ছবি: সংগৃহীত
৩৭ বছর বয়সেও বিরাট কোহলি যেন সময়কে থামিয়ে রেখেছেন। বয়স তার জন্য শুধুই একটা সংখ্যা, প্রতিদিনই নতুন করে সেটার প্রমাণ দেন ভারতীয় এই ব্যাটসম্যান। কঠোর খাদ্যনিয়ম, শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন তাকে বছরের পর বছর রেখেছে সেরা ফিটনেসে।
গতকাল (৫ই নভেম্বর) ছিল তার ৩৭তম জন্মদিন। ক্রিকেট–ভক্তদের চোখে এখনো তিনি যেন সেই উদ্যমী, তরুণ কোহলি। গড়ন থেকে প্রাণশক্তি—সব কিছুই যেন অবিকল একই। তার শরীরের রহস্য লুকিয়ে আছে নিয়ম আর সংযমে। চলুন দেখা যাক, কীভাবে নিজেকে এমন ফিট রেখেছেন কোহলি।
খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কী ভাবেন কোহলি
স্টার স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কোহলি বলেছিলেন, ‘যখন আপনি ফিটনেস নিয়ে যাত্রা শুরু করবেন, তখন সব কিছুই চেষ্টা করে দেখতে হবে—ভিটামিন, পানি, প্রোটিন। তারপর ধীরে ধীরে বুঝতে পারবেন, আসলে কোনটা আপনার জন্য কাজ করছে। তখনই আপনি ভারসাম্যটা খুঁজে পাবেন।’
তার কথা, জিমে ঘাম ঝরানোর চেয়ে খাদ্যাভ্যাস অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, ‘ফিটনেসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো খাবার। শরীরকে কষ্ট দেওয়া সহজ, কিন্তু সঠিকভাবে খাওয়া একটা মানসিক লড়াই। জিভের স্বাদ আর লোভই ঠিক করে দেবে, আপনি এগোবেন, না পিছাবেন।’
নিজের শৃঙ্খলা নিয়ে তার কথা, ‘আমি চাইলে ছয় মাস একদম একই খাবার খেতে পারি, কোনো সমস্যা হয় না।’
কী থাকে কোহলির খাদ্যতালিকায়
‘আমার প্রায় ৯০ শতাংশ খাবারই ভাপানো বা সেদ্ধ। শুধু লবণ, গোলমরিচ আর লেবুর রস থাকে। আমি স্বাদের পেছনে ছুটি না, দেখি শরীরের জন্য কোনটা ভালো’—এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন কোহলি, ‘হালকা ড্রেসিংসহ সালাদ পছন্দ করি, অলিভ অয়েলে হালকা গ্রিল করা খাবার খাই। তরকারি এড়িয়ে চলি, কিন্তু ডাল খাই। তবে পাঞ্জাবি বলে রাজমা-লোভিয়া একটু খেতেই হয়।’
২০১৮ সালে একবার মারাত্মক অ্যাসিডিটি ও ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছিলেন কোহলি। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, তার হাড়ে ক্যালসিয়াম কমে গেছে। তখনই সিদ্ধান্ত নেন—মাংস ছেড়ে পুরোপুরি নিরামিষ খাবার খাবেন।
তবে তিনি সম্পূর্ণ নিরামিষভোজী নন। ইউটিউবে ফুড শো কার্লি টেলস–এ এক সাক্ষাৎকারে কোহলি বলেছিলেন, দুগ্ধজাত খাবার এখনো তার ডায়েটে থাকে।
কোহলির মতে, এক বাটি তাজা সবজি শরীরের পুষ্টি ঠিক রাখতে যথেষ্ট। তার প্রিয় খাবার ‘সুপারফুড সালাদ’। তিনি বলেন, ‘আমি আগে প্রচুর মাংস খেতাম। তাই পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখতে সালাদই সবচেয়ে ভালো বিকল্প মনে হয়েছে। এতে পুষ্টি যেমন মেলে, খাবারও থাকে হালকা।’
এই সুপারফুড সালাদ তার নিজস্ব রেস্টুরেন্ট ওয়ান কমিউন–এও পাওয়া যায়। এতে থাকে নানা ধরনের শাকপাতা, ভাজা কুমড়ার বীজ, রসালো তরমুজ আর রাজগিরার পপস।
কোহলি চিনি, মিষ্টি, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকেন। সারাক্ষণ শরীর আর্দ্র রাখেন প্রচুর পানি আর লেবু মেশানো গ্রিন টি খেয়ে। সকালে নাশতা হিসেবে খান সবজি দেওয়া ওমলেট বা উদ্ভিদভিত্তিক বিকল্প, সঙ্গে গ্লুটেনমুক্ত টোস্ট আর ফল। দুপুর-রাতের খাবারে থাকে হালকা প্রোটিন বা নিরামিষ খাবার—ডাল, কুইনোয়া (গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের ভোজ্য বীজ), নানা শাকসবজি। বিকেলের নাশতায় থাকে বাদাম, বীজ আর প্রোটিন শেক। তার খাদ্যতালিকা সাজানো পেশির পুনর্গঠন, দীর্ঘস্থায়ী শক্তি ও রোগপ্রতিরোধ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে।
কোহলির অনুশীলনের রুটিন
সপ্তাহে পাঁচ-ছয় দিন নিয়মিত অনুশীলন করেন কোহলি। শক্তি, সহনশক্তি আর নমনীয়তা—তিন দিকেই ভারসাম্য রাখেন। স্কোয়াট, ডেডলিফট, ক্লিনের মতো ব্যায়াম দিয়ে বাড়ান শক্তি। সঙ্গে থাকে স্প্রিন্ট, ট্রেডমিলে দৌড়, হাই-ইনটেনসিটি ট্রেনিং—যা তাঁর ক্ষিপ্রতা আর ফিটনেস ধরে রাখে। চোট এড়াতে ও চোট থেকে সেরে ওঠতে করেন যোগব্যায়াম ও স্ট্রেচিং।
মানসিক একাগ্রতা বজায় রাখতে প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম, নিয়মিত ধ্যান আর সময়মতো বিশ্রাম নিশ্চিত করেন কোহলি। রাতজাগা, দেরিতে খাওয়া, অ্যালকোহল—সবই তার নিষিদ্ধ তালিকায়।
এই ধারাবাহিকতা, ভারসাম্য আর শৃঙ্খলাই তাকে বিশ্বের সবচেয়ে ফিট ক্রীড়াবিদদের একজন বানিয়েছে।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন