেগুলো পূরণ না হলে নির্বাচন হতে দেবে না বলছে, অনেকেই সংশয়ে। হলেও দেশজুড়ে প্রবল অশান্তি ও রক্তপাত হবে?

মির্জা ফখরুল: আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ভোট হবে। সংশয়ের কোনো জায়গা নেই। কোনো অশান্তি হবে না। মানুষ ভোটাধিকার ফেরত চাইছেন, নির্বাচন চাইছেন। উৎসবের মতো ভোট হবে ফেব্রুয়ারিতে।

প্রশ্ন: জামায়াত যে বলছে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি ছাড়া ভোট হবে না, এনসিপি প্রচলিত সংবিধান বাতিল করে আগে গণপরিষদের নির্বাচন চাইছে। না হলে ভোট হতে দেবে না বলছে...

মির্জা ফখরুল: জামায়াত ভোটে আসবে। পিআর–টিআর নয়, মানুষ যে পদ্ধতিতে ভোট বোঝেন, সেই প্রচলিত পদ্ধতিতেই হবে বাংলাদেশের ভোট। জামায়াতও দেখবেন অংশ নেবে। আর এনসিপিকে আমরা কোনো শক্তি বলেই আর মনে করি না। এটা ঠিক এই ছাত্ররাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের বারুদে আগুনটা দিয়েছিল। এখন আর তাদের কিছু নেই। ডাকলে লোকও আসে না।

প্রশ্ন: শোনা যায়, এনসিপি নাকি আপনাদের কাছে আসন চেয়েছিল?

মির্জা ফখরুল: না। এনসিপি কখনও চায়নি। তবে জামায়াত চেয়েছে। এনসিপির এখন একমাত্র লক্ষ্য, বিএনপিকে সরকার গঠন করতে না দেওয়া।

প্রশ্ন: জামায়াত ৫০টা আসন চেয়েছে?

মির্জা ফখরুল: ৩০টা চেয়েছে। আমরা উৎসাহ দেখাইনি। অনেক কম একটা সংখ্যার কথা বলেছি, যা তাদের মনঃপূত হয়নি। আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি, জামায়াতকে আর আমরা মাথায় উঠতে দেবো না। তারা যত বড় না শক্তি, আমরা অকারণে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পিআর-টিআর সবই বিএনপির উপরে চাপ সৃষ্টির কৌশল।

জামায়াত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছে। আসলে দেশের মানুষ প্রবলভাবেই নির্বাচন চাইছেন। সেনাবাহিনী চাইছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও চাইছেন।

প্রশ্ন: নির্বাচনের বিষয়ে ইউনূসের উপরে আপনি আস্থা রাখছেন? কিছু দিন আগেও তো তার বিরুদ্ধে এনসিপির প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন আপনারা। তিনি নির্বাচন করাতে চান না, এমন কথাও বলা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল: পরিস্থিতি বদলেছে। দলের পক্ষে আমি তার সঙ্গে কথা বলি। দেখছি, এখন তিনি সর্বোচ্চ সিরিয়াস। আন্তরিকভাবেই চান ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হোক। আগস্টের ৫ তারিখে ড. ইউনূস নির্বাচনের দিন ঘোষণা করলেন। তার আগের দিন রাতে ইউনূস সাহেবের বাসভবনে তার ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ–জামানের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আমার দীর্ঘ আলোচনা হয়।

সেনাপ্রধান বলেন, পুলিশ কম বলে এক বছর ধরে সেনাদের রাস্তায় ডিউটি করতে হচ্ছে, যা একেবারেই কাম্য নয়। তিনি ডিসেম্বরে ভোটের কথা বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারিতে আপত্তি নেই। সব রকম সহযোগিতা করবেন।

তিনি চান, নির্বাচন করিয়ে বাহিনী এ বার ব্যারাকে ফিরুক। ইউনূসও বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে অব্যাহতি চান তিনি। বলেছেন, আর চাপ নিতে পারছেন না। আমরাও আশ্বাস দিয়েছি, সরকার গঠনের পরেও সংস্কার চলবে। স্বৈরাচারীদের বিচার প্রক্রিয়াও চলবে।

তিনটি আলাদা বিষয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই, তাদের সংস্কারের গুরুত্বই বা কী! নতুন কথা তারা বলেনি। বিএনপির ৩১ দফায় সবই আছে।

প্রশ্ন: সম্প্রতি যে দিন জাতীয় পার্টির অফিস ভাঙচুর হলো, তার পরের দিন বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপি নেতৃত্বকে বাসভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ইউনূস। কেন? তিনি কি কোনো বিশেষ বার্তা দিলেন আপনাদের?

মির্জা ফখরুল: (খানিক চুপ করে থাকার পরে) ঠিকই বলেছেন। সে দিন ইউনূস আমাদের একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। সে বার্তা সংক্ষিপ্ত, এক লাইনের। এক ধরনের ফাইনাল বেল বলতে পারেন। ড৷ ইউনূস সে দিন আমাদের জানিয়ে দেন, ফেব্রুয়ারিতে ভোটের বাস ধরতে না পারলে তিনি মার্চ থেকে আর থাকবেন না। এমন পরিস্থিতি যেন না হয়, যাতে ভোটটাই করা গেল না।

প্রশ্ন: আওয়ামী লীগ কি আগামী ভোটে অংশ নিতে পারবে? জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) বা ওয়ার্কার্স পার্টির মতো তাদের শরিকেরা?

মির্জা ফখরুল: আমরা বলেছি আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকেরা সবাই, এমনকি জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে অংশ নিক। একটা সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট হোক। এ জন্য অনেকে আমাকে ভারতের এজেন্ট, আওয়ামীর দালাল বলে গালাগাল দিচ্ছে। কিন্তু শেখ হাসিনার অপকর্ম আমরাও কেন করব?

হাসিনা ১৫ বছর প্রতিপক্ষকে ভোটে দাঁড়াতেই দেননি, তার শাস্তি পেয়েছেন। একই কাজ করলে আমরাও তো প্রতিফল পাব। তবে মানুষ এত রক্ত দেখেছেন, এত প্রাণহানি— তাদের মধ্যে আওয়ামী-বিরোধিতা রয়েছে।

প্রশ্ন: ইউনূস বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রভাব ছাড়া নির্বাচন ও সরকার গঠন হবে। সত্যিই কি বাংলাদেশে ভারতের কোনো প্রভাব আর অবশিষ্ট নেই?

মির্জা ফখরুল: ভারত মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী। সেই সময়ে এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। ভৌগোলিকভাবেও বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত, এক দিকে সাগর। সুতরাং ভারতের প্রভাব বাংলাদেশে থাকবেই। সমস্যা হলো, বাংলাদেশ বলতে শুধু আওয়ামী লীগকে বুঝেছে ভারতের শাসকেরা।

আওয়ামী লীগের ভাষ্য মেনে বিএনপি আর জামায়াতকে একই বন্ধনীতে ফেলেছে। জামায়াত আর বিএনপির রাজনীতি তো এক নয়। আমরা অসাম্প্রদায়িক, মধ্যপন্থী একটি গণতান্ত্রিক দল। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত সংবিধান রক্ষায় আজও আমরা স্বাধীনতা-বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই করছি। বামেরা আমাদের সঙ্গে রয়েছে।

প্রশ্ন: পঁচিশ বছর ধরে জামায়াত আপনাদের শরিক। দুটো নাম তাই এক সঙ্গে উচ্চারিত হয়।

মির্জা ফখরুল: ভুল। আওয়ামী লীগ এই অপপ্রচারটা ভারতকে বিশ্বাস করিয়েছে। তারা শুধুই নির্বাচনি শরিক। তারা ধর্মীয় রাজনীতি করে, আমরা করি না। আসলে আওয়ামী চশমা দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে দেখেই ভুলটা করেছে।

বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগই রাখেনি। আজ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্ষোভের পাহাড় তীব্র ভারত-বিরোধিতায় পর্যবসিত হয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষে আমি আশ্বাস দিচ্ছি, জামায়াতকে আর সুবিধা নিতে দেবো না।

আমরা চাই, ভারত সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখুক। আমরা কলকাতা যাব, কলেজ স্ট্রিট থেকে কত বই কিনেছি। আবার সেই সুযোগ পাব। সিনেমা, থিয়েটার দেখব। মানুষে মানুষে অবাধ যোগাযোগ হবে। ভিসা প্রক্রিয়া সাবলীল হবে। ভারতীয়রাও বাংলাদেশ স্বাগত। ভুল বোঝাবুঝির অবসান হোক।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির মহাসচিব

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250