অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছর পূর্ণ হলেও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা, অপ্রয়োজনীয় সংস্কার কমিশন গঠন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত উপেক্ষা, এবং প্রশাসনে ছাত্রসম্পৃক্ততা—বিষয়গুলোকে ঘিরে উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। নির্বাচন কবে হবে—তা ‘আল্লাহ জানেন, আর ড. ইউনূস জানেন’—বলে মন্তব্য করেন দ্য ফিন্যান্সিয়াল পোস্ট-এর প্রধান সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম এ আজিজ। রাজনৈতিক ভারসাম্য, আইনগত কাঠামো ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে তার বক্তব্যে উঠে আসে তীব্র সমালোচনার সুর।
গতকাল মঙ্গলবার (১৯শে আগস্ট) জনপ্রিয় টকশো ‘তৃতীয় মাত্রা’-তে আলোচক হিসেবে এসব কথা বলেন এম এ আজিজ। আজ বুধবার (২০শে আগস্ট) সকাল ১১টা পর্যন্ত ইউটিউবে প্রচারিত পর্বটি প্রায় ৪২ হাজার বার দেখা হয়।
এম এ আজিজ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে, যদিও এরই মধ্যে দেশবাসী একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু এখনও সেই আলো দেখতে পাচ্ছি না। একজন মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করতে হয়, আল্লাহ জানেন কবে নির্বাচন হবে, আর ড. ইউনূস জানেন কবে নির্বাচন হবে, আর কেউ জানে না।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলমের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘উনিও ড. ইউনূসের সঙ্গে থেকে ‘যদি কিন্তু’ শিখে ফেলেছেন।’’
সংস্কার কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তুলে এম এ আজিজ বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক সংস্কার কমিশন করেছে। এতগুলো করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। উনি একটা নির্বাচন দেওয়ার জন্য যে সংস্কার দরকার ছিল, তাই করতে পারতেন। শিক্ষা বিষয়ক কোনো সংস্কার কমিশন করা হয়নি, তবে নারী সংস্কার কমিশন করা হয়েছে—এটা আওলা বাজানোর জন্যই করা হয়েছে। এটা কি নির্বাচনের কোনো ইস্যু?’
তিনি বলেন, ‘একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে যত কঠিন আইন করার দরকার, সেটা করুক। পাঁচ বছর পরে ক্ষমতা হস্তান্তর যেন স্বাভাবিকভাবে হয়, তার জন্য আইন করুক। এইটা করে তারা নির্বাচন দিয়ে চলে যাক।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ঘাটতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো সংস্থার কমিশনই রাজনৈতিক দল বা জনগণের কাছে জিজ্ঞেস করে করা হয়নি। যা মনে চেয়েছে, একটা একটা করে সংস্কার কমিশন করে ফেলেছে। মেজর জায়গাগুলোতে সংস্কার কমিশন নাই। স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত, পররাষ্ট্রনীতি—এই বিষয়ে কোনো গুরুত্ব নাই।’
ঐক্যমত কমিশন ও প্রস্তাব পত্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘যে ঐক্যমত কমিশন করা হয়েছে, তারা যে প্রস্তাব ও সংস্কারগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠিয়েছে, তার উত্তরগুলো নিয়ে সামারাইজ নোট করেছে। যেগুলো এজেন্ডা দেয়নি, তা নিয়ে ভেজাল তৈরি হয়েছে।’
আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি (পিআর) ও গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এইগুলো তো এজেন্ডাই ছিল না। আনুপাতিক নির্বাচন, গণপরিষদ নির্বাচন—এসব নিয়ে ভেজাল লেগেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই সনদ সরকার নিজেই করার দায়িত্ব নিয়েছিল। এখন তার ড্রাফট তৈরি করে সব রাজনৈতিক দলকে দিয়েছে। যখন বিএনপি বলেছে—আমাদের আপত্তি নেই। তখনই জামায়াত ও এনসিপি বলেছে—আমরা স্বাক্ষর করব না।’
জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে এম এ আজিজ বলেন, ‘জামায়াত ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিয়ে ফেলেছে, এখন তারা পিআর পদ্ধতির কথা বলছে। যদি তারা আনুপাতিক নির্বাচনের পক্ষে হতো, তাহলে নমিনেশন দিল কেন? এটা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন না হওয়া বা পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।’
ছাত্র সম্পৃক্ততা ও প্রশাসনে ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে একজন করে ছাত্র বসিয়ে দিয়েছে, প্রতিটি কমিশনেও একজন করে ছাত্র বসানো হয়েছে। আটটা প্রজন্ম শেষ করে দিয়েছেন ড. ইউনূস। একটি ছেলেকেও বলেননি—তোমরা পড়াশোনা করো, সরকার দেখো।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘ছাত্ররা এখন সরকারে গিয়ে টাকা বানাচ্ছে। শত শত কোটি টাকা লুটপাট করছে। পরবর্তী যে সরকারই আসুক, তদন্ত করলেই সব জেলে যাবে।’
ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৫২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনে ছাত্ররা নেতৃত্ব দিয়েছে, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। কিন্তু কোনো ছাত্রনেতা এত বিতর্কিত হয়নি। কোনো ছাত্রনেতা সরকার চালানোর দায়িত্ব নেয়নি। এখন যারা নিয়েছে, তারাই বিতর্কিত হয়েছে।’
ক্ষমতাসীন দলগুলোর ব্যর্থতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি-ডামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে তিনটি দল মিলে প্রার্থী দিয়েছিল, একটিরও জামানত টেকেনি। ছাত্রদের একটিরও জামানত থাকবে না। তারা যদি জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করেও লড়ে, জামায়াতের দু-তিনজন জিতলেও, এদের একজনও পারবে না।’
খবরটি শেয়ার করুন