ছবি: সংগৃহীত
কারাবন্দী সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু ‘প্রোস্টেট ক্যান্সারে’ আক্রান্ত, গত বছর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার কয়েক মাস আগে তার অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া দৈনিক ভোরের কাগজের সাবেক সম্পাদক শ্যামল দত্ত ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ (ঘুমে সাময়িকভাবে দম বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত জটিল রোগ), ডায়াবেটিসে ভুগছেন। গত বছরের আগস্টে গ্রেপ্তার একাত্তর টিভির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ ও একই চ্যানেলের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপা একাধিক রোগে আক্রান্ত। মায়ের মৃত্যুর পর রুপা শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন কারাগারে। তাদের পরিবারের সদস্যরা আছেন ভয় ও অনিশ্চিত এক পরিবেশে। কারাবন্দী সাংবাদিকদের ছেলেমেয়ের পড়াশোনা ঠিকমতো হচ্ছে না। এ চার সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যরা এমন তথ্য জানিয়েছেন।
ঢাকায় ও সারাদেশে যেসব সাংবাদিক আত্মগোপনে আছেন মবের ভয়ে ও গ্রেপ্তার এড়াতে, বা যারা ইতিমধ্যে বিদেশে চলে গিয়ে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান করছেন, তাদের মধ্যে অনেকের পরিবারের সদস্যও দেশে আতঙ্কে আছেন। তাদের অভিযোগ, অমুক সাংবাদিকের নিকট আত্মীয় হওয়ার ‘অপরাধে’ কখন মবের শিকার হন, কখন বাড়ি-ঘরে হামলা হয়, এ আতঙ্কে থাকেন তারা। অনেক সাংবাদিকের পরিবার ও ঘনিষ্ঠ সদস্যরা থাকার জায়গা বদল করেছেন। গত বছরের ৫ই আগস্টের আগে পর্যন্ত যেসব বাড়িতে তারা থাকতেন, তা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে গেছেন। তারা বলছেন, অমুক সাংবাদিক আমার আত্মীয়, এ পরিচয় একসময় গর্বের হলেও এখন তা তাদের কাউকে কাউকে সামাজিকভাবে কোণঠাসা করার পাশাপাশি ভয়ের পরিবেশের মধ্যে রাখে।
বাবা-মা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে একধরনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দিন পার করছে সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপার একমাত্র মেয়ে। ঢাকার ইংরেজি মাধ্যমের একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সে। দুই মাস আগে তার এ-লেভেলের এ-টু পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। তাদের এক আত্মীয় সুখবর ডটকমকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নিরাপত্তাহীনতার কারণে শাকিল-রূপার মেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বাসার ঠিকানা প্রচারিত হওয়ার পর শাকিল-রূপার পরিবারের অনেক সদস্য ভয়ে অনেকদিন বাসা ছেড়ে অন্য স্থানে থেকেছেন৷’ এখন তারা ওই বাসায় থাকলেও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। কখন কী ঘটে যায়, এ আতঙ্ক তাদের পিছু ছাড়ে না। তাদের মতো অনেক সাংবাদিকের পরিবার আছে এক ধরনের ট্রমার মধ্যে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন চলাকালে ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক মন্তব্য ঘিরে আন্দোলন পরে অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ওই মন্তব্য করেছিলেন ফারজানা রুপা ও এটিএন নিউজের সাবেক সাংবাদিক প্রভাষ আমিনের প্রশ্নে। এর জের ধরে তারা দুজন সমালোচনার শিকার এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ‘উস্কে দেওয়ার’ অভিযোগে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে অভিযুক্ত হন। গত আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে প্রভাষ আমিনের পরিবারও নিরাপত্তা সংকটের মুখোমুখি। দুই সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যরা জানান, রুপা ও প্রভাষের বিরুদ্ধে নানা মামলা দায়ের হওয়ায় তাদের পরিবার স্বস্তি নেই। অজানা উদ্বেগ, আতঙ্কে দিন কাটে তাদের। ওই সাংবাদিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ হওয়ায় আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। একই বক্তব্য শ্যামল দত্তের পরিবারের সদস্যদেরও।
ধর্মীয় বিশ্বাসের নিরিখে যেসব সাংবাদিক হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান; তাদের পরিবারের সদস্যদের আতঙ্ক যেন তুলনামূলক বেশি। তাদের অভিযোগ, সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী হওয়ার পাশাপাশি এই সাংবাদিকরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু। জুলাই অভ্যুত্থানের পর গণমাধ্যমেও বিশেষ টার্গেটে পরিণত হন সংখ্যালঘু সাংবাদিকরা। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যারা জাতীয় সংবাদমাধ্যমের শীর্ষপদে ছিলেন, তাদের প্রায় সবাইকে 'পরিকল্পনা অনুযায়ী চাকরিচ্যুত' করা হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এর পেছনে সাম্প্রদায়িক কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সংখ্যালঘুরা সব সরকারের আমলেই কম-বেশি নির্যাতিত। এ কারণে তারা বেশি আতঙ্কিত। কী অপরাধে ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা, সেই প্রশ্নও তুলছেন তারা।
এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান বার্তা সম্পাদক মুন্নী সাহা, নিউজ২৪-এর সাবেক হেড অব নিউজ রাহুল রাহা, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির সাবেক প্রধান বার্তা সম্পাদক আশিষ ঘোষ সৈকত, একুশে টিভির সাবেক হেড অব ইনপুট অখিল কুমার পোদ্দার, বৈশাখী টিভির সাবেক বার্তা প্রধান অশোক চৌধুরী ও ডিবিসি নিউজের সাবেক সম্পাদক প্রণব সাহার আত্মীয়-স্বজনরা এসব অভিযোগ করেন। মব সন্ত্রাসের কারণে তারা বাসা থেকে বের হতেও ভয় পান। তাদেরসহ ভুক্তভোগী সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের দাবি, কারাবন্দীদের জামিন হোক, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুক সরকার, সাংবাদিকদের আত্মগোপনে থাকার যে রাজনৈতিক বাস্তবতা দেশে বিদ্যমান, এর অবসান ঘটুক। কেউ প্রকৃত দোষী হয়ে থাকলে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তার, বা তাদের বিচার করুক সরকার।
মামলা ও জন-আক্রমণ থেকে বাঁচতে ঢাকার বাইরের অনেক সাংবাদিক আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তাদের পরিবারের সদস্যরাও বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। অনেকের ছেলেমেয়ের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। গত বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা দেওয়া হয়নি বেশ কয়েক সাংবাদিকের ছেলেমেয়ের। মামলা হওয়ার পর ঢাকার দৈনিক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল থেকে তারা চাকরিচ্যুত হয়েছেন। প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে নানা ‘বাধা’ থাকায় ব্যবসা, চাকরি বা অন্য কাজ করতে পারছেন না। ফলে তাদের পরিবারগুলো আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। এতে প্রায় ক্ষেত্রে তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন কঠিন হয়ে পড়েছে৷
আগে জেলা প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা করতেন, এমন অন্তত নয়জন সাংবাদিকের অভিযোগ, চাকরিচ্যুত করে তাদের স্থলে যাদের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে নেওয়া হয়েছে, তাদের যতোটা রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, নিয়োগে এর চেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে মোটা অংকের টাকা। মফস্বলের ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের অভিযোগ, জুলাই অভ্যুত্থানের পর জাতীয় পর্যায়ের দৈনিক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলোর নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনার দায়িত্ব যায় নতুন গোষ্ঠীর কাছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ‘টাকার বিনিময়ে’ নতুন করে জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে নিউজটুয়েন্টিফোর, আরটিভি, কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও এশিয়ান টিভির সাবেক জেলা প্রতিনিধিরা আছেন।
কারাবন্দী, মামলার শিকার, বিদেশে চলে যাওয়া ও দেশের মধ্যে আত্মগোপনে বা নিরাপদ দুরত্বে থাকা মিলিয়ে অন্তত পঁচানব্বই জন সাংবাদিকের সঙ্গে গত একমাসের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ এবং আলাপ করে সুখবর ডটকম এসব তথ্য জানতে পেরেছে। তাদের মধ্যে বিদ্যমান বাস্তবতার কারণে অন্তত ত্রিশজন সাংবাদিক নিয়মিত একই মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার না করায় ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও সরেজমিনে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছে সুখবর। নিরাপত্তার স্বার্থে সাংবাদিক ও তাদের পরিবার বা স্বজনদের কারো নাম এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে সাংবাদিকদের হয়রানির প্রধান অস্ত্র ছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ)। এখন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ মামলা হচ্ছে হত্যা ও হামলার অভিযোগে। অভ্যুত্থানের সময়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত কয়েক মাসে যেসব মামলা হয়, সেগুলোতে সাংবাদিকদের জড়ানো হয়। সাংবাদিকদের নামে ঢালাও মামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে 'হিউম্যান রাইটস ওয়াচ'সহ (এইচআরডব্লিউ) আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংগঠন। সরকার সরাসরি মামলাগুলো দায়ের না করলেও এসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান কঠোর বলেই মনে হচ্ছে। ফলে কারাবন্দী সাংবাদিকদের মাসের পর মাস ধরে জামিন হচ্ছে না। অন্য মামলাগুলোরও তদন্তে অগ্রগতি নেই।
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যেসব সাংবাদিকের নামে মামলা দায়ের হয়েছে, সেসব সাংবাদিক একটা ভয়ের মধ্যে থাকেন। তারা মব আক্রমণের (দলবদ্ধভাবে আক্রমণ) ভয়ে থাকেন। এ রকম দুই-একটা ঘটনাও ঘটেছে।’ দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা দায়ের, তাদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ স্থগিত করা ইত্যাদি প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে আমি এখন ছায়াকেও ভয় পাচ্ছি। কোনো সরকারের আমলেই সাংবাদিক হিসেবে আমি ভালো ছিলাম না।’
মাহফুজ আনাম বলেন, ‘২৬৬ সাংবাদিক আজকে খুনের মামলা অথবা সহিংসতা–সংক্রান্ত অপরাধের মামলার আসামি। এটা আমাদের জন্য অসম্মানের। এটার অর্থ এই নয় যে, কেউ দোষ করেননি। দোষ করে থাকলে সঠিকভাবে মামলা করে শাস্তি দেওয়া হোক এবং আমরা কোনোভাবেই তার পাশে দাঁড়াব না, যদি তিনি সত্যিকার অর্থে সমাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে থাকেন বা জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের বিরুদ্ধে তার অবস্থান সে রকম থাকে। গণহারে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের আক্রমণ, বা মামলা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী এবং এটি ভয়ের ব্যাপার।’
জানা যায়, ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ২৬শে জুলাই ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ কয়েক সাংবাদিক তাকে আন্দোলন আরও কঠোর হাতে দমনে উৎসাহ দেন। অনেকে মনে করেন, তারা সাংবাদিক হিসেবে নন, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সেদিন কাজ করেছিলেন। নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের অনুসারীরা ছাত্রদের উপর গুলি চালাচ্ছিলেন জুলাই-আগস্টে, তখন একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে, স্থানীয় দু’জন সাংবাদিক শামীম ওসমানের সঙ্গে একটি মিছিলে ছিলেন। একজন সাংবাদিককে দুই হাতে দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতেও দেখা গেছে ওই ভিডিওতে। বিভিন্ন জেলার এমন সাংবাদিক, যারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী ছিলেন, তারাও আছেন মামলা দায়ের হওয়া ২৬৬ জনের তালিকায়।
বিভিন্ন জেলার এমন সাংবাদিকও আছেন, যারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে মামলা হওয়া কয়েক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের গত সরকারের আমলে আর্থিক সুবিধা নেওয়াসহ প্রায়ই একতরফা বা সরকারের পক্ষে সাংবাদিকতা করার অভিযোগ আছে। ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছে, ‘আসামি হওয়া ২৬৬ সাংবাদিকের মধ্যে ১৮ শতাংশের—সংখ্যায় যা প্রায় ৫০ জন—সরাসরি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল, বা তারা আওয়ামী লীগের সাবেক সরকারের আমলে সুবিধাভোগী ছিলেন। এর বাইরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রতিশোধমূলক কারণে সাংবাদিকদের আসামি করা হয়েছে।’
একটি হত্যা মামলায় অভিনেতা, সাংবাদিক ও অধ্যাপকসহ ২০১ জন আসামি, এ তালিকায় আবেদ খানের নামও আছে। তিনি ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি বাড়ি দখল করে আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে ব্যাপকভাবে সমালোচিত এবং আদালতে দণ্ডিত হন। প্রবীণ এ সাংবাদিক সবশেষ জাগরণের অনলাইন সংস্করণের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। গত বছরের ৪ঠা আগস্টের পর থেকে ওই ওয়েবসাইটে আর কোনো লেখা আপলোড হয়নি। তবে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাকে সমর্থন করছে না সাংবাদিক সমাজ। তার মতো গত সরকারের আমলে আরো কয়েক সাংবাদিক নানা কারণে বিতর্কিত হন। তারা বেশিরভাগ জাতীয় ইস্যুর ক্ষেত্রে বিগত সরকারকে সমর্থন জানান এবং সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেন।
তবে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান মনে করেন, এটা ঠিক যে, গত বছরের ২৩শে জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে এডিটরস গিল্ডের এক বৈঠকে আন্দোলনকারীদের নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন কয়েক সাংবাদিক, এমন রেকর্ড রয়েছে। এ ধরনের বক্তব্যের কিছু অংশ ধাক্কা খাওয়ার মতো ছিল। তবে এসব বক্তব্যের কোনো অংশেই দেখা যায় না যে, তারা কেউ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন বা তা সমর্থন করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনার যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণ থাকলেও ‘রাজনৈতিক আনুগত্য কিংবা কোনো কর্তৃত্ববাদী শাসনের কট্টর সমর্থক বা প্রচারক হওয়াটাই অপরাধ নয়’।
শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবুর পক্ষে মামলা লড়ছেন প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তিনি আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমকে মামলাগুলোর অবস্থা সম্পর্কে বলেন, ‘তাদের মামলাগুলোর তদন্ত হচ্ছে না। অথচ তাদের কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এটা ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। এখন পুলিশ যদি এ সাংবাদিকদের হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়, তাতে আমি একটুও অবাক হবো না৷ কারণ, পুলিশ তো স্বাধীন নয়, দেশের আইনগুলোও বদলাবে না৷ যখন যারা ক্ষমতায় আসেন, তারা আইনগুলো ব্যবহার করেন। মূল কথা, সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে আদালতে সরকারি কৌঁসুলিদের আচরণে আমরা কোনো মিল পাচ্ছি না৷’
খবরটি শেয়ার করুন