শুক্রবার, ২৪শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ই কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** নির্বাচনে নিজস্ব সিদ্ধান্তেই সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে পারবে ইসি *** নাম বদলে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ হয়ে গেল ‘জাতীয় ছাত্রশক্তি’ *** দেড় বছর পর ওয়ানডে সিরিজ জয় বাংলাদেশের *** ঢাকা সফরে আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী *** আদালত যাদের পলাতক বলবেন তারা নির্বাচন করতে পারবেন না: আসিফ নজরুল *** নির্বাচনে প্রার্থীর দেশি-বিদেশি আয়ের তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক *** সাপে কাটা রোগীদের জন্য হাসপাতালে বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু *** জিয়ার সরকারের মন্ত্রীর ছেলে আওয়ামী লীগে, যা বললেন বিশ্লেষক *** সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝটিকা মিছিলের ভিডিও, বাস্তবে তেমন কিছু না: ডিএমপি কমিশনার *** সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসিকে ৩৬ প্রস্তাব বিএনপির

নির্বাচন 'বর্জনে' মাওলানা ভাসানীকে ইয়াহিয়া খানের 'টাকা দেওয়ার' প্রসঙ্গ

জেবিন শান্তনু

🕒 প্রকাশ: ১০:৩১ অপরাহ্ন, ৩০শে আগস্ট ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান নির্বাচনটি বর্জন করতে রাজনীতিবিদ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে 'টাকা দিয়েছিলেন' বলে তখন রটেছিল। ইয়াহিয়ার টাকা পেয়ে মওলানা ভাসানী ওই নির্বাচনে অংশ নেননি বলে তার বিরোধী রাজনীতিবিদরা অভিযোগ করেছিলেন। বিষয়টিকে তথ্য-উপাত্ত ছাড়া এক আলোচনায় এনেছেন কলামিস্ট ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। তার এ বক্তব্যকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানামুখী আলোচনা চলছে।

অন্যদিকে কবি নীরদ সি চৌধুরী, যিনি কলকাতার দেশ পত্রিকায় এক লেখায় বাংলাদেশের অস্তিত্বকে কটাক্ষ করে 'তথাকথিত বাংলাদেশ' বলে সম্বোধন করেছিলেন, নেটিজেনরা তার পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন মহিউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে। তারা বলছেন, এবার মহিউদ্দিন আহমদের নতুন অভিযোগ, 'আইয়ুব খানের পছন্দের লেখক নীরদ চন্দ্র চৌধুরী। দেশের (ভারত) আলো-বাতাস তার সহ্য হয়নি।' কীসের ভিত্তিতে নীরদ সি চৌধুরীকে 'আইয়ুব খানের পছন্দের লেখক' বলেছেন, তা তিনি ব্যখ্যা করেননি। ফলে মহিউদ্দিন আহমদের বক্তব্য বিভ্রান্তির জন্ম দিচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন। বিস্তারিত না লিখে কোনো বিষয়ের আংশিক অবতারণা করলে অনেক পাঠক বিভ্রান্ত হতে পারেন বলে মনে করেন নেটিজেনরা।

দৈনিক প্রথম আলোতে গতকাল শুক্রবার (২৯শে আগস্ট) প্রকাশিত এক উপসম্পাদকীয়তে মহিউদ্দিন আহমদ এসব প্রসঙ্গের অবতারণা করেন। তার লেখাটি '১৩ নম্বর নির্বাচনের পথে দেশ' শিরোনামে পত্রিকাটির ছাপা সংস্করণে প্রকাশিত হয়। লেখাটির লিংক ফেসবুকে শেয়ার করে অনেকে মন্তব্য করেছেন, লেখাটি লম্বা করতে এতে অপ্রয়োজনীয়ভাবে মওলানা ভাসানী ও নীরদ সি চৌধুরীর প্রসঙ্গ আনা হয়েছে। কলামটির এক প্যারার সঙ্গে পরবর্তী প্যারার বক্তব্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। আজকের যুগেও সূত্র ছাড়া তথ্য প্রকাশ করার বোকামি কোনো কোনো কলামিস্ট করে থাকেন৷ পাঠকদের তারা বোকা মনে করেন।

এক পাঠক প্রথম আলোর অনলাইনে লেখাটির নিচে মন্তব্য করেন, 'অর্থহীন লেখা ছাপার জন্য সম্পাদককে তিরস্কার জানাচ্ছি।' আলোচ্য উপসম্পাদকীয়তে মহিউদ্দিন আহমদ লেখেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে 'মওলানা ভাসানী বড় নেতা। তার দলের নাম ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি। সংক্ষেপে বলে ন্যাপ। তিনি নির্বাচনের জন্য তৈরি হচ্ছেন। তিনি কৃষকের দাবি আদায়ের জন্য অনেক বছর লড়াই করেছেন। কৃষকদের নিয়ে বড় বড় সমাবেশ করেন।'

তিনি বলেন, "তার (মওলানা ভাসানী) নির্বাচনী মার্কা ধানের শীষ। নির্বাচনে তার দলের অনেক মানুষ প্রার্থী হয়েছেন। তারা স্লোগান দিচ্ছেন—আসছে এবার নতুন দিন, ধানের শীষে ভোট দিন। প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মার্কা নৌকা। তাদের মুখে স্লোগান—জয় বাংলা। হঠাৎ মওলানার কী যে হলো! তিনি ঘোষণা দিলেন, নির্বাচনে যাবেন না। পল্টন ময়দানে তিনি ঘোষণা দিলেন, ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’।"

মহিউদ্দিন আহমদ লেখেন, 'বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আরশাদ সামি অনেক দিন পর একটি বই লিখেছেন। তাতে তিনি গোমর ফাঁস করে দেন—নির্বাচন করার জন্য ইয়াহিয়া মওলানাকে টাকা দিয়েছিলেন। পরে জানা গেল, টাকার ব্যাপারটা মওলানা জানেন না। ইয়াহিয়া টাকা দিয়েছিলেন ঠিকই। শোনা যায়, সে টাকা মেরে দিয়েছিলেন মওলানার দলের সেক্রেটারি মশিউর রহমান (পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির চেয়ারম্যান, মন্ত্রী, একাত্তরে বিতর্কিত মশিউর রহমান যাদু মিয়া)। সে যা-ই হোক, বিপ্লবটা আর হয়নি। মহা ধুমধামে নির্বাচন হয়ে যায়। দেশের আকাশে তখন নতুন সূর্য শেখ মুজিবুর রহমান।' কোন তথ্যের ভিত্তিতে তা বলেছেন, এ বিষয়ে সূত্র উল্লেখ করেননি মহিউদ্দিন আহমদ।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের এডিসি ছিলেন আরশাদ সামি খান। তিনি সংগীতশিল্পী আদনান সামির বাবা। ২০০০ সালের দিকে ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আশা ভোঁসলের সহায়তায় সামি বেশ কিছু রোমান্টিক গান করেন। সেগুলোর সংগীতায়োজন করেন তিনি নিজেই। ‘কাভি তো নজর মিলাও’সহ বেশ কিছু গান দর্শক পছন্দ করেন। যা তুমুল সাফল্য এনে দেয় এ গায়ককে। মিউজিক ভিডিও এবং অ্যালবামের গানগুলো ভারতে টপ চার্টে ছিল বছরজুড়ে।

খোঁজ নিলে জানা যায়, ১৯৯২ সালের শেষ দিকে কলকাতা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক দেশ ম্যাগাজিনে নীরদ সি চৌধুরীর একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়। ওই লেখায় তিনি ‘তথাকথিত বাংলাদেশ’ শব্দ দুটি উল্লেখ করেন! দেশের অনেক সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী এর প্রতিবাদ জানান। নীরদ সি চৌধুরী বাংলাদেশ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে একাধিকবার বিতর্কের জন্ম দেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানের পক্ষে বিবৃতি দেন, পরে অবশ্য তা প্রত্যাহার করেন। '৯২ সালে বিএনপির সরকারের তথ্যমন্ত্রী নাজমুল হুদা বিষয়টি আমলে নেন। 'দেশ' পত্রিকাটি এই দেশে সাময়িক নিষিদ্ধ হয়। ওই সময় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দৈনিক আজকের কাগজে মহিউদ্দিন আহমদ একটি কলাম লিখেন নীরদ চৌধুরীকে 'সমর্থন ও সহানুভূতি' জানিয়ে।

তবে ওই লেখাটি প্রথম আলোর নিয়মিত কলামিস্ট মহিউদ্দিন আহমদের কী না, এই নিয়েও কোনো কোনো নেটিজেনের প্রশ্ন আছে। আজকের কাগজে লেখাটি যিনি লিখেছিলেন, তার নামও মহিউদ্দিন আহমদ ছিল। একই নামে আরেকজন সাবেক কূটনীতিক ও কলাম লেখক ছিলেন দেশে। সাবেক কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদ এবং গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের নামের বানান একই হওয়ায় অনেক নেটিজেন বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান। আজকের কাগজে নীরদ সি চৌধুরীকে 'সহানুভূতি ও সমর্থন' জানিয়ে কেন লিখেছিলেন, এর একটা ব্যাখ্যা অনেক পরে পাওয়া যায় প্রথম আলোতে লেখা মহিউদ্দিন আহমদের এক কলামে। লেখাটি ২০১৯ সালের ৭ই আগস্ট পত্রিকাটিতে প্রকাশিত হয়, 'দ্বিজাতি তত্ত্বের ভূত এখনো রয়ে গেছে' শিরোনামে।

এতে তিনি বলেন, "আজকের কাগজ-এ আমি একটি কলাম লিখেছিলাম নীরদ চৌধুরীকে সমর্থন ও সহানুভূতি জানিয়ে। আমার প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশ বাঙালির জাতীয় রাষ্ট্র হবে, এমন আকাঙ্ক্ষা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। এটি বাঙালি মুসলমানের রাষ্ট্র হয়েছে। সুতরাং আক্ষেপ থাকতেই পারে। মনে পড়ে, বদরুদ্দীন উমর ১৯৭২ বা ’৭৩ সালে ‘বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদের ভিত্তি’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। এটিও একটি সাপ্তাহিকে ছাপা হয়। তিনি একই প্রশ্ন তুলেছিলেন। তখনো ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি। ফলে বদরুদ্দীন উমরের কুশপুত্তলিকা দাহ করতে যাননি কেউ।"

উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির জাতীয় অধিকারের পক্ষে যে অভাবিত ও অভূতপূর্ব গণরায় ঘোষিত হয়, তা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পথ করে দিয়েছিল। এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানে প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হবে, সেটা প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু ৩০০ আসনের পাকিস্তান জাতীয় সংসদে পূর্বাঞ্চলের কোনো দল সর্ব-পাকিস্তান বিচারে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, এটা অনেকের ভাবনাতে ছিল না।

মহিউদ্দিন আহমদ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250