ছবি - সংগৃহীত
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার প্রতিদিন ঢাকা শহরসহ বিশ্বের ১২৫টি শহরের বায়ুদূষণের পরিস্থিতি জরিপ ও পর্যালোচনা করে। এটি সব শহরের বায়ুর মান সার্বক্ষণিকভাবে জরিপ করে রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্টে প্রতিটি শহরকে বায়ুর মান অনুযায়ী স্কোর দেয়া হয়। সে জরিপ অনুযায়ী, শুষ্ক মৌসুমে বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান সব সময়েই শীর্ষ ৫-এর মধ্যে থাকছে।
শীতকাল বা শুষ্ক মৌসুম এলেই ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বাড়ে মানুষের অসুস্থতা। তবে এখন শুধু ঢাকা শহরই নয়, দেশের সব শহরেই এ সময় বায়ুর মানের অবনতি ঘটে, বায়ুদূষণ বাড়ে। তবে ঢাকা শহরে বায়ুদূষণ পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়। প্রতিবছরই এ সময়ে বায়ুদূষণ পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়, কিন্তু প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা বা উদ্যোগের দেখা নেই। দূষিত বায়ু ধনী-গরীব সব মানুষকেই কম-বেশি আক্রান্ত করে, কেউ রেহাই পায় না। কাজেই অসুস্থতার কারণে হাসপাতালগুলোতে ভিড় বাড়ে।
বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের অন্যতম কারণগুলো হলো- ইটভাটা, শিল্পকারখানা, যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, বিভিন্ন নির্মাণকাজের ধুলা, সংস্কারকাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, শহরের বর্জ্য উন্মুক্ত জায়গায় পোড়ানো, নিম্নমানের কয়লা ও তরল জ্বালানি ব্যবহার, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি।
শুধু ঢাকা শহরই নয়, দেশের অন্যান্য শহরের চারদিকে, কাছে অথবা দূরে, ইটভাটা রয়েছে শত শত। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই এগুলোতে পুরোদমে কাজ শুরু হয়ে যায়। ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও ইট পোড়ানোর জন্য এগুলোতে কয়লা ছাড়াও ব্যবহার করা হয় কাঠ, গাছের ডাল, গাছের গুঁড়ি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাঠ, লাকড়ি ছাড়াও পুরনো টায়ার ও রাবার বর্জ্যও পোড়ানো হয়। ফলে ইটভাটার ধোঁয়া হয়ে যায় চরমভাবে দূষিত এবং এই দূষিত ধোঁয়া ভেসে আকাশকে ব্যাপকভাবে বিষাক্ত করে তুলছে।
ঢাকা শহরে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ কাজ চলে। ভবন, দালানকোঠা নির্মাণের শেষ নেই। এসব নির্মাণ কাজের সময় বিপুল পরিমাণ ধুলা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। অতিক্ষুদ্র এই ধুলা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হয়। দালানকোঠা নির্মাণের পাশাপাশি চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। ঢাকা শহরের ভিআইপি সড়কগুলো বাদে সব রাস্তাই ভাঙাচোরা, অবিরাম ধুলা ছড়াচ্ছে। এতে মানুষের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে, সেই সঙ্গে বাতাসে ধুলাও ছড়াচ্ছে প্রচুর। আরো আছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ ইঞ্জিনচালিত যানবাহন। সেগুলো থেকে নির্গত ধোঁয়া শহরে বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ।
একটা সময় ছিল ঢাকা শহরেই বায়ু দূষণ বেশি হতো। কিন্তু এখন সে পরিস্থিতি আর নেই। দেশের বড় বড় শহর কিংবা ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলোতেও সমানভাবে বায়ু দূষণ হচ্ছে। গবেষেণায় দেখা গেছে, গত নভেম্বরে দেশের শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষণ ছিল নারায়ণগঞ্জে, বায়ুমান সূচক ছিল ২০৫। এর পরই ১৯৫ স্কোর নিয়ে ছিল ঢাকা। গাজীপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও রংপুরের গড় সূচক ছিল যথাক্রমে ১৯১, ১৭৯, ১৬৭ ও ১৮৬। অর্থাৎ পুরো নভেম্বর মাস এসব শহরের মানুষের অস্বাস্থ্যকর বায়ুর মধ্যেই কেটেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এমন পরিস্থিতি আগামী কয়েক মাস বলবৎ থাকবে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দ্রুত এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন, যত্রতত্র নির্মাণ কাজ, যানবাহন, কলকারখানার ধোঁয়া- এসব যেমন ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান কারণ, ঠিক তেমনি দেশের অন্যান্য শহরগুলোতে এসব বর্জ্য বায়ু দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের মনিটরিংয়ের কথা। কিন্তু এসব কিছু প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে হচ্ছে। তারপরও দেখার কেউ নেই। মানুষকে বাঁচাতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
আই.কে.জে/