ছবি: সংগৃহীত
প্রখ্যাত সাংবাদিক মাহফুজ আনাম বলেছেন, ‘দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যখন আমরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুধু নয়াদিল্লি ও কলকাতার কথা ভাবি। খুব বেশি হলে মুম্বাই পর্যন্ত চিন্তা করি। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের বিষয়ে আমাদের ধারণা খুবই সীমিত।’
তিনি বলেন, ‘অথচ, সেখানে (দক্ষিণ ভারত) ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ভিত্তিমূল, যেখান থেকে আমাদের স্টার্টআপ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তারা অনেক কিছু শিখতে পারেন। আমরা ভারতের সঙ্গে কীভাবে একটি নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি, যেখানে উভয়ই লাভবান হবে এবং একইসঙ্গে কোনো আধিপত্যবাদ থাকবে না, থাকবে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান?’
ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম মনে করেন, ‘এ প্রশ্নের জবাব নিশ্চিতভাবেই জ্ঞান, দক্ষতা ও নিজের প্রতি বিশ্বাসে। আমাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব নেই। কিন্তু বাকি দুইটি অর্জনে কঠোর পরিশ্রম প্রয়োজন। আমাদের প্রয়োজন ঠাণ্ডা মাথার বিশেষজ্ঞ, যারা একসঙ্গে বসে সব হিসাব-নিকাশ করবে, তথ্য প্রকাশ করবেন এবং একটি স্থিতিশীল ও পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করবেন। যা দুই দেশের জন্যই মঙ্গলজনক। যে কোনো ধরনের একতরফা সমঝোতা নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে কম আলোচিত বিষয়গুলোর একটি হচ্ছে পররাষ্ট্রনীতি। এটি সবসময় আমলাতান্ত্রিক জটিলতার আবরণে ঢাকা থাকে। দ্য ডেইলি স্টারে ৩৩ বছরের অভিজ্ঞতায় আমি এমন একটি উদাহরণও মনে করতে পারছি না, যেখানে সরকার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে জনসমক্ষে আলোচনা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সংসদও এ বিষয়ে ব্যর্থ হয়েছে এবং ভোটারদের হতাশ করেছে। কারণ, পররাষ্ট্রনীতি কখনোই সংসদে আলোচনার জন্য উত্থাপিত হয়নি। সীমিত পরিসরে আলোচনা হয়েছে শুধু বেসরকারি থিংক ট্যাঙ্ক বা গণমাধ্যমেই।’ সম্প্রতি ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক কলামে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশিষ্ট এ সাংবাদিক বলেন, ‘বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হলেও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে আমরা কতটা প্রাধান্য দেই বা এটা নিয়ে আমাদের মনোভাব কেমন।’
তিনি বলেন, ‘কমিশন না হলেও অন্তত আমাদের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব, জ্যেষ্ঠ আমলা, সাবেক রাষ্ট্রদূত, শিক্ষাবিদ ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের আনুষ্ঠানিকভাবে একত্রিত করে আলোচনা করতে পারতাম যে, কীভাবে এ পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে এগিয়ে যাওয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘উদাহরণ হিসেবে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটিকেই ধরুন। মানচিত্রের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ, জটিল, বহুমুখী ও সূক্ষ্ম এবং নিজেদের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে ঠিক কতটা মানসম্পন্ন ও বহুমুখী দক্ষতার প্রয়োজন।’
মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমি প্রায়ই ভাবি, কেন আমাদের বৈদেশিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষণার জন্য বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান নেই, বিশেষ করে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে?’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আরেক নিকটতম প্রতিবেশী (মিয়ানমার) সম্পর্কে কি আমরা সত্যিই ভালোভাবে জানি? রোহিঙ্গা সংকট অনেক আগেই সমাধান করা উচিত ছিল এবং এটা বোঝা উচিত ছিল, এ ধরনের সমস্যা সমাধানে ভূরাজনৈতিক সহযোগিতার বিকল্প নেই।’
এইচ.এস/