ছবি: সংগৃহীত
পল্লিগীতির অগ্রপথিক আব্বাসউদ্দীন আহমদ ও লুৎফুন্নেসা আব্বাসের কবরে দাফন করা হচ্ছে তাদের সন্তান দেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসীকে। পরিবারের পক্ষ থেকে এটি নিশ্চিত করেছেন মুস্তাফা জামান আব্বাসীর নাতি আলভী আশরাফ।
আজ শনিবার (১০ই মে) ভোর সাড়ে পাঁচটায় বনানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। মুস্তাফা জামান আব্বাসীর ছোট মেয়ে শারমিনী আব্বাসী গণমাধ্যমে জানান, তার বাবার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
শারমিনী আব্বাসী আরও জানান, বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি দুই মেয়ে এবং বহু ভক্ত–অনুরাগী রেখে না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী উপমহাদেশের খ্যাতনামা সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাবা আব্বাসউদ্দীন ছিলেন পল্লিগীতির অগ্রপথিক। এ দেশের পল্লিসংগীতকে তিনিই প্রথম বিশ্বের দরবারে জনপ্রিয় করেছেন। চাচা আবদুল করিম ছিলেন পল্লিগীতি ও ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালির জনপ্রিয় শিল্পী। মুস্তাফা জামান আব্বাসীর বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন প্রধান বিচারপতি। বোন ফেরদৌসী রহমান ও ভাতিজি নাশিদ কামালও সংগীতাঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত। তার স্ত্রী আসমা আব্বাসী একজন প্রথিতযশা শিক্ষক ও লেখিকা, যিনি গত বছর মারা গেছেন।
দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া লোকসংগীত গবেষণা ও সংগ্রহে তার অবদান অনন্য। তিনি ৫০ বছর ধরে ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সংগ্রহে আছে কয়েক হাজার লোকগান।
এ ছাড়া তিনি ২৫টির বেশি দেশে ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, নজরুলগীতি পরিবেশন করে বাংলাদেশের সংগীতকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বদরবারে। তিনি ছিলেন ইউনেসকোর বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিটি অব মিউজিকের সভাপতি, নজরুল ও আব্বাসউদ্দীনের ইংরেজি জীবনী লেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত গবেষক।
এদিকে বিটিভির ‘ভরা নদীর বাঁকে’, ‘আমার ঠিকানা’, ‘আপন ভুবন’ প্রভৃতি অনুষ্ঠান তার উপস্থাপনায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশনে তার ‘ভরা নদীর বাঁকে’ অনুষ্ঠানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তিনি সমাজসেবায়ও ছিলেন বেশ সক্রিয়।
আরএইচ/