যৌথ বাহিনীর টহল : ফাইল ছবি - সংগৃহীত
সারা দেশে একের পর এক নানা ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। অবলীলায় ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি থেকে খুন, ধর্ষণও হচ্ছে। অথচ সারা দেশে সরকার ঘোষিত ‘ডেভিল হান্ট’ কর্মসূচি চলছে। কিন্তু তার মধ্যেও থেমে নেই অপরাধীদের এসব অপরাধকর্ম। দেশজুড়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বাড়ছে। আতংকিত হয়ে পড়ছে মানুষ।
রাজধানীজুড়ে বেপরোয়া ছিনতাই রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি করেছে। স্যোশাল মিডিয়া খুললেই ভীতিকর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের ভয়ংকর দৃশ্য স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে। রাতে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের মতো ঘটনা নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। মানুষ রাতে গন্তব্যে যেতে ভয় পাচ্ছে। কোথাও কোথাও খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও হামলার শিকার হচ্ছেন। সবকিছু মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সবই নাকি ঠিক আছে।
মানুষ মনে করেছিল বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অপরাধ প্রবণতা, ডাকাতি, অপহরণ, সহিংসতা, সংঘাত, খুন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মতো অপরাধগুলো কমে আসবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো উল্টো। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অপরাধ কয়েকগুণ বেড়েছে। এখন একটি চক্র অপরাধকে আয় উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে।
৫ই আগস্টের সময়ে দেশের প্রায় সাড়ে চারশটিরও বেশি থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া সকল পুলিশ ফাঁড়িতেও একই ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারী দুর্বৃত্তরা এসব স্থান থেকে সরকারি অস্ত্র লুট করেছে। কেউ কেউ নিজের কাছে রেখেছে, আবার কেউ সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। সেগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা সন্ত্রাসী, চরমপন্থী, উগ্রপন্থী, কারামুক্ত দাগী আসামি, কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের হাতে ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ লুট হওয়া বেশির ভাগ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যদিও পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৫ই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালিয়ে ৫ হাজার ৭৫০টি অস্ত্র লুট করা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ৪ হাজার ৩৬৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হলেও এখনো ১ হাজার ৩৮৪টি অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই সব অস্ত্র এখন অপরাধীদের হাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যার কারণে দেশটাকে অপরাধীরা তাদের অপরাধের অভয়ারণ্য বানানোর চেষ্টা করছে।
দেশের এই অবস্থা থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে সরকারকে কঠোর হতে হবে। এসব অপরাধ দমাতে জরুরি ভিত্তিতে যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে সেগুলোকে তদন্ত করে অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। জননিরাপত্তা রক্ষায় লুট হওয়া অস্ত্রগুলো দ্রুত উদ্ধার করতে হবে। এগুলো অপরাধীদের হাতে থাকা আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি, রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতি। দুষ্কৃতকারীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ও বিভিন্ন অপরাধে সেসব অস্ত্র ব্যবহার করছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অপরাধীদের দমানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। দিনদিন চরম অরাজকতা বেড়েই চলছে। এই মুহূর্তে অপরাধ মোকাবিলায় পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীকেও এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের উদ্বেগ, উৎকন্ঠা দূর করে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে যৌথবাহিনীর আরো নজরদারি ও মনিটরিং বাড়াতে হবে। শক্ত হাতে অপরাধীদের দমন করতে হবে।
আই.কে.জে/