গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ চলছেই। ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’ নেওয়ার ঘোষণার লক্ষ্যে আগামী সপ্তাহে কলম্বিয়ার বোগোটায় ২০টিরও বেশি দেশ বৈঠকে বসছে। কূটনীতিকদের বরাতে সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, ১৫-১৬ই জুলাই এই ‘জরুরি শীর্ষ সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হবে। হেগ গ্রুপের সহসভাপতি হিসেবে কলম্বিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা যৌথভাবে এর আয়োজন করছে।
ইসরায়েল ও তার শক্তিশালী মিত্রদের দ্বারা সৃষ্ট ‘দায়মুক্তির পরিবেশ’ মোকাবিলায় কূটনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপ সমন্বয় করাই এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।
হেগ গ্রুপ বর্তমানে আটটি রাষ্ট্রের একটি জোট, এটি গত ৩১শে জানুয়ারি নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে গঠিত হয়। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ইসরায়েলকে জবাবদিহি করার লক্ষ্য নিয়ে এটি গঠিত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা মন্ত্রী রোল্যান্ড লামোলা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, জানুয়ারিতে হেগ গ্রুপের গঠন ব্যতিক্রমবাদ ও আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাপক ক্ষয়রোধে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়ার একটি মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরও যোগ করেন, ‘একই চেতনা এই বোগোটা সম্মেলনে প্রাণবন্ত থাকবে, যেখানে একত্রিত রাষ্ট্রগুলো একটি স্পষ্ট বার্তা দেবে—কোনো জাতি আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং কোনো অপরাধ বিনা জবাবে যাবে না। আমরা সম্মিলিতভাবে সুনির্দিষ্ট আইনি, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ প্রবর্তনের জন্য কাজ করব, যা জরুরিভাবে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে পারে।’
হেগ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বলিভিয়া, কলম্বিয়া, কিউবা, হন্ডুরাস, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, সেনেগাল ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এই সম্মেলনে বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, বলিভিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চীন, কিউবা, জিবুতি, হন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, লেবানন, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, নিকারাগুয়া, ওমান, পর্তুগাল, স্পেন, কাতার, তুরস্ক, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনস, উরুগুয়ে, ফিলিস্তিনসহ আরও অনেক দেশ অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ফিলিস্তিনের জন্য জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ফ্রান্সেসকা আলবানিজ; ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি; স্বাস্থ্যের অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক তলালং মোফোকেনগ; নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ার লরা নাইরিনকিন্দি এবং জাতিসংঘের ভাড়াটে সৈনিক ওয়ার্কিং গ্রুপের ম্যান্ডেট হোল্ডার আন্দ্রেস ম্যাকিয়াস তোলোসা।
ইসরায়েল ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৫৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং প্রায় পুরো জনসংখ্যাকে বাস্তুচ্যুত করেছে। এই আগ্রাসন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাকে প্রায় বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে এবং ২০ লাখ মানুষকে দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
কলম্বিয়ার বহুপক্ষীয়বিষয়ক উপমন্ত্রী মাউরিসিও জারামিলো জাসির মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘ফিলিস্তিনি গণহত্যা আমাদের পুরো বহুপক্ষীয় ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলছে। বর্ণবাদ ও জাতিগত নির্মূলের মুখে কলম্বিয়া উদাসীন থাকতে পারে না। বোগোটায় একত্রিত রাষ্ট্রগুলো কেবল গণহত্যা প্রতিরোধের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবে না, বরং সম্মিলিত পদক্ষেপে যাওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের একটি সিরিজ তৈরি করবে।’
হেগ গ্রুপের সদস্যরা গত ২০ মাসে আন্তর্জাতিক আইন রক্ষা ও প্রয়োগের জন্য ইতিমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ আফ্রিকা গাজায় গণহত্যা কনভেনশনের কথিত লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি যুগান্তকারী মামলা করেছে। এই জোটের বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র পরে দক্ষিণ আফ্রিকার আইসিজে মামলায় যোগ দিয়েছে, যার মধ্যে বলিভিয়া, কলম্বিয়া ও নামিবিয়া উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া নামিবিয়া ও মালয়েশিয়া ইসরায়েলে অস্ত্র বহনকারী জাহাজগুলোকে তাদের বন্দরে ভিড়তে বাধা দিয়েছে, অন্যদিকে কলম্বিয়া ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
খবরটি শেয়ার করুন