ছবি: সংগৃহীত
২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের ৩ দিন পর নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। শুরু থেকেই দাবি করা হচ্ছিল, অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা হওয়া ব্যক্তিরা সবাই দল নিরপেক্ষ।
তবে সাম্প্রতিককালে ‘কিছু কিছু’ উপদেষ্টার দলীয় সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে তাদের সরকার থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছে রাজনৈতিক দলগুলো। প্রায় একই ধরনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
এমনকি জাতীয় পার্টির একটি অংশও দাবি করছে উপদেষ্টাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
বর্তমান সরকারে যদি দলীয় লোকজন থেকে যায়, তাহলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী। আজ বুধবার (২২শে অক্টোবর) রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এ দেশের সর্বক্ষেত্রে চরমভাবে দলীয়করণ হয়েছে। ফলে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের অনেককেই দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে।’
এদিকে জনপ্রশাসনে বদলি-পদায়নে ‘ভাগ-বাটোয়ারায়’ উপদেষ্টা পরিষদের ভেতর থেকে সহায়তা করা হচ্ছে অভিযোগ করে সেই উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চেয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এ দাবি জানিয়েছে তারা।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক শেষে বেরিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনপ্রশাসনে যেভাবে বদলি-পদায়নগুলো হচ্ছে, সেটা কিসের ভিত্তিতে হচ্ছে, নিরপেক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পদায়ন হচ্ছে কি না...। কারণ আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পাচ্ছি, শুনতে পাচ্ছি যে প্রশাসনে বিভিন্ন ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে যারা পরিচিত, তারা নিজেদের মধ্যে প্রশাসন, এসপি-ডিসি ভাগ-বাটোয়ারা করছে। নির্বাচনের জন্য তারা সেই তালিকা সরকারকে সেগুলো দিচ্ছে। উপদেষ্টা পরিষদের ভেতর থেকেও সেই দলগুলোর সঙ্গে সে ব্যাপারে সহায়তা করছে।’
ছাত্র উপদেষ্টা কোনো দলের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে নেই উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র উপদেষ্টাদের বিষয়ে যেটা বারবার বলা হয়, তারা কোনো দলের প্রতিনিধি হিসেবে কিন্তু সরকারে নেই, গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে রয়েছেন। অন্য উপদেষ্টারা যে রকম, ছাত্র উপদেষ্টারাও সে রকম। ছাত্র উপদেষ্টাদের ক্ষেত্রে যদি কোনো নির্দিষ্ট দলের প্রতিনিধি বা সংশ্লিষ্টতা হিসেবে দেখা হয়, অন্য অনেক উপদেষ্টারও বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।’
একই দিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তবে কাদের কাদের নিয়ে এই আপত্তি, তাদের নাম প্রকাশ করেনি দলটি।
আজ সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বলেছি, কিছু কিছু লোক আপনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) বিভ্রান্ত করেন। আপনার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু আপনার কিছু লোক আপনার পাশে আপনাকে বিভ্রান্ত করেন এবং তারা কোনো একটা দলের পক্ষে কাজ করেন আমরা মনে করি। তাদের ব্যাপারে আপনাকে হুঁশিয়ার থাকা দরকার।’
এদিকে নির্বাচন আয়োজনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে থাকা দলীয় উপদেষ্টা ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের বদলানোর দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘কোনো আইনে নয়; ছাত্র-জনতার, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের রক্তের মধ্য দিয়ে ড. ইউনূস রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছেন। তাই কোনো বিশেষ দল বা ব্যক্তির ওপর নয়, ড. ইউনূসকে দায়বদ্ধ থাকতে হবে দায়িত্ববোধের ওপর। আর সে দায়িত্ববোধ হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। তবে নির্বাচন আয়োজনের আগে অবশ্যই সরকারের মধ্যে থাকা দলীয় উপদেষ্টা ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের বদলাতে হবে।'
তিনি বলেন, 'কারণ, দল-নিরপেক্ষ প্রশাসন ছাড়া কোনোভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এ কথা শুধু আমার নয়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে এ কথা বলেছেন।’
আর উপদেষ্টা পরিষদে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। আজ রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ দাবি জানান তিনি।
রাশেদ খান তার পোস্টে বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনোভাবেই নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। কোনো কোনো দলকে সুবিধা দিয়ে ম্যানেজ করে চলেছে। স্বজনপ্রীতিবাজ উপদেষ্টারা কতটুকু নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারবেন, সেটি নিয়ে সংশয় ও সন্দেহ আছে।'
তার মতে, 'এমতাবস্থায় নির্বাচনের আগে সরকারি কর্মকর্তাদের রদবদলের পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যেও শুদ্ধি অভিযান জরুরি এবং বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। তা ছাড়া বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘যেসব উপদেষ্টা দুর্নীতি করেছেন, যারা আত্মীয়-স্বজনকে বিভিন্ন জায়গায় পুনর্বাসন করেছেন, সরকারকে নিজেদের ভাগ-বাটোয়ারার সম্পদ মনে করেছেন, তাদের আজ হোক, কাল হোক জনগণের কাঠগড়ায় জবাবদিহি করতেই হবে।’
তবে রাজনৈতিক দলগুলো ‘কিছু কিছু’ উপদেষ্টার দলীয় সম্পৃক্ততার কথা বললেও সুনির্দিষ্টভাবে কারো নাম বলছে না। ফলে দলগুলোর এ ধরনের অভিযোগে নাগরিক সমাজে প্রশ্ন উঠেছে ‘নির্দলীয়’ সরকারে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কারা কোন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
খবরটি শেয়ার করুন