নৌকার গলুইয়ে দাঁড়িয়ে নাচছে ডিকা। ছবি: সংগৃহীত
সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন তৈরি করেছে ১১ বছর বয়সী ইন্দোনেশিয়ান এক শিশু। ইনস্টাগ্রাম, টিকটকসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে চলন্ত নৌকার গলুইয়ের ওপর দাঁড়িয়ে তার নাচের ভিডিও। রায়ান আর্কান ডিকা ওরফে ডিকার বিশেষ ভঙ্গিমার ওই নাচের ভিডিও এখন অনলাইনে নতুন ট্রেন্ড ‘অরা ফার্মিং’। খবর আরব নিউজের।
ভিডিওতে দেখা যায়, ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচে অংশ নিচ্ছে ডিকা। এটি রিয়াউ প্রদেশের শত বছরের পুরোনো এক উৎসব, যেখানে প্রতিটি নৌকায় একজন নৃত্যশিল্পী থাকেন, যাকে বলা হয় ‘তুকাং তারি’। এ ব্যক্তি মূলত নাচ করে নৌকার মাঝিদের উজ্জীবিত করেন। ডিকা মাত্র ৯ বছর বয়স থেকে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে।
উল্লেখ্য, ঐতিহ্যবাহী এ নৌকাবাইচকে স্থানীয়ভাবে পাচু জালুর নামে পরিচিত। ‘পাচু’ শব্দের অর্থ দৌড় এবং ‘জালুর’ অর্থ দীর্ঘ ও সরু কাঠের নৌকা। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রতিটি নৌকা সাধারণত ২০ থেকে ৪০ মিটার লম্বা হয়ে থাকে এবং একেকটি নৌকায় অন্তত ৫০ জন পর্যন্ত মাঝি থাকেন।
এ নৌকাবাইচের বিশেষত্ব হলো তুকাং তারি বা নৃত্যশিল্পী। তুকাং তারির এ নাচকে স্থানীয়ভাবে সম্মানের চোখে দেখা হয় এবং এটি পুরো প্রতিযোগিতায় একটি আবেগঘন অনুষঙ্গ। পাচু জালুর শুধু একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, এটি রিয়াউয়ের মানুষের পরিচয়, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। এটি প্রতিবছর আগস্টে একটি উৎসবের অংশ হিসেবে আয়োজিত হয় এবং হাজার হাজার মানুষ এতে অংশ নেন বা উপভোগ করতে আসেন। স্থানীয় জনগণ ছাড়াও এটি বিদেশি পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভাইরাল ১১ বছরের ডিকা, যে তুকাং তারি হিসেবে নাচ করে দুনিয়াজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে।
গত জানুয়ারি মাসে ‘লেনসা রামস’ নামের এক ব্যবহারকারী প্রথম ভিডিওটি টিকটকে পোস্ট করেছিলেন। তবে সেটি সম্প্রতি হঠাৎ করে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কারণ, ডিকার নাচ সহজ ও সুন্দর। অনেকে সেটি অনুকরণ করে নিজেদের মতো করে উপস্থাপন করেছেন। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ছড়িয়ে পড়েছে।
এর মানে হলো, কেউ বারবার একই রকম কৌশল বা স্টাইল ব্যবহার করে নিজের উপস্থিতিকে আকর্ষণীয়, স্টাইলিশ বা প্রভাবশালী করে তোলে, যেন তার চারপাশে একধরনের ‘অরা’ বা ক্যারিশমা তৈরি হয়। ডিকার শান্ত ভঙ্গি, বারবার হাত ও পা নাড়িয়ে সামনের দিকে দোলানো, এবং সেই মুহূর্তে তার আত্মবিশ্বাস—এ ট্রেন্ডের এক নিখুঁত উদাহরণ।
এ জনপ্রিয়তা এখন শুধুই ইন্দোনেশিয়ায় সীমাবদ্ধ নেই। আমেরিকার অনেক তারকাও ডিকার নাচ অনুকরণ করেছেন। এনএফএল তারকা ট্রাভিস কেলসি, ডিকার সঙ্গে নিজের নাচের তুলনা করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। সেটি ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ দেখেছেন। এমনকি আমেরিকান ফুটবল দলের খেলোয়াড় দিয়েগো লুনা সম্প্রতি একটি ম্যাচে গোল করার পর ডিকার নাচ অনুকরণ করে উদ্যাপন করেন। জনপ্রিয় বেসবল দলের একটি অংশীদার দল ‘পার্টি অ্যানিম্যালস’ও মাঠে নাচটি পরিবেশন করেছে। সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে সেটিও।
ডিকার এমন বৈশ্বিক পরিচিতি এবং স্থানীয় ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য সম্প্রতি রিয়াউ প্রদেশের সরকার তাকে ‘পর্যটন দূত’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। গভর্নর আবদুল ওয়াহিদ আনুষ্ঠানিকভাবে ডিকাকে ২০ মিলিয়ন রুপিয়াহ (প্রায় ১২০০ আমেরিকান ডলার) শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছেন। এ অনুষ্ঠানে গভর্নর ও সরকারি কর্মকর্তাদের সামনে নিজের জনপ্রিয় নাচ পরিবেশন করে ডিকা। পুরস্কার পেয়ে ডিকা বলে, ‘আমি খুব খুশি। কখনো ভাবিনি যে, আমি গভর্নরের সঙ্গে দেখা করতে পারব।’
আগামী মাসেই আবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘পাচু জালুর’ প্রতিযোগিতা। এবারও অংশ নেবে ডিকা।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন