ছবি: সংগৃহীত
বিয়ে শুধু দু'টি মানুষের মিলন নয়, দু'টি পরিবারের বন্ধনও বটে। সুস্থ ও সুন্দর দাম্পত্য জীবনের জন্য শারীরিক সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের আগে কিছু নির্দিষ্ট রোগের পরীক্ষা করানো শুধু নবদম্পতির সুস্থতার জন্যই নয়, তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্বাস্থ্যের জন্যও অপরিহার্য।
কিছু রোগ আছে, যেগুলো বাইরে থেকে বোঝা যায় না। কিন্তু বিয়ের পর খুব সহজে স্বামী থেকে স্ত্রী, আবার স্ত্রী থেকে স্বামী বা তারা যখন সন্তান নেন; তখন তাদের মাঝে ছড়াতে পারে। এ ক্ষেত্রে একটু সচেতন হয়ে আগেই কিছু পরীক্ষা করালে রোগগুলো ধরা ও চিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহায় হেলথের সহপ্রতিষ্ঠাতা ডা. তাসনিম জারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার নিজস্ব চ্যানেলগুলোতে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর জন্য ৬টি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার কথা তুলে ধরেছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই পরীক্ষাগুলো সম্পর্কে-
১. থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia)
থ্যালাসেমিয়া বংশগত রক্তের রোগ। এটি বাবা-মা থেকে সন্তানের মধ্যে ছড়াতে পারে। স্বামী ও স্ত্রী দু'জনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে তাদের সন্তানের গুরুতর থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ রোগ প্রতিরোধে বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং (Hemoglobin Electrophoresis) অত্যন্ত জরুরি।
থ্যালাসেমিয়া রোগ সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। সাধারণ একটা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই জেনে নেওয়া যায় এ রোগের বিষয়ে। বিয়ের আগে যদি পরীক্ষাটি না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আপনাদের সন্তানেরও থ্যালাসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।
পরীক্ষাটি করালে ফলাফল কেমন আসতে পারে? দু'জনের একজনেরও রক্তে কোনো সমস্যা নেই, এমন ফলাফল এলে বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই। দুইজনের মধ্যে একজনের থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়লে এ ক্ষেত্রেও বাচ্চার রোগটি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই।
সন্তানের থ্যালাসেমিয়া মাইনর হওয়ার ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ বাচ্চা অসুস্থ হবে না, কিন্তু সে থ্যালাসেমিয়ার বাহক হতে পারে। দুইজনেরই থ্যালাসেমিয়া মাইনর ধরা পড়লে- এ ক্ষেত্রে সন্তান থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মানোর আশঙ্কা থাকে।
২. হেপাটাইটিস-বি পরীক্ষা (Hepatitis B)
হেপাটাইটিস-বি একটি ভাইরাস, যা আমাদের লিভারে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। শুধু তাই নয়, এতে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু যাদের শরীরে ভাইরাসটা বসবাস করছে, তারা অনেকে জানেন না যে, এ ভাইরাসে আক্রান্ত। ফলে নিজের অজান্তে তারা অন্যদের মধ্যেও এ ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন। এছাড়া সুরক্ষা (কনডম) ছাড়া সহবাস করলে একজন থেকে আরেকজনের শরীরে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই বিয়ের আগে দু'জনে এ পরীক্ষাটি করাতে পারেন।
৩. হেপাটাইটিস সি (Hepatitis C)
হেপাটাইটিস-বি এর মতো হেপাটাইটিস সি-ও এক ধরনের ভাইরাস। এটা ছড়ায় সাধারণত রক্তের মাধ্যমে। যেমন- একই সুই বা ইনজেকশন ব্যবহার করলে, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত লেগে থাকতে পারে, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ঠিকমতো জীবাণুমুক্ত না করলে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। এ ছাড়া সুরক্ষা ছাড়া সহবাস করলে বা মায়ের দুধ পানেও সন্তান আক্রান্ত হতে পারে এ রোগে।
লিভার অনেকটা অকেজো হওয়ার আগ পর্যন্ত এ রোগের লক্ষণ সাধারণত দেখা যায় না। তাই বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া- সি পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন।
৪. এইচআইভি পরীক্ষা
এইচআইভির ব্যাপারে কমবেশি প্রায় সবাই জানেন। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে সহবাসের মাধ্যমে সাধারণত এটা ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির সুই বা ইনজেকশন ব্যবহার করলে, জন্মের সময়ে মায়ের কাছ থেকে বা মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে শিশু এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
অনেকের ক্ষেত্রে বহু বছর ধরে এ ভাইরাসের কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে। আর সেই সময় একজন থেকে আরেকজনে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। স্ত্রী থেকে স্বামী, স্বামী থেকে স্ত্রী, মা থেকে সন্তানের মধ্যে এ রোগ ছড়াতে পারে। তাই বিয়ের আগে পরীক্ষাগুলো করে ফেলাই শ্রেয়।
৫. যৌনবাহিত রোগ পরীক্ষা
অনেকে যৌনবাহিত রোগে ভোগেন কিন্তু তা তারা হয়তো জানেন না। শুধু টেস্ট করার পরই ধরা পড়ে। অনেকের যেহেতু কোনো লক্ষণ থাকে না, ফলে টেস্ট করাও হয় না, রোগও ধরা পরে না। পরে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা যেমন- সন্তানধারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। অথচ সময়মত অল্প কয়েকদিনের অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স নিলেই রোগটা সেরে যায়।
৬. ব্লাড গ্রুপ
ব্লাড গ্রুপ এবং আরএইচ ফ্যাক্টর পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে Rh নেগেটিভ মায়ের ক্ষেত্রে যদি বাবা Rh পজিটিভ হন, তবে গর্ভাবস্থায় সমস্যা হতে পারে। এ সমস্যাকে Rh ইনকম্প্যাটিবিলিটি (Rh Incompatibility) বলে, যা শিশুর জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এ ক্ষেত্রে আগাম প্রস্তুতি ও সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন