প্রতীকী ছবি
এবার জালিয়াতির এক নতুন উপায় খুঁজে বের করেছেন সাইবার প্রতারকরা। সেই জালিয়াতির আঁতুড়ঘর ভারতের রাজ্য বিহারের নওয়াদা।
নতুন সেই জালিয়াতির এক নামও রয়েছে, ‘প্রেগন্যান্সি জব স্ক্যাম'। কিন্তু ‘প্রেগন্যান্সি মানে তো অন্তঃসত্ত্বা হওয়া। জৈবিক সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাইবার জালিয়াতির দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনও সম্পর্ক নেই! তা হলে কেন এ রকম নাম?
আনন্দ বাজার পত্রিকা নতুন এই জালিয়াতির খবব প্রকাশ করে। খবরে বলা হয়, আসলে ডিজিটাল অ্যারেস্ট এবং ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির যুগে প্রতারণার জন্য কল্পনাতীত এক ফন্দি এঁটেছে নওয়াদার একটি দুষ্কৃতীদল। নিঃসন্তানদের অন্তঃসত্ত্বা করে দেওয়ার পরিবর্তে ১০-১৫ লাখ টাকার টোপ দিচ্ছে তারা।
যারা সেই টোপ গিলছেন, তাদের অনেকেই নিজেদের সঞ্চয়টুকু খোয়াচ্ছেন। আর এ সব কিছুর সূত্রপাত একটি ভুয়ো বিজ্ঞাপন দিয়ে। সেই বিজ্ঞাপনে বড় বড় করে লেখা, ‘অল ইন্ডিয়া প্রেগন্যান্ট জব সার্ভিস,। বাংলায় যার অর্থ— অন্তঃসত্ত্বা করার চাকরি।
বিজ্ঞাপনের এক পাশে এক মহিলার ছবিও থাকে। নীচে থাকে ফোন নম্বর। টাকা রোজগারের লোভ দেখিয়ে সেই নম্বরে ফোন করতে বলা হয়।বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফোন যায় অর্থাভাবে ভুগছেন বা চাকরি খুঁজছেন এমন যুবকদের কাছ থেকে। ফোন করার পরে টোপ দেওয়া হয় ফোনের ওপার থেকে।
জানানো হয়, ওই যুবক যদি কোনও নিঃসন্তানকে অন্তঃসত্ত্বা করতে পারেন, তা হলেই টাকা মিলবে। পাওয়া যেতে পারে ১৫ লক্ষ পর্যন্ত। তবে তার আগে কয়েক হাজার টাকা দিয়ে নাম নথিভুক্ত করিয়ে নিতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রতারকদের পাতা সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন যুবকরা। যদি কেউ সন্দেহ প্রকাশ করে প্রশ্ন তোলেনও, তখন তাকে জন্মহার এবং নিঃসন্তান মহিলাদের দুঃখ নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে এমন গল্প বলা হচ্ছে যে, তারা সহজেই বিশ্বাস করে নিচ্ছেন সব কিছু।
যুবকদের এ বলেও লোভ দেখানো হচ্ছে যে, যদি কেউ কোনও মহিলাকে অন্তঃসত্ত্বা করতে না-ও পারেন, তা হলেও একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তাকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এ সব শুনেই টপাটপ টোপ গিলছেন একাংশ। এর পর পাঠিয়ে দেওয়া হয় একটি ভুয়ো হোটেলের ঠিকানা। সেখানে কামরা ভাড়া করে নিঃসন্তান কোনও মহিলার জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়।
এদের মধ্যে অনেকেই নিঃসন্তান মহিলার জন্য হোটেলে অপেক্ষা করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছেন যে তারা প্রতারিত। আবার কেউ নিজের স্ত্রীকে অন্তঃসত্ত্বা করে যখন সেই নম্বরে কয়েক মাস ফোন করছেন, তখন দেখছেন সেই নম্বর বন্ধ। অনেক চেষ্টা করেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই চক্র যারা চালাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৬-২০ বছরের মধ্যে। নওয়াদার বিভিন্ন জায়গায় চালা বেঁধে বা মাঠে-ঘাটে বসে তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছেন। ইতিমধ্যেই এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নওয়াদায় প্রিন্স রাজ, ভোলা কুমার এবং রাহুল কুমার নামে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ছয়টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ।
কেসি/ আই.কে.জে