ছবি: সংগৃহীত
দেশের তরুণসমাজ ক্রমেই ‘ডানপন্থী’ হয়ে যাচ্ছে—অন্তত ধর্মীয় অনুরাগ বা জাতীয়তাবাদী আবেগে, এর অন্যতম কারণ বামপন্থীরা তরুণদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হারিয়েছেন। জ্যেষ্ঠ ও প্রবীণ বামনেতাদের ‘ভাষা ও কর্মপদ্ধতি অনেক সময় এতটাই পুরোনো হয়ে গেছে যে, এতে তরুণরা আগ্রহ বোধ করেন না’ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও প্রগতিশীল চিন্তক অধ্যাপক এম এম আকাশ।
দেশে ধর্ম ও রাজনীতির মিশ্রণ প্রসঙ্গে এম এম আকাশ বলেন, ‘আমাদের মূলধারার রাজনীতিবিদরা এ বিষয়ে নীতিগত কঠোরতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।’ বর্তমানে যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি মাথাচাড়া দিচ্ছে, সেটা রোধ করার জন্য ‘সবচেয়ে আগে দরকার, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির একটা বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা’ বলে মনে করেন তিনি।
দেশের তরুণসমাজ ক্রমেই ‘ডানপন্থী’ হয়ে যাচ্ছে—অন্তত ধর্মীয় অনুরাগ বা জাতীয়তাবাদী আবেগে। কেন বামপন্থীরা তরুণদের কাছে নিজেদের আকর্ষণীয় করে তুলতে পারছেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে এম এম আকাশ বলেন, ‘বামপন্থীরা তরুণদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হারিয়েছেন, এটা একটা বড় কারণ। আজকের তরুণরা চায় সাহসী নেতৃত্ব, স্পষ্ট স্বপ্ন ও বাস্তবসম্মত কর্মসূচি। আমাদের ভাষা, আমাদের কর্মপদ্ধতি অনেক সময় এতটাই পুরোনো হয়ে গেছে যে, তরুণরা আগ্রহ পায় না।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটা বিষয় হচ্ছে, তরুণদের উদ্বেগ এখন চাকরি, স্টার্টআপ, প্রযুক্তি—এসব ঘিরে। আমরা যদি তাদের এ বাস্তব আকাঙ্ক্ষার ভাষা না বুঝি, তবে আমরা তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারব না। একটা নতুন ধরনের প্রগতিশীল আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার, যেখানে তরুণদের স্থান থাকবে অগ্রভাগে।’
তার মতে, ‘আজকের তরুণরা আগের চেয়ে অনেক বেশি জানে, দেখে, শোনে। তারা প্রশ্ন করে, তর্ক করে, ন্যায়বিচার চায়। এ প্রশ্ন করার শক্তিটা যদি না হারায়, তাহলে আমি আশাবাদী—ভবিষ্যৎ প্রগতির পথেই এগোবে।’
দৈনিক আজকের পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এম এম আকাশ এসব কথা বলেন। গত ৪ঠা মে তার সাক্ষাৎকার পত্রিকাটিতে ছাপা হয়। সাক্ষাৎকারটি নেন আজকের পত্রিকার বিভুরঞ্জন সরকার ও মাসুদ রানা।
এম এম আকাশ দেশের বামপন্থী আন্দোলনের এক সুপরিচিত নাম। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) অন্যতম নেতৃত্বদানকারী হিসেবেও পরিচিত তিনি। আজকের অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যখন একদিকে গণতন্ত্র সংকুচিত হচ্ছে আর অন্যদিকে বৈষম্য বাড়ছে, তখন তার মতামত নতুন করে মূল্যায়নের দাবি রাখে।
বাংলাদেশে ধর্ম ও রাজনীতির মিশ্রণ নিয়ে আপনার মন্তব্য কী- প্রশ্নের জবাবে এম এম আকাশ বলেন, ‘এটা অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা। আমাদের সংবিধান স্পষ্টভাবে বলেছিল, ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রের মূলনীতি হবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখছি, রাজনীতির মঞ্চে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে—কখনো সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াতে, কখনো নিরীহ মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলতে।’
তিনি বলেন, ‘ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয়, রাষ্ট্র ও রাজনীতির ক্ষেত্র থেকে সেটাকে আলাদা রাখতে না পারলে বিভাজন, সহিংসতা ও অসহিষ্ণুতা অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের মূলধারার রাজনীতিবিদরা এ বিষয়ে নীতিগত কঠোরতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।’
বর্তমানে যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি মাথাচাড়া দিচ্ছে, সেটা রোধ করার জন্য বামপন্থীরা কী ভূমিকা রাখতে পারেন- প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে আগে দরকার, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির একটা বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা। বামপন্থীরা সেই প্ল্যাটফর্ম হতে পারতেন। আমরা ধর্মের বিরুদ্ধে নই; ধর্মের নামে যে রাজনীতির অপব্যবহার হয়, তার বিরুদ্ধে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ হওয়া উচিত সমস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে একত্র করা—মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—সবাইকে। একমাত্র ঐক্যের রাজনীতি দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষকে মোকাবিলা করা সম্ভব। তাছাড়া, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবতাবাদী চেতনা জাগাতে হবে।’
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন