ছবি: সংগৃহীত
পোপ ফ্রান্সিস সোমবার (২১শে এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে ভ্যাটিকানে নিজ বাসভবন কাসা সান্তা মার্তায় মারা গেছেন। এক যুগের বেশি ক্যাথলিক চার্চের প্রধান যাজক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন পোপ ফ্রান্সিস। তার মৃত্যুতে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য প্রায় সব নেতাই শোক প্রকাশ করেছেন।
সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের প্রতি পোপ ফ্রান্সিসের বিশেষ দরদ ছিল। তাদের উন্নতির জন্য তিনি সব সময় কথা বলেছেন। বিশ্ব শান্তি ও পরিবেশ রক্ষায়ও তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধ বন্ধে তিনি প্রায় সময় আহ্বান জানাতেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
এক শোকবার্তায় ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, ‘পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর খবর আমার জন্য একটি বড় ধাক্কা। আমরা একজন মহান ব্যক্তি ও অভিভাবককে হারালাম। তার বন্ধুত্ব, উপদেশ ও শিক্ষা লাভের সুযোগ আমার হয়েছিল। নিজের খারাপ সময়েও তিনি আমাকে উপদেশ দেওয়া অব্যাহত রেখেছিলেন। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি তাকে বিদায় জানাচ্ছি।’
পোপ ফ্রান্সিস ১৯৩৬ সালে আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘আজ (২১শে এপ্রিল) সকালে পোপ ফ্রান্সিসের (জর্জ বারগোগ্লিও) মৃত্যুর খবর জেনে আমি গভীরভাবে দুঃখিত। তিনি শান্তিতে থাকুন। তার সঙ্গে কিছু মতপার্থক্য ছিল, যা আজ গৌণ মনে হচ্ছে। তিনি ছিলেন এক প্রাজ্ঞ ব্যক্তি। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ ছিল আমার জন্য সম্মানের।’
দুঃসময়ে পোপ ফ্রান্সিস সব সময় পাশে ছিলেন জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুদ্ধ ও নিষ্ঠুরতার সময়ে সবচেয়ে অসহায় মানুষের পক্ষে কথা বলতেন তিনি। তার মৃত্যুর শূন্যতা বিশ্বের ক্যাথলিক সমাজের পাশাপাশি ফ্রান্সেও দারুণভাবে অনুভূত হবে।’
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, ‘পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে ক্যাথলিক চার্চ ও বিশ্ব দুর্বলের পক্ষে কথা বলার একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে হারিয়েছে। তিনি সব সময় মানুষে মানুষে মিলন কামনা করতেন। তিনি ছিলেন উষ্ণ হৃদয়ের এক মানুষ।’
জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টেইনমায়ার বলেন, ‘একটি আশার আলো নিভে গেল। রোমের আর্চবিশপ হওয়ার প্রথম দিনেই তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করেছিলেন, দরিদ্র, প্রান্তিক, স্থানচ্যুত এবং শরণার্থীরা বিশেষ মনোযোগ পাওয়ার হকদার। তাদের প্রতি তার বিশেষ যত্ন ও ভালোবাসা ছিল।’
ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস ও কুইন কনসর্ট ক্যামিলা পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে ‘গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন’। এক বিবৃতিতে তারা লিখেছেন, ‘তিনি ইস্টার সানডের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন শুনে আমরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলাম। ...মানুষ ও আমাদের এ গ্রহের প্রতি নিজের কর্ম ও যত্ন দিয়ে তিনি সবার হৃদয় স্পর্শ করেছেন।’
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এক্সে লিখেছেন, ‘বিশ্বের এক জটিল ও চ্যালেঞ্জিং সময়ে তার নেতৃত্ব ছিল বেশ উৎসাহব্যঞ্জক। তিনি ছিলেন বেশ নম্র। ...ব্রিটেনের সব মানুষ ও ক্যাথলিক চার্চের পক্ষ থেকে আমি তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’
নিজের মালিকাধানধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, ‘শান্তিতে থাকুন পোপ ফান্সিস! ঈশ্বর তাকে এবং যারা তাকে ভালোবাসতেন, তাদের মঙ্গল করুন!’
মৃত্যুর আগের দিন স্বল্প সময়ের জন্য পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন আমেরিকার ভাইস-প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। এ সাক্ষাতের কয়েক ঘণ্টা পর পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘সারা বিশ্বে যারা তাকে ভালোবাসতেন, সেই লাখো খ্রিষ্টানের সঙ্গে আমার হৃদয়ও কাঁদছে। ... গতকাল (২০শে এপ্রিল) তার সঙ্গে দেখা করতে পেরে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। করোনা শুরুর দিনগুলোয় তিনি যেসব উপদেশ দিতেন, তার জন্য আমি তাকে আজীবন স্মরণ করব।’
পোপ ফ্রান্সিস আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন উল্লেখ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘খ্রিষ্টীয় শিক্ষার জন্য তিনি একজন বিশ্বস্ত সেবকে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ধর্মীয়ভাবে প্রাজ্ঞ ও রাষ্ট্রনেতাসুলভ ব্যক্তিত্ব। তিনি মানবতা ও ন্যায়বিচারের একজন অবিচল সমর্থক ছিলেন।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক্সে লিখেছেন, ‘কীভাবে আশা দেখাতে হয়, প্রার্থনার মাধ্যেম দুঃখ-কষ্ট কমাতে হয় এবং ঐক্য বজায় রাখতে হয়, তা পোপ ফ্রান্সিস শিখিয়েছেন।... তার স্মৃতি জাগরুক থাকবে।
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ বলেছেন, পোপ ফ্রান্সিস ‘গভীর বিশ্বাস ও অসীম করুণাময় এক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি জিম্মিদের (ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের কাছে) উদ্ধারের জন্য যে প্রার্থনা করেছিলেন, তা শিগগির ফলবে বলে আশা করি।’
মিসরের কপটিক অর্থোডক্স চার্চ পোপ ফ্রান্সিসকে ‘খ্রিষ্টীয় নম্রতার সত্যিকারের উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করে তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পোপ ফ্রান্সিসের বিশ্বব্যাপী আধ্যাত্মিক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে একটি বিবৃতি দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেছেন, ইরান ‘বিশ্বজুড়ে সব খ্রিষ্টানের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে।’
লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, লেবাননের মানুষ ‘একজন প্রিয় বন্ধু ও শক্তিশালী সমর্থকের ক্ষতি অনুভব করছে। প্রয়াত পোপ সব সময় তার হৃদয়ে লেবাননকে লালন করতেন এবং আমাদের জন্য প্রার্থনা করতেন।’
এইচ.এস/