ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ বা পথনকশা প্রকাশ করেছে। এতে নির্বাচন-পূর্ব, নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচনোত্তর প্রতিটি ধাপের বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা ও সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৮শে আগস্ট) বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার থেকে রমজানের আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে বলা হয়েছে। তার ভিত্তিতে আমরা নির্বাচনী কার্যক্রম চলমান রেখেছিলাম। পর্যায়ক্রমে আমরা বিভিন্ন তথ্য দিয়েছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা কর্মপরিকল্পনা ২৪টি অংশে ভাগ করেছি। একটা হচ্ছে অংশীজনের সংলাপ, সেপ্টেম্বরের শেষে শুরু হওয়ার কথা আছে, এটা দেড় মাসব্যাপী করা হবে। সংলাপে রাজনৈতিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব থাকবে।’
সচিব বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩০শে নভেম্বর। নতুন দলের মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলমান আছে। আমরা আশা করছি, এ কার্যক্রম সেপ্টেম্বরের মধ্যে করতে পারব।’
রোডম্যাপ অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, মনোনয়নপত্র দাখিল ও যাচাই, নির্বাচনী আচরণবিধি বাস্তবায়ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পর্যবেক্ষক আমন্ত্রণ এবং ভোট গণনার পর ফলাফল ঘোষণা— সবকিছুর জন্য পৃথক সময়সূচি নির্ধারিত হয়েছে।
রোডম্যাপের প্রধান ধাপগুলো হলো—
সীমা নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা: নতুন তথ্য সংগ্রহ, খসড়া প্রকাশ, আপত্তি ও সুপারিশ গ্রহণ এবং চূড়ান্ত প্রকাশের প্রক্রিয়া জুলাই থেকে আগস্ট ২০২৫-এর মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
আচরণবিধি ও আইন সংস্কার: প্রার্থীদের আচরণবিধি ও নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইনি কাঠামো সংশোধন সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা: পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ সব বাহিনীর সমন্বয়ে জাতীয় টাস্কফোর্স ও বিশেষ নিরাপত্তা সেল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা পরিকল্পনাও রোডম্যাপে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম: দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য আলাদা নির্দেশিকা তৈরি এবং নিবন্ধনের সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। জুলাই-আগস্ট ২০২৫-এর মধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা: ভোটগ্রহণ শেষে দ্রুত ফলাফল প্রেরণ, আইসিটি-ভিত্তিক ফলাফল ব্যবস্থাপনা এবং নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সক্রিয় করার পরিকল্পনাও রোডম্যাপে রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রতিটি ধাপ বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, ডাক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সম্পৃক্ত করা হবে। কমিশনের দাবি, এ রূপরেখা অনুসারে কাজ হলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন