ছবি: সংগৃহীত
পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ‘সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস’ এর নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই–৩৬ ছাত্রীনিবাস’ করা হয়েছে। লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, ধর্মীয় বিশ্বাসের নিরিখে হিন্দু (সনাতন ধর্মের অনুসারী) হওয়ার 'অপরাধে' ওই ছাত্রীনিবাস থেকে প্রখ্যাত অভিনেত্রী ও মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের নাম বাদ পড়েছে। এ দেশে হিন্দু হয়ে জন্ম নেওয়া মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর কাছে 'ক্ষমার অযোগ্য' অপরাধ বলেও তার অভিমত।
তিনি বলেন, 'কী কারণে তাকে ছেঁটে ফেলা (ছাত্রীনিবাস থেকে নাম বাদ দেওয়া) হলো, এর কারণ বোঝার চেষ্টা করছি। তিনি (সুচিত্রা সেন) তো আওয়ামী লীগ করতেন না। স্বৈরাচারের দোসরও ছিলেন না। তবে তার দুটো মস্ত অপরাধ, যা কারও কারও কাছে ক্ষমার অযোগ্য। প্রথমত, তিনি হিন্দু। দ্বিতীয়ত, তিনি ভারতীয়।'
মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, 'সুচিত্রা আমাদের তিন জেনারেশনের ক্রাশ। এ দেশের বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকের কাছে তার মতো জনপ্রিয় নায়িকা আর কেউ হয়েছেন বলে জানি না। কী কারণে তাকে ছেঁটে ফেলা হলো, এর কারণ বোঝার চেষ্টা করছি।'
তিনি বলেন, "তবে তার (সুচিত্রা সেন) দুটো মস্ত অপরাধ, যা কারও কারও কাছে ক্ষমার অযোগ্য। প্রথমত, তিনি হিন্দু। দ্বিতীয়ত, তিনি ভারতীয়। অবশ্য জন্মসূত্রে 'বাংলাদেশি’ হলেও মাফ পেতেন না। যেমন পাননি প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার কিংবা জগদীশচন্দ্র বসু। যারা নাম পাল্টেছেন, তারা হয়তো এই দুজনের নামই শোনেননি।"
তিনি বলেন, 'সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা খবর দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। পাবনায় এডওয়ার্ড কলেজ নামে একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। সেখানে সুচিত্রা সেনের নামে মেয়েদের একটা হোস্টেল ছিল। সেটির নাম বদলে নাকি জুলাই শহীদদের নামে করা হয়েছে। শহীদদের নামে নতুন নতুন স্থাপনা করা যায়। যেটি আগে হয়েছে এবং পরিচিতি পেয়েছে, সেটি হঠাৎ করে বদলে ফেলার কোনো যুক্তি দেখি না।'
দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক কলামে মহিউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন। 'নাম পাল্টানো বাঙালির একটি প্রিয় খেলা' শিরোনামে তার লেখাটি গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯শে মে) পত্রিকাটির ছাপা সংস্করণে প্রকাশিত হয়।
জানা যায়, এডওয়ার্ড কলেজে অভিনেত্রী ‘সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস’–এর নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই–৩৬ ছাত্রীনিবাস’ করা হয় গত ২০শে মে। একই সঙ্গে গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের নামে দু'টি হলের নাম পরিবর্তন করা হয়।
পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়াম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল সুইমিংপুলের নাম পরিবর্তন করার পর প্রতিবাদ ও সমালোচনার মুখে এক সপ্তাহের মাথায় আগের নাম পুনর্বহাল করা হয়। তবে এডওয়ার্ড কলেজের সুচিত্রা সেনের নামে করা ছাত্রীনিবাসের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্তে সমালোচনা হলেও সেটি এখনও বহাল আছে।
সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নরেশ মধু মুঠোফোনে সুখবর ডটকমকে বলেন, ‘সুচিত্রা সেন কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। তিনি রাজনৈতিক কোনো ফায়দা নেননি। তিনি আমাদের অবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার মানুষ। তার নাম মুছে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে ছাত্রীনিবাসের নামটি পুনর্বহালের দাবি করছি।’
পাবনা জেলা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি। এ বাড়িতে তিনি মা–বাবা ও ভাই-বোনের সঙ্গে শৈশব ও কৈশোর কাটিয়েছেন। ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ের পর তিনি স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় চলে যান। ১৯৬০ সালে বাবা করুনাময় দাশগুপ্ত বাড়িটি জেলা প্রশাসনের কাছে ভাড়া দিয়ে কলকাতায় যান।
এরপর বাড়িটি দখল হয়ে যায়। ২০০৯ সাল থেকে পাবনাবাসী বাড়িটি দখলমুক্ত করতে আন্দোলন শুরু করেন। ২০১৪ সালে বাড়িটি দখলমুক্ত হয়। বর্তমানে বাড়িটিতে পাবনা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা করা হয়েছে।
এইচ.এস/