ছবি: সংগৃহীত
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের অন্তর্বর্তী সরকারে অনেকে এমনও আছেন, যাদের সম্পর্কে দেশের মানুষ আগে থেকে তেমন কিছু জানেন না। অনেককে বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে এবং কোনো ধরনের জনপর্যালোচনা ছাড়া জনগণের ওপর তাদের চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নিয়োগ হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ঘাটতি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠছে বলে অভিযোগ বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনীতিবিদদের।
তাদের দাবি, সরকারের নীতিনির্ধারকসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদের কোনো কোনো কর্তাব্যক্তির কথাবার্তা ও কাজকর্ম অনুসরণ করলে ‘বিদেশি কর্পোরেট লবিস্টদের’ ছায়া দেখতে পাওয়া যায়। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির অভিযোগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদেশে নাগরিকত্ব থাকা ড. খলিলুর রহমানকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়া ও চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়া নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে সরকার। এসব সিদ্ধান্তের পেছনে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হচ্ছেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারপ্রধান বলেই ভোট ছাড়া তার হাতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শাসন ক্ষমতা অর্পণে দেশের মানুষ সমর্থন জানিয়েছে উল্লেখ করে প্রখ্যাত সাংবাদিক ও ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘তার মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যরা? তাদের জনসমর্থন কতটা আছে? এটা অনেকেই জানেন যে, ড. ইউনূস যখন শপথ নেন, তখন তিনি তার মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যকেই ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন না।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান মন্ত্রিসভার (উপদেষ্টা পরিষদ) অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরি ও পেশাগত সম্মান অর্জন করেছেন। আবারও অনেকে এমনও আছেন, যাদের সম্পর্কে মানুষ ততটা জানেন না। অনেককে আবার বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে এবং কোনো ধরনের জনপর্যালোচনা ছাড়াই আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ গত ১৬ই মে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক কলামে মাহফুজ আনাম এসব কথা বলেন।
তিনি লেখেন, ‘এখন জনমনে প্রশ্ন উঠছে পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ঘাটতি নিয়ে। প্রধান উপদেষ্টা নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত নেন কখন তার বাড়তি সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের পর সহযোগী নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি কী? কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যায় এবং হঠাৎ করে জানানো হয় যে অমুক জায়গার অমুক ব্যক্তিকে সরকারের অমুক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতার মধ্যে থাকা অনেকে তাদের পছন্দের মানুষকে যুক্ত করেছেন, এমন উদাহরণও রয়েছে।’
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে তার সুযোগ্য প্রেস সচিব ও বিভিন্ন পদের কোনো কোনো কর্তাব্যক্তির ভাবসাব, কথাবার্তা ও কাজকর্ম খেয়াল করলে বিদেশি কর্পোরেট লবিস্টদের ছায়া পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম বন্দর, করিডোর, সমরাস্ত্র কারখানা, অস্বচ্ছ তড়িঘড়ি এলএনজি আমদানি চুক্তি, স্টারলিংক চুক্তি ইত্যাদি নিয়ে তাদের দৌড়ঝাপ, জবরদস্তি, গোপন গোপন ভাব, মিথ্যা বিজ্ঞাপনী গল্প এটাই নির্দেশ করে।’
‘সংস্কার কমিশন গঠন-নানা মিটিং সবই লোকভুলানো, সময় কাটানো খেল ‘ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন, রিপোর্ট, নানা মিটিং, প্রতিশ্রুতি সবই হচ্ছে লোকভুলানো, সময়কাটানো খেলা। না হলে অনেক প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ এর মধ্যে অগ্রসর হতে পারত। তাদের (সরকার) মনোযোগ জনপন্থী সংস্কারে নয়, অন্যত্র।’
গতকাল রোববার (১৮ই মে) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে আনু মহাম্মদ এসব কথা বলেন। তার ফেসবুক আইডিটি ভেরিফায়েড না। এটি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কী না, এ বিষয়ে সুখবর ডটকম নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে দৈনিক সমকাল এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে, এটি আনু মুহাম্মদের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ১৭ই মে দেওয়া এক বক্তব্যে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ‘বিদেশি নাগরিক’ অভিযোগ করে তাকে সরকার থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে ইঙ্গিত করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আপনার সরকারে বিদেশি নাগরিককে আপনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। আপনার কি সেই আক্কেল-জ্ঞান নেই? বিদেশি নাগরিকের কাছে দেশের সেনাবাহিনী নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবে—কীভাবে ভাবলেন?’
সালাহউদ্দিন আহমেদ নিরাপত্তা উপদেষ্টার বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি এ ইস্যুতে ‘চ্যালেঞ্জ’ করেন। বিএনপির নেতার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা। গতকাল একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আমার অধিকার পূর্ণ মাত্রায় প্রয়োগ করতে প্রস্তুত।’
প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত খলিলুর রহমান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আরও জানান, ‘অভিযোগ প্রমাণের ভার সেই ব্যক্তির ওপর বর্তায়, যিনি এটি করেছেন। প্রয়োজনে এটি আদালতের সামনে প্রমাণ করতে হবে।’ এরপর এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদের আর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন