ছবি: সংগৃহীত
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ঘোষণা করেছেন, এ বছর রাজ্যটির সবচেয়ে বড় উৎসব ‘মাইসুরু দশহরা’-এর উদ্বোধন করবেন আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারজয়ী লেখক, আইনজীবী ও সমাজকর্মী বানু মুশতাক। আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর শুরু হবে ১০ দিনব্যাপী রাজকীয় এই উৎসব। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে ঘিরে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
কর্ণাটকের হাসান জেলার বাসিন্দা বানু মুশতাক দীর্ঘদিন রাইতা সংঘ ও কন্নড় চালুভালি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রগতিশীল চিন্তার এ লেখক গত মে মাসে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার লাভ করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া তার ঘোষণায় বলেছেন, ‘বানু মুশতাক সংগ্রামী পটভূমি থেকে উঠে এসেছেন, সমাজের জন্য কাজ করেছেন। এমন একজন নারীর হাতে দশহরার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, এটা আমাদের জন্য গর্বের।’
তবে রাজ্যে বিরোধী দল বিজেপি এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। মাইসুরুর সাবেক সংসদ সদস্য প্রতাপ সিমহা মন্তব্য করেছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে তার (বানু) কৃতিত্বকে শ্রদ্ধা করি। সাহিত্যের অনুষ্ঠানে তিনি সভাপতিত্ব করলে মানায়, কিন্তু দশহরার মতো হিন্দুধর্মীয় উৎসবের উদ্বোধন তার পক্ষে উপযুক্ত নয়। তিনি কি চামুণ্ডেশ্বরী দেবীর প্রতি বিশ্বাসী?’
একই সুরে বহিষ্কৃত বিজেপি এমএলএ বাসনগৌড়া পাতিল যৎনালও বলেছেন, ‘তাকে (বানু) লেখক ও সমাজকর্মী হিসেবে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু দেবী চামুণ্ডেশ্বরীর পূজা দিয়ে দশহরার উদ্বোধন তার ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
এদিকে বিজেপি শিবিরের প্রতিক্রিয়ার জবাবে কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বরা বলেছেন, দশহরা কোনো ধর্মীয় নয়, এটি জাতীয় উৎসব। এখানে ধর্মের ভিত্তিতে কারও অংশগ্রহণ আটকানো ঠিক নয়। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, মাইসুরুর দেওয়ান মির্জা ইসমাইল ১৯২৬ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত প্রশাসনিকভাবে দশহরা পরিচালনা করেছিলেন এবং এই উৎসবকে শিল্প-বাণিজ্যের প্রদর্শনীতে রূপ দিয়েছিলেন।
ভারতীয় ম্যাগাজিন ‘দ্য উইক’ জানিয়েছে, ২০১৭ সালে কবি কে এস নিসার আহমদ প্রথম মুসলিম হিসেবে মাইসুরু দশহরার উদ্বোধন করেছিলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, দশহরা হজ কিংবা কুম্ভমেলার মতো নয়। এই উৎসব বিশ্বজুড়ে সব সম্প্রদায়ের মানুষকে আকর্ষণ করে। তাই এটিকে ধর্মীয় গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয়।
সব মিলিয়ে বানু মুশতাকের উদ্বোধনী সিদ্ধান্ত কর্ণাটকের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেও সরকার স্পষ্ট করছে—দশহরা কেবল হিন্দু উৎসব নয়, বরং এক বহুধর্মীয়, বহু সাংস্কৃতিক-জাতীয় উৎসব।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন