রবিবার, ২৭শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১২ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** আগের তিন ভোটের নির্বাচনী কর্মকর্তারা দায়িত্ব পাবেন না *** ভারতে এক বছরের শিশুর কামড়ে প্রাণ গেল বিষধর গোখরার *** নিবন্ধন প্রত্যাশী পর্যবেক্ষক সংস্থার আবেদন চেয়ে ইসির বিজ্ঞপ্তি জারি *** দেশে মোটরসাইকেল বিক্রি ১৭ শতাংশ বেড়েছে *** আজ টিভিতে যা দেখবেন *** জুলাই আন্দোলনের মূল নায়ক তারেক রহমান: আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী *** মৌলিক সংস্কার না হলে গণতান্ত্রিক উত্তরণ হবে না: বদিউল আলম মজুমদার *** মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে বার্ন ইনস্টিটিউটে প্রধান উপদেষ্টা *** জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মূল লক্ষ্য ছিল ‘অভ্যন্তরীণ পরাধীনতামুক্ত’ রাষ্ট্র গঠন: ফরহাদ মজহার *** গন্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভন্ডুল করার চেষ্টা চলছে: প্রধান উপদেষ্টা

মা দিবসে কবরের পাশে শুয়ে সারা রাত মায়ের সঙ্গে গল্প করবে জায়ান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:১৬ অপরাহ্ন, ১১ই মে ২০২৫

#

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

ছয় মাস আগে ইসরায়েলি হামলায় মাকে হারিয়েছে শিশু জায়ান মাহনা। এরপর থেকে প্রতি রাতে মায়ের কবরের পাশেই ঘুমায় ৮ বছর বয়সী শিশুটি। মায়ের কবরের পাশে শুয়েই মা দিবস কাটবে তার। সে জানায়, মায়ের হাতে তো ফুল দিতে পারবে না। তাই কবরে একটা ফুল গুঁজে দিয়ে সারা রাত মায়ের সঙ্গে গল্প করবে। হয়তো কাঁদবেও সারা রাত। খবর আরব নিউজের।

আরব নিউজকে জায়ান জানায়, মাকে হারানোর পর আর কোনো কিছুতে তার ভয় লাগে না। কবরের পাশে ঘুমালে বরং মায়ের গায়ের পরিচিত সেই গন্ধ পায় সে, অনুভব করতে পারে উষ্ণতা। সে বলে, ‘শুধু যে মায়ের আদর-ভালোবাসা অনুভব করি, তা নয়। আমার সারা দিন কেমন কাটল সেই গল্পও বলি মাকে।’ কথা বলতে বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে জায়ান। জোর করে কান্না চেপে শিশুটি বলে, ‘মাকে খুব মনে পড়ে। যদি শুধু ৫ মিনিটের জন্য আবার ফিরে পেতাম, জড়িয়ে ধরে রাখতাম। চুমু খেতাম।’

গাজার অন্য অনেক শিশুর তুলনায় জায়ানকে বেশ ভাগ্যবানই বলা যেতে পারে। কারণ, তার তো মায়ের একটা কবর আছে! গাজার অনেক শিশু আছে যাদের মা হারিয়ে গেছেন, কোথায় আছেন, কেউ জানেন না! হয়তো মরেই গেছেন। কিন্তু দুর্ভাগা ওই শিশুগুলো মায়ের কবরের সন্ধান জানে না। হাজার হাজার মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। আবার কারও মৃত্যু হয়েছে এত নৃশংসভাবে যে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে শরীর। তাদের কোনোদিনই শনাক্ত করা যাবে না।

২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে হাজার হাজার মায়ের বুক খালি হয়েছে ইসরায়েলি হামলায়। একইভাবে হাজার হাজার সন্তানের জীবন থেকে হারিয়ে গেছেন বাবা-মা। তেমনই আরেক সন্তান ফাইজা দারবিশ। তার মা সামাহার দারবিশ ছিলেন শিক্ষিকা। তিনি চাইতেন ফাইজা পড়াশোনা করে জীবনে অনেক বড় কিছু হোক। ২০২৩ সালে ইসরায়েলি হামলায় যখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাওয়ার উপক্রম, তখন সামাহার তাকে পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেন। অনিশ্চয়তা থাকলেও ফাইজা কখনো ভাবেননি যে মায়ের সঙ্গে আর কখনো দেখা হবে না।

আরব নিউজকে ফাইজা বলেন, ‘এত বিপজ্জনক একটা পরিস্থিতিতে পরিবার রেখে বিদেশে আসতে চাইনি। মা খুব জোরাজুরি করলেন। আমিও চেয়েছিলাম পড়াশোনা করে মাকে গর্বিত করব। তাই পরে রাজি হই। কিন্তু আমি দেশ ছাড়ার পর পরই আল মাওয়াসিতে ইসরায়েলি হামলায় মা-সহ আমার পরিবারের ২০ সদস্য নিহত হন।’

ফাইজা জানান, মা তাকে শেষ একটি ভয়েস নোট পাঠিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘মা, তুমি কেমন আছ? আশা করি, সব ঠিকঠাক আছে। আমরাও ভালো আছি। নিশ্চয়ই তুমি নিরাপদে পৌঁছেছ। নিজের যত্ন নিও, সোনা।’

ফাইজা বলেন, ‘আমি এখনো প্রতিদিন সকালে উঠেই ভয়েস নোটটা শুনি। এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার এটিই আমার শক্তি। আমি জানি, মা আর কোনোদিন আমাকে রিপ্লাই করবেন না। তাও আমি মেসেজ পাঠাই। এখনো প্রতিদিন মায়ের জবাবের অপেক্ষা করি।’ ফাইজা জানান, এ ভয়েস নোটটিই এবার মা দিবসে তার একমাত্র অনুষঙ্গ।

গাজার সন্তানেরা যেমন মা হারানোর বেদনায় ব্যথিত, একইভাবে গাজার মায়েরাও সন্তান হারানোর হাহাকার নিয়ে বেঁচে আছেন। আবীর নাসের নামের এক ফিলিস্তিনি মা আরব নিউজকে জানান, দুই সন্তানই ছিল তার পৃথিবী। ছেলে আমিরের বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর, আর মেয়ে হুর দুই বছরের। ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে দুই সন্তানই। শুধু সন্তানই নয়, স্বামীকেও হারিয়েছেন ওই হামলায়। এবারের মা দিবসে আবীরের চাওয়া খুবই সামান্য—তার দুই সন্তান আবার তাকে মা বলে একবার ডাকুক। কিন্তু এ চাওয়া পূরণের সাধ্য কি কারও আছে!

এইচ.এস/

ফিলিস্তিন

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন