আলতাফ শাহনেওয়াজ। ছবি: সংগৃহীত
দেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা স্ট্রিম’-এর এক নারী কর্মী আত্মহত্যা করেছেন এবং তার মৃত্যুর আগেই উত্থাপিত যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ঘিরে প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদকের কাছে একটি খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন পাঁচজন বিশিষ্ট নারী।
তারা চিঠিতে ঘটনার সুনির্দিষ্ট তদন্ত ও প্রাতিষ্ঠানিক দায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না, তা জানতে চেয়েছেন। তারা এই মৃত্যুর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছেন।
চিঠিটি ঢাকা স্ট্রিমের সম্পাদক গোলাম ইফতেখার মাহমুদের বরাবর পাঠানো হয় এবং এতে স্বাক্ষর করেন অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, গবেষক ও অধিকারকর্মী সায়দিয়া গুলরুখ, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা। তারা এই চিঠিটি আজ সোমবার (২০শে অক্টোবর) সোশাল মিডিয়ায়ও প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা স্ট্রিমের গ্রাফিক্স ডিজাইনার স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের মরদেহ গত শনিবার (১৮ই অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে উদ্ধার করা হয় বলে জানা গেছে। রাজধানীর তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান সাংবাদিকদের জানান, ২৮ বছর বয়সী এই তরুণী আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে স্বর্ণময়ীর মৃত্যুর জন্য দায়ী করছেন তার কর্মস্থলকে। ঢাকা স্ট্রিমের বাংলা বিভাগের প্রধান আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছিলেন স্বর্ণময়ীসহ একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আরও ২৬ জন নারী সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী।
চিঠিতে বলা হয়, 'আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানতে পারি, আপনার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত গ্রাফিক্স ডিজাইনার স্বর্ণময়ী বিশ্বাস আত্মহত্যা করেছেন। একই সঙ্গে জানতে পারি, তিনি ও আরও কয়েকজন নারী সহকর্মী বাংলা বিভাগের প্রধান আলতাফ শাহনেওয়াজের (নির্লিপ্ত নয়ন) বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছিলেন।'
চিঠিতে ২০১০ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনার উল্লেখ করে বলা হয়, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব স্পষ্টভাবে নির্ধারিত। তারা প্রশ্ন তোলেন—অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে তাতে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নারী-পুরুষ অনুপাত রাখা হয়েছিল কি না, বহিঃস্থ সদস্য রাখা হয়েছিল কি না এবং তদন্ত কমিটির কার্যপরিধি (Terms of Reference) কী ছিল।
কেন অভিযোগ যৌন হয়রানি সম্পর্কিত হলেও তদন্তে শুধু ‘অসৌজন্যমূলক আচরণ’ উল্লেখ করে পদক্ষেপ নেওয়া হলো এমন প্রশ্নও নারী নেত্রীদের। তারা বলেন, অভিযুক্তকে সাময়িক বরখাস্ত না করে শুধু বিভাগীয় প্রধান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াকে আদৌ কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা যায় কি না।
চিঠিতে আরও বলা হয়— 'আপনারা দাবি করেছেন, অভিযোগকারীরা গৃহীত পদক্ষেপে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আমরা জানতে চাই, এ দাবির পক্ষে আপনাদের কাছে কোনো লিখিত প্রমাণ আছে কিনা।'
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা উল্লেখ করেন, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ভিত্তিতে তাদের কাছে যে তথ্য এসেছে, তা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত বিবৃতির বক্তব্যের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
ফলে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ মোকাবেলায় ঢাকা স্ট্রিমের প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ বলে তারা মত প্রকাশ করেন। ঢাকা স্ট্রিম বা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এই চিঠির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন