ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ত্রুটি নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে, সমস্যাগুলো সমাধানে মাঝেমধ্যে নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সুফল এখনো পাওয়া যায়নি। রাজধানীর সড়কের প্রধান সমস্যা অসহনীয় যানজট। সড়কগুলোয় চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি লেগেই থাকে।
অচলাবস্থা শুধু প্রধান সড়কগুলোয় নয়, তা বিস্তৃত অলিগলি পর্যন্ত। সড়কে অবৈধ যানবাহনের দাপট বেড়েই চলেছে। যানজটের কারণে রাজধানীবাসীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ দুর্ভোগে প্রতিদিন মানুষের প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। রাজধানীতে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য অতীতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়েছে। দুঃখজনক হলো, এতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পুলিশের হাতের ইশারায়ই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে যানবাহন।
২০০৭ সালেও ঢাকায় গাড়ির গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। এখন তা কমে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। ঢাকায় যানজটের কারণে দৈনিক প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার অর্থমূল্য দৈনিক প্রায় ১৩৯ কোটি এবং বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। যানজটের এই সমস্যার জন্য বেশ কিছু কারণ দায়ী।
এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- শৃঙ্খলা না মেনে গাড়ি চালানো, ব্যস্ত সড়কে মেগা প্রকল্পগুলোর কালক্ষেপণ, ব্যক্তিগত গাড়ি নির্ভর পরিকল্পনা, দুর্বল ট্রাফিক সিগন্যাল ও মনিটরিং ব্যবস্থা, যানবাহন নিবন্ধনে অব্যবস্থাপনা, সার্বিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞানভিত্তিক ও আধুনিক পদ্ধতির অভাব এবং অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি। যানজটের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী দুর্বল ও অকার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থা।
ঢাকা শহরের ট্রাফিক সিস্টেম অকার্যকর হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- হাত-লাঠি নির্ভর সিগন্যাল সিস্টেম, ট্রাফিক বাতিগুলোর অকার্যকর থাকা, আইনের প্রতি সম্মান ও বাধ্যবাধকতা না থাকা এবং চালকদের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে নিয়মিত প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক না করা।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য বিগত বছরগুলোতে রাজধানীতে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা বাস্তবে পূর্ণতা পায়নি। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে সরকারের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সরাসরি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু সবাই ট্রাফিক বিভাগের ওপরই দায় চাপিয়ে পরিত্রাণ পেতে চায়। বর্তমানে পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, তাতে রাজধানীবাসীর নাভিশ্বাস উঠেছে।
ধারণা করা হয়েছিল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ও মেট্রোরেল চালুর পর সড়কে এর ইতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান হবে। কিছুটা হয়েছে বটে, কিন্তু যেসব সড়কে মেট্রোরেল নেই, সেসব সড়কের পরিস্থিতি বেশি নাজুক। নতুন করে যান্ত্রিক রিকশা রাজধানীর সড়কে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে।
শুধু যান্ত্রিক রিকশাই নয়, অন্যান্য যানবাহন চলাচলেও ট্রাফিক আইন ভঙ্গের প্রতিযোগিতা চলছে। ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অনেকটা অসহায় হয়ে পড়ছেন। শুধু সিগন্যাল ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন করলেই এ থেকে পরিত্রাণ মিলবে না। সবার আগে ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি সর্বত্র শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। চলমান সনাতনী ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে। আইন অমান্যের অপপ্রবণতা বন্ধ করতে হবে। ভিআইপি ও সাধারণ- সবাইকে আইনের মধ্যে চলাচলে বাধ্য করতে হবে।
এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল বিভাগকে অনমনীয় অবস্থান নিতে হবে। এককথায়, কঠোরভাবে সড়ক আইনের প্রয়োগ করতে হবে। ট্রাফিক আইন যত কঠোরই হোক না কেন, আইন অমান্যকারীদের যদি শাস্তির আওতায় আনা না যায়, তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা দুরূহ হবে।
এইচ.এস/