নরসুন্দর বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে ধর্মীয় কটুক্তির অভিযোগ। ছবি: সংগৃহীত
১০ টাকা কম দেওয়াকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগ তুলে নরসুন্দর বাবা-ছেলেকে মারধরের পর পুলিশে সোপর্দের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার (২৩শে জুন) লালমনিরহাট পৌরসভার গোশালা বাজার হানিফ পাগলার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ বাবা-ছেলেকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। আটক ব্যক্তিরা হলেন নরসুন্দর পরেশ চন্দ্র শীল (৬৯) ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীল (৩৫)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার গোশলা বাজারের হানিফ পাগলার মোড়ে সেলুনের দোকান দিয়ে চলে পরেশ চন্দ্র শীলের পরিবার। আর ওই দোকানে কাজ করেন তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীল। গত রোববার (২২শে জুন) দুপুরে দোকানে কাজ করাতে আসা এক তরুণের সঙ্গে হিন্দু ও মুসলিম ধর্ম নিয়ে উভয়ে রসিকতা শুরু করেন; যা নিয়ে একপর্যায়ে বিতর্ক বাধে এবং তা তাৎক্ষণিক মিটে যায়। পরে কাজ করে নেন ওই তরুণ। কাজ শেষে মজুরি ১০ টাকা কম দিলে আবার তাদের মধ্যে বিতর্ক বাধে, যা অমীমাংসিত থেকে যায়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই তরুণ বিষ্ণু চন্দ্র শীলের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে স্থানীয়দের বলাবলি শুরু করলে একপর্যায়ে স্থানীয়রা এসে নরসুন্দর বিষ্ণু চন্দ্র শীল ও তার বাবাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে ‘মব’ তৈরি করে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়ে পাশে শহরের কালেক্টরেট মাঠে ইসলামী শাসনতন্ত্র বাংলাদেশের নায়েবে আমিরের জনসভায়। জনসভার কিছু লোক ও স্থানীয় মুসল্লিরা তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সদর থানা ঘেরাও করে ধর্মীয় কটূক্তির বিচার দাবি করে। খবর পেয়ে সদর থানা-পুলিশ হামলায় আহত নরসুন্দর বাবা-ছেলেকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে আসে এবং রাতে মামলা নিয়ে তাদের গ্রেপ্তার দেখায়।
গতকাল সোমবার দুপুরে কারাগারে বাবা-ছেলেকে দেখতে গিয়ে ঘটনার মূল রহস্য ফাঁস করে নরসুন্দর বিষ্ণু চন্দ্র শীলের স্ত্রী দীপ্তি রানী রায় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই তরুণ কাজ করে নিয়ে ১০ টাকা কম দিয়েছেন; যা পূরণ করতে আমার স্বামী ওই তরুণকে অনুরোধ করলে তিনি খেপে যান এবং পাশের মসজিদে নামাজ শেষ করে আসা মুসল্লিদের কাছে মিথ্যা ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগ দেন। এতে মুসল্লিরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার স্বামী ও শ্বশুরকে বেধড়ক মারধর করে পুলিশে দেয়।’
নরসুন্দর বিষ্ণু চন্দ্র শীলের স্ত্রী এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ন্যায়বিচার দাবি করেন। আর এমন দাবি করার একটি ভিডিও মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরনবী মিয়া বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার ধারায় বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মব তৈরি হয়েছে কি না বা সে ধরনের কোনো অভিযোগ ছিল কি না—এমন প্রশ্নে কোনো মন্তব্য না করে তিনি ফোন কেটে দেন।
তবে লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষ্ণু চন্দ্র শীল এর আগেও ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছিল বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। মবও সৃষ্টি করা হয়েছিল। আমরা আপাতত মামলা নিয়ে তদন্ত করছি। মব সৃষ্টির তথ্য পেলে সেটারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষ্ণু চন্দ্র শীলের স্ত্রী যা বলছে তা সঠিক নয়, বাচানোর জন্য প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন।
আরএইচ/
মব জাস্টিস নরসুন্দর বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ধর্মীয় কটুক্তির অভিযোগ লালমনিরহাট জেলায় ধর্মীয় কটুক্তির অভিযোগ
খবরটি শেয়ার করুন