রবিবার, ১৫ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** বিশ্ব বাবা দিবস আজ *** ইরানের প্রেসিডেন্টকে পরমাণু আলোচনায় বসার আহ্বান মাখোঁর *** 'জরুরি সহায়তা' হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে আরও যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে ব্রিটেন *** ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপে উঠে এল যেসব বিষয় *** হাতিরঝিলের পানি পরিশোধনের কাজ জোরদার হচ্ছে *** ছুটি শেষে রোববার থেকে চালু ব্যাংক ও পুঁজিবাজার *** আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩শে জুন, অনুমোদন হতে পারে দুই কিস্তির অর্থ *** ইরানের ভেতরে ঘাঁটি গেড়ে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা নিষ্ক্রিয় করে মোসাদ *** ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন জামায়াতের আমিরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ: সালাহউদ্দিন *** টানা ১০ দিন ছুটি শেষে অফিস খুলছে কাল

গণঅভ্যুত্থানে নিহতের সংখ্যা কমাতে চান সাংবাদিক বার্গম্যান!

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৬:৪৪ অপরাহ্ন, ১৫ই মে ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত প্রতিবেদনে জাতিসংঘ উল্লেখ করে, ওই সময়ে ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তবে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের দাবি, ‘এ সময়ে ১ হাজার মানুষ নিহত হন।’ তার এমন দাবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। কী উদ্দেশ্যে বার্গম্যান অভ্যুত্থানে নিহতের সংখ্যা কমাতে চান, এ প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

ডেভিড বার্গম্যান দেশ-বিদেশে বিখ্যাত সাংবাদিক। তিনি বহু বছর ধরে আইসিটির বিচার কার্যক্রম ও বাংলাদেশ নিয়ে লিখছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে তিনি লেখালেখিকে কেন্দ্র করে নানাভাবে সরকারি নির্যাতনের শিকার হন। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার দায়ে ওই সময়ে বাংলাদেশে বসবাসরত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

এমনকি আওয়ামী লীগের আমলে জাতীয় সংসদে সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে বার্গম্যানের ধর্মবিশ্বাস নিয়েও ‘কটাক্ষ’ করা হয়। ধর্মবিশ্বাসের নিরিখে তিনি ইহুদি। আওয়ামী লীগের সরকারের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশের, বিশেষ করে প্রভাবশালী বিদেশি পত্রিকায় লেখালেখিতে সরব ছিলেন বার্গম্যান। সেই তিনিই কেন এখন অভ্যুত্থানে নিহতের সংখ্যা কমাতে চান, এ প্রশ্ন নেটিজেনদের। 

তাদের মধ্যে অনেকে বলছেন, গত বছর অভ্যুত্থান চলাকালে কতজন নিহত ও আহত হয়েছেন, এ বিষয়ে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে যে সংখ্যাটা উঠে এসেছে, একে একধরনের ‘সর্বসম্মত হিসাব’ বলা যায়। এ সংখ্যাকে কমানো, বা নিহতের সংখ্যা কম দেখাতে চাওয়া কোনো সাংবাদিকের পক্ষে অনুচিত কাজ। 

জানা যায়, দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটের ইংরেজি সংস্করণের জন্য একটি লেখা দেন ডেভিড বার্গম্যান। লেখাটি পত্রিকাটির ইংরেজি সংস্করণের ওয়েবসাইটে আজ বৃহস্পতিবার (১৫ই মে) আপলোড হয়। পাশাপাশি বাংলায় অনুবাদ করে পত্রিকাটির বাংলা সংস্করণের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। এতে তিনি লেখেন, ‘১৬ জুলাই (২০২৪ সাল) থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে দেয়। ছাত্রদের নেতৃত্বে সংগঠিত প্রতিবাদকে সরকার নির্মমভাবে দমন করতে থাকে। আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, এ সময়ে প্রায় ১ হাজার মানুষ নিহত হন।’

বার্গম্যান এ সংখ্যা কোথায় পেয়েছেন, বা কোন সংস্থার জরিপ থেকে নিয়েছেন, এর উৎস লেখায় উল্লেখ করেননি। কেউ কেউ ধারণা করছেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বদলে এ ক্ষেত্রে হয়তো তিনি ‘হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি’র (এইচআরএসএস) প্রতিবেদন থেকে নিহতের সংখ্যা উল্লেখ করেছেন। এইচআরএসএস গত বছরের ২৪শে অক্টোবরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলে, ‘সারাদেশে ৯৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৮৬৮ জনের নাম-পরিচয় জানা গেলেও ১১৮ জন অজ্ঞাতপরিচয়।’

তবে এইচআরএসএস একইসঙ্গে সেদিন এটাও জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভুক্তভোগী পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর সূত্র থেকে এসব মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। গণমাধ্যম, হাসপাতাল ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ‘যেসব বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যাচ্ছে’, সেটির ওপর ভিত্তি করে সংগঠনটির অনুমান নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১২০০ হবে।

প্রথম আলোতে ডেভিড বার্গম্যানের লেখাটির শিরোনাম ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা: ঝুঁকির দিকগুলো কী’। নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ নিষেধাজ্ঞার ‘ঝুঁকির দিকগুলো’ নিয়ে মূলত তার লেখাটি। 

তিনি লেখেন, ‘গত শনিবার (১০ই মে) সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে ছাত্রনেতা হাসনাত আবদুল্লাহ সরকারের উদ্দেশে বলেন, যদি আগামী এক ঘণ্টার মধ্যেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণা না আসে, তাহলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়া হবে। এর আগেই শাহবাগ এলাকাটি বিক্ষোভকারীরা দখল করে রেখেছিল। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়া হবে না এবং আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

তার মতে, ‘এ বক্তব্যের ঠিক এক ঘণ্টা পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে বসে এবং নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেয়। অল্প সময়ের মধ্যেই আইন উপদেষ্টা সংবাদমাধ্যমে ঘোষণা দেন যে, আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলো। অথচ এর আগের দিনই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকারের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যাটি ছিল দুর্বল এবং তা তড়িঘড়ি করে তৈরি করা বলে মনে হয়েছে।’

এইচ.এস/

ডেভিড বার্গম্যান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন