ছবি: সংগৃহীত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের দুই ছাত্র প্রতিনিধির পদত্যাগের দাবি গত সেপ্টেম্বরেই জানিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার দাবি, ‘ওই দুই উপদেষ্টার ব্যাপারে আমরা আগেই বলেছি, তারা উপদেষ্টা পরিষদে থাকতে পারবেন না। ড. ইউনূসের (প্রধান উপদেষ্টা) উচিত, নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে তাদের চলে যেতে বলা। তা না হলে প্রশ্ন উঠবেই।’
বেসরকারি সম্প্রচারমাধ্যম সময় টেলিভিশনকে দেওয়া গত ১২ই সেপ্টেম্বরের এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি জানান। এর আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে একই দাবি জানানো হয় কয়েকবার। গত ২১শে অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন থেকে নিরপেক্ষ ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। সে সঙ্গে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা ‘দল-ঘনিষ্ঠদের’ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেছে দলটি।
চলতি বছরের শুরুতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেছে গণ অধিকার পরিষদ। আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন সময়। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ও অন্তর্বর্তী সরকারকে সংসদ নির্বাচনের আগে আরো নিরপেক্ষ হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দুই উপদেষ্টাকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু তারা আরও সময় নিতে চেয়েছেন। এই দুই উপদেষ্টা হলেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তারা আরো সময় নিলেও বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চলতি সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর, বিশেষ করে অন্যতম প্রধান দল বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি আরো জোরালো হয়েছে।
আরও জানা গেছে, মাহফুজ আলম আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে এখন পর্যন্ত আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তিনি সরকারে থাকতে চান। আসিফ মাহমুদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করতে পারেন। অবশ্য কোনো বিষয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে চেষ্টা করেও দুই উপদেষ্টার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে আসিফ মাহমুদ গত ১৪ই আগস্ট সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তিনি পদত্যাগ করবেন। অন্যদিকে মাহফুজ আলম গত ২৮শে সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘দুই মাস ধরে আমি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি যে আমি কখন নেমে যাই। মানে আমি কখন নামব, আমি জানি না।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এমন ধারণা করতে অসুবিধা হয় না যে এই দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টা এনসিপির ঘনিষ্ঠ। তারা দলটির পরামর্শকের ভূমিকায় থাকেন। সর্বশেষ জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর করা নিয়ে সংকটের মধ্যে ১৪ই অক্টোবর রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এনসিপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে। বৈঠকে দলটির পক্ষে অন্য নেতাদের পাশাপাশি অংশ নেন একজন ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টাও।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল ধারণাই হলো নির্দলীয় আচরণ উল্লেখ করে এ প্রসঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘প্রশাসনে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা উপদেষ্টা থাকতে পারে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপ নেবে, তখন তা নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ হওয়া উচিত; তাহলে বিগত ১৬ বছর যারা ভোটে বিশ্বাস হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে আস্থা ফিরবে।’
২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ই আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রধান উপদেষ্টাসহ ২৩ জন। তাদের মধ্যে দুজন ছাত্র প্রতিনিধি।
সূত্র বলছে, ছাত্র প্রতিনিধিদের কেউ না কেউ উপদেষ্টা পরিষদে শেষ পর্যন্ত থাকুক, এটা চান ছাত্র উপদেষ্টারা। তারা মনে করছেন, না থাকলে উপদেষ্টা পরিষদে কেউ কেউ তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারেন।
এদিকে চলতি সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রতিনিধিদল উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ‘দলীয় উপদেষ্টা’ বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তাদের দাবি, উপদেষ্টা পরিষদে দলীয়রা থাকলে তা আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বাধাগ্রস্ত করবে। এ কারণে তারা নির্বাচনের আগে ‘দলীয় উপদেষ্টাদের’ অপসারণ চেয়েছেন। তবে কোনো দলের প্রতিনিধিরাই নির্দিষ্ট কোনো নাম বলেননি প্রধান উপদেষ্টার কাছে।
এই ‘দলীয় উপদেষ্টা’র তালিকায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের নাম থাকবে বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল। তিনি বলেন, ‘আসিফ মাহমুদ অযোগ্য। এত ভুল কাজ করেন, উল্টাপাল্টা কাজ করেন। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক চরম খারাপ করার জন্য আসিফ মাহমুদের ফেসবুক পোস্টের ঘটনাই যথেষ্ট।’
খবরটি শেয়ার করুন