বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু দেশটির চারজন বিশিষ্ট নাগরিককে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে মনোনীত করেছেন। আজ রোববার (১৩ই জুলাই) সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। মনোনীত চারজন হলেন—বিশিষ্ট আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম, কেরালার সমাজকর্মী ও শিক্ষাবিদ শ্রী সদানন্দন মাস্টার, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এবং ইতিহাসবিদ মীনাক্ষী জৈন। হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার। খবর এনডিটিভির।
২০০৮ সালের ২৬ / ১১ মুম্বাই হামলায় আটক একমাত্র অভিযুক্ত আজমল আমির কাসাবের বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বিশিষ্ট সরকারি আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনের অধীনে তদন্ত প্রতিবেদন এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করে আদালতে কাসাবের অপরাধ প্রমাণের পথ সুগম করেছিলেন।
এ ছাড়া ১৯৯৩ মুম্বাইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ, গুলশান কুমার হত্যা, প্রমোদ মহাজন হত্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার আইনজীবী ছিলেন উজ্জ্বল। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে মুম্বাই উত্তর-মধ্য কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার ও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা দীর্ঘদিন কূটনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কাজ করার পর এবার সংসদে প্রবেশ করতে চলেছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে দার্জিলিং কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা ছিল তার।
প্রায় দুই বছর তিনি ওই এলাকায় সক্রিয়ভাবে জনসংযোগ করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত দার্জিলিং জেলা বিজেপি ও রাজ্য বিজেপির একটি বড় অংশের চাপের ফলে রাজু বিস্তাকেই ফের প্রার্থী করে বিজেপি। এর মাত্র এক বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তাকে রাজ্যসভায় মনোনীত করা হলো।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে আমলা মহলে যারা উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে থেকেই বেছে নেওয়া হয়েছে শ্রিংলাকে। জাতীয় রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, দার্জিলিং লোকসভায় তাকে প্রার্থী করতে না পারায় এবার ঘুরপথে সংসদে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি।
রাষ্ট্রপতি মনোনীত সদস্যদের নামের তালিকায় রয়েছেন কেরালার প্রবীণ সমাজকর্মী ও শিক্ষাবিদ সি. সদানন্দন মাস্টার। তিনি কেরালা বিজেপির অন্যতম মুখ। ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮০ (১) (ক)–এর অধীনে সংসদের উচ্চকক্ষে ১২ জন সদস্য মনোনীত করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। ১৯৯৪ সালে পেরিঞ্চেরি এলাকায় রাজনৈতিক হামলার শিকার হয়ে সদানন্দন দু’টি পা হারান। তা সত্ত্বেও শিক্ষা ও সমাজকল্যাণে বিশেষ অবদান রেখেছেন তিনি।
সদানন্দনের উপর হামলার ঘটনায় অভিযোগের আঙুল ওঠে ক্ষমতাসীন বামদের দিকে। ২০২১ সালে কেরালা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন তিনি। তার জীবনসংগ্রাম এবং সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষার প্রসারে অবদান—এই দুয়েরই স্বীকৃতি হিসেবে তাকে রাজ্যসভায় মনোনীত করা হলো বলে মনে করা হচ্ছে।
কেউ কেউ এটিও মনে করছেন যে, আগামী বছর কেরালা বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই সমাজকর্মীকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাম শাসিত এই দক্ষিণী রাজ্যে একটি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি।
তালিকার শেষ নামটি ইতিহাসবিদ মীনাক্ষী জৈনের। তিনি মধ্যযুগ ও ঔপনিবেশিক ভারতের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় ইতিহাস নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে কাজ করার সুবাদেই এই স্বীকৃতি পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি ছিলেন দিল্লির গার্গী কলেজে ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরির ফেলো হিসেবেও কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চের সিনিয়র ফেলো হিসেবে যুক্ত। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, রাম ও অযোধ্যা নিয়ে বিস্তর গবেষণা রয়েছে তার। ২০২০ সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন।
খবরটি শেয়ার করুন