‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’ সিনেমায় দেখানো শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে কেরালার বিভিন্ন স্কুলে। ছবি: সংগৃহীত
সিনেমা যে কখনো কখনো সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, এর প্রমাণ মিলল ভারতের কেরালায়। পরিচালক বিনেশ বিশ্বনাথনের প্রথম সিনেমা ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’-এর কল্যাণে রাজ্যটির বিভিন্ন স্কুলের শ্রেণিকক্ষে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এসব স্কুলের শ্রেণিকক্ষে এখন থেকে আর কোনো ব্যাকবেঞ্চার থাকবে না। সব শিক্ষার্থী বসবে ফার্স্ট বেঞ্চে। কীভাবে? সে উপায় দেখিয়ে দিয়েছেন পরিচালক তার স্থানার্থী শ্রীকুট্টনে। সিনেমাটি দেখে সে মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে বিভিন্ন স্কুলে। খবর ইন্ডিয়া টুডে ও ডেকান হেরাল্ডের।
২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় স্থানার্থী শ্রীকুট্টন। হলেই ভালো সাড়া মিলেছিল। তবে গত ২০শে জুন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সাইনা প্লেতে সিনেমাটি প্রচারের পর থেকে ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রে স্থানার্থী শ্রীকুট্টন। এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমাটি। গল্পের কেন্দ্রে চার শিক্ষার্থী, যারা খুবই দুষ্টু প্রকৃতির। পড়াশোনায় মন নেই। শ্রেণিকক্ষে তাদের স্থানও পেছনের বেঞ্চে। এ ব্যাকবেঞ্চার শিক্ষার্থীদের কাহিনি পর্দায় তুলে ধরে সমাজকে ভাবতে বাধ্য করেছেন বিনেশ বিশ্বনাথন।
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার নিয়মে সামান্য বদল এনে কীভাবে সবার প্রতি সমান মনোযোগ দিতে পারেন শিক্ষক, সে উপায় বাতলে দেওয়া হয় এই সিনেমার ক্লাইম্যাক্সে। সে উপায় বাস্তবে অনুসরণ করতে শুরু করেছে কেরালার স্কুলগুলো। সাধারণত শ্রেণিকক্ষে পরপর কয়েক সারিতে বেঞ্চ থাকে। তবে বর্তমানে সেই প্যাটার্ন বদলে বেঞ্চগুলোকে অর্ধবৃত্তাকারে সাজানো হয়েছে কিংবা শ্রেণিকক্ষের পরিসর আরেকটু কম থাকলে ইউ আকারে সাজানো হচ্ছে। এতে সব শিক্ষার্থীর দিকে সমান মনোযোগ দিতে পারছেন শিক্ষকরা। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মনন গঠনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
জানা গেছে, কেরালার ত্রিশুর, পালাক্কড়, কল্লাম, কান্নুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের কমপক্ষে আটটি স্কুলে এবং পাঞ্জাবের একটিতে এই নিয়ম অনুসরণ করে ক্লাস করানো হচ্ছে। সেসব শ্রেণিকক্ষের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন নির্মাতা বিনেশ বিশ্বনাথন।
ইন্ডিয়া টুডেকে নির্মাতা বলেন, ‘সিনেমা অবশ্যই সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। “ওস্তাদ হোটেল” কিংবা “ট্রাফিক”-এর মতো মালয়ালম সিনেমাগুলো সেটা করে দেখিয়েছে। যখন সিনেমার বার্তা সমাজে প্রতিফলিত হয়, তখন একজন নির্মাতা হিসেবে আমাদেরও ভালো লাগে।’
ডেকান হেরাল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্মাতা বিনেশ বিশ্বনাথন বলেন, ‘সিনেমাটি দেখার পর এক শিক্ষক আমাকে মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়েছেন, পাঞ্জাবের একটি স্কুলেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য সিনেমাটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছিলেন। ছোটবেলায় ব্যাকবেঞ্চে বসে অপমানিত হওয়ার স্মৃতিই আমাকে সিনেমাটি তৈরিতে উৎসাহ জুগিয়েছে। কখনো ভাবিনি সিনেমাটি এতটা জনপ্রিয়তা পাবে। তবে শ্রেণিকক্ষে বসার এই পদ্ধতি আমার আবিষ্কার নয়। অনেক আগে এ ধরনের ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু পরে সেটা আর অনুসরণ করা হয়নি।’
জে.এস.
খবরটি শেয়ার করুন