ফাইল ছবি - সংগৃহীত
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবন এমনিতেই অতিষ্ঠ হয়ে আছে। এমন একটা সময়ে সরকার ৪৩টি পণ্যের ভ্যাট বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। ফলে আরেক দফা দাম বাড়বে, মানুষের জীবনযাত্রা আরো কঠিন হয়ে পড়বে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইএমএফের শর্ত মেনে ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অথচ এক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংগঠন, ব্যবসায়ীসহ অংশীদারদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অধ্যাদেশ জারির জন্য উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রতি মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুমোদন দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়বে। এর মধ্যে মুঠোফোনের সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ, সরবরাহ পর্যায়ে ওষুধের ভ্যাট ২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ, এলপিজির ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। যেসব রেস্তোরায় বর্তমানে ৫ শতাংশ এবং হোটেলে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়, সেখানে ১৫ শতাংশ দিতে হবে। তৈরি পোশাকের ভ্যাট ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বিমানের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক টিকিটে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। এসব পণ্য ও সেবা ছাড়াও রয়েছে-জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, জুস, ফলমূল, পোশাক, টিস্যু পেপার, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসমূহ। স্বাভাবিকভাবেই ভ্যাটের হার বাড়ানোর ফলে এসব পণ্য ও সেবার দাম আরও বাড়বে। ফলে তা সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ওপর ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দেবে।
জানা যায়, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভ্যাটের হার বাড়াতে চায়নি। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ করতেই ভ্যাট বাড়ানোর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। উপদেষ্টা পরিষদ নতুন ভ্যাট হারের বিষয়টিতে অনুমোদনও দিয়েছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঋণের শর্ত হিসাবে আইএমএফ ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ করার শর্ত দিয়েছে। চলমান ঋণ কর্মসূচির আকার আরও ৭৫ কোটি ডলার বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। এ অর্থ দিতেও সম্মত হয়েছে আইএমএফ। তবে এজন্য রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর মতো কিছু কঠোর শর্ত দেয় সংস্থাটি। জানা গেছে, ঋণ দিতে আইএমএফ বাংলাদেশকে কর-জিডিপির অনুপাত দশমিক ২ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে, টাকার অঙ্কে যা ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ টাকা চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে যোগ হবে। সরকার বলেছে, এ কারণেই বাড়ানো হয়েছে ভ্যাট হার।
সরকার হয়তো মনে করছে, তার অর্থ দরকার, দায়দেনার চাপ বাড়ছে। তাই বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনীতি মজবুত করবে। কিন্তু এক্ষেত্রে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টিও অনুধাবন করা দরকার ছিল। নিত্যপণ্য ও সেবার দাম বেড়েই চলেছে, মানুষের আয় বাড়ছে না। বরং অনেকে চাকরি হারিয়েছে। বহু মানুষ তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে বাধ্য হচ্ছে।
ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তে দেশের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কিন্তু অর্থ উপদেষ্টার গঁৎ বাধা উত্তর, ভ্যাট বাড়লেও জিনিসপত্রের দামের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। আমাদের দুর্ভাগ্য ক্ষমতায় গেলে সবাই-ই জনগণের কথা ভুলে যায়।
ভ্যাট হার বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতিই যে কেবল বাড়বে তা নয়, ভ্যাটের বিধিবিধান মানতে না পেরে অনেক ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে বেকার হয়ে পড়বে অনেক কর্মী, বেকারত্বও বাড়বে। দেশের অর্থনীতিতে পড়বে বিরূপ প্রভাব। দাতা গোষ্ঠী আইএমএফের চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। জনগণকে একটু স্বস্তিতে রাখতে হলে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।
আই. কে. জে/