দুর্গাপূজা ঘিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বৈদ্যেরবাজার এলাকার এক নারী। সম্প্রতি তোলা ছবি। সংগৃহীত
আশ্বিনের আকাশে ভাসা সাদা মেঘের ভেলা আর নদীর তীরে দোল খাওয়া কাশফুল জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। দুর্গাপূজা ঘিরে এখন প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা। তারা অভিজ্ঞ হাতে গড়ে তুলছেন দেব-দেবী। এ কাজে অংশ নিয়েছেন নারীরাও। সংসারের দৈনন্দিন কাজ সামলিয়ে তারাও ব্যস্ত প্রতিমা তৈরিতে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ও দাশের হাট এলাকা, কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের দেবালয় গ্রাম এবং রাজারহাট উপজেলার বৈদ্যেরবাজার গ্রাম ঘুরে নারীদের প্রতিমা তৈরির দৃশ্য দেখা গেছে।
প্রতিমার পলিশ, অলংকার, মুকুট, শাড়ির ডিজাইন থেকে শুরু করে কাঠামো নির্মাণ–সব কাজই করছেন তারা। শিশুরাও মা-বাবার কাজে সহায়তা করছে।
বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। বর্তমানে মন্দিরে মন্দিরে চলছে প্রতিমা তৈরি। এ কাজে সাধারণত নারীদের দেখা যায় না। অল্প কয়েক নারী প্রতিমা তৈরি করেন।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামে এবার পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। এ ছাড়া শেষ মুহূর্তে প্রতিমা বানানোর কাজ পাওয়া গেছে। এ কারণে চাপে থাকা কারিগরদের সঙ্গে হাত লাগাচ্ছেন তাদের স্ত্রী, মা, পুত্রবধূ ও সন্তান।
তাদেরই একজন বৈদ্যেরবাজার গ্রামের বেবী মালাকার। তার স্বামী কারিগর তপন মালাকার বহু বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করে আসছেন। এবার ১৭টি কাজ পেয়েছেন তিনি। গতবার তৈরি করেছিলেন ১৩টি। একেকটি প্রতিমা তৈরি করতে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন। তপন মালাকার বলেন, ‘এখন আমরা রাত-দিন কাজ করছি। আমার স্ত্রীও কাজ করছে। এতে সুবিধা হয়েছে।’
বেবী মালাকার বলেন, ‘আগে সংসারের কাজ সেরে ওভাবে প্রতিমার কাজে হাত দেওয়া হয়নি। এবার কাজের অনেক চাপ। তাই বাধ্য হয়ে সংসারের কাজ সেরে স্বামীকে সহায়তা করতে হচ্ছে।’
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সপ্তমী মালাকারও মা-বাবাকে প্রতিমা তৈরির কাজে সহায়তা করছে। তপন ও বেবীর বড় মেয়ে পূজা রানী সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী বাজারে কাকা ধনঞ্জয় মালাকারের সঙ্গে প্রতিমা বানানোর কাজ করছে। আগে বিয়ের টোপর বানাত পূজা। এবারই প্রথম প্রতিমা তৈরি করছে।
কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের মীরা রানী রায় আগে থেকেই তৈরি করেন। এবার তিনি অনেক প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছেন। মীরা বলেন, ‘এবার চাপ বেশি। একা হাতে প্রতিমা তৈরির কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
বংশপরম্পরায় প্রতিমা তৈরি করছেন কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের কারিগর কালিকান্ত পাল। তিনি বলেন, ‘সারা বছর মাটির জিনিস তৈরি করে কোনোমতে সংসার চালাতে হয়। বছরের এই কয়েক দিন প্রতিমা তৈরির অর্ডার আসে। গতবার ৮টা তৈরি করেছি, এবার ১৪টার অর্ডার পেয়েছি। হাতে সময় কম। তাই স্ত্রী-কন্যারা আমাকে কাজে সাহায্য করছে। তাদের সহায়তায় কাজগুলো দ্রুত করতে পারছি।’
কুড়িগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদ জানায়, জেলার ৯ উপজেলায় এবার ৫৩৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে রাজারহাটে ১৩২টি, উলিপুরে ১১২টি, নাগেশ্বরীতে ৮১টি, ফুলবাড়ীতে ৭২টি, সদর উপজেলায় ৫৭টি, কুড়িগ্রাম পৌরসভায় ২০টি, চিলমারীতে ২৮টি, ভূরুঙ্গামারীতে ২১টি, রৌমারীতে সাতটি ও চররাজিবপুরে দুটি। গত বছর ৪৮৫টি মণ্ডপে পূজা হয়েছিল।
জেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সদস্য সচিব স্বপন কুমার সাহা জানান, পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব ২৮শে সেপ্টেম্বর শুরু হবে। শেষ হবে ২রা অক্টোবর বিজয়া দশমীতে। পূজা নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসন থেকে ১৪ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে মন্দির, স্থায়ী-অস্থায়ী মণ্ডপগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে। আজ রোববার (২১শে সেপ্টেম্বর) মহালয়ার পর থেকে রং করার কাজ শুরু হবে।
খবরটি শেয়ার করুন