ভারতে ১৪ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে প্রথম ডিজিটাল শুমারি। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বে প্রথমবারের মতো পুরোপুরি ডিজিটাল জনশুমারির আয়োজন করতে যাচ্ছে ভারত। ইতোমধ্যে ২০২৭ সালের ওই উদ্যোগের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নয়াদিল্লি। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শুমারিতে ব্যবহার হতে যাওয়া মোবাইল সফটওয়্যার পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
আজ শুক্রবার (৭ই নভেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
ভারতে সর্বশেষ ২০১১ সালে এ ধরনের পূর্ণাঙ্গ জরিপ অনুষ্ঠিত হয়। তবে এবারই প্রথমবারের মতো প্রথাগত মাধ্যমের পরিবর্তে ডিজিটাল মাধ্যমে এই শুমারির আয়োজন করা হচ্ছে।
পাশাপাশি, স্বাধীনতা অর্জনের পর এবারই প্রথম শুমারিতে 'জাত' পরিচয়ে জানার প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সর্বশেষ ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে এই বিতর্কিত প্রশ্ন শুমারিতে স্থান পেয়েছিল।
'ট্রায়াল' শুমারি
১০ নভেম্বর থেকে ২০ দিনের পরীক্ষামূলক শুমারি শুরু হতে চলেছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের কিছু সুনির্দিষ্ট এলাকায় এই পরীক্ষা চলবে।
এতে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ প্রক্রিয়া ও নিজের তথ্য নিজে প্রবেশ করানোর অগ্নিপরীক্ষা হতে চলেছে বলে বিশ্লেষকরা মত দেন।
প্রথাগত কাগজভিত্তিক জনশুমারির সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে একে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এই পরীক্ষামূলক শুমারির 'লক্ষ্য হলো নগর অঞ্চল থেকে শুরু করে সীমিত
'এই পরীক্ষা ভারতের সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল জনশুমারি আয়োজনের পথে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এটি প্রথাগত কাগজ ভিত্তিক শুমারিকে প্রতিস্থাপন করবে', জানায় মন্ত্রণালয়।
২০২৭ সালের ১লা মার্চ মূল জনশুমারি অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।
তবে হিমালয় পর্বতমালা-সংলগ্ন দুর্গম অঞ্চলগুলো, যেমন হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, লাদাখ ও ভারত অধ্যুষিত জম্মু-কাশ্মীরের জনশুমারি আরও আগেই শুরু হবে। মূলত তুষারপাত ও বৈরি আবহাওয়া এড়াতে ২০২৬ সালের ১লা অক্টোবর থেকেই এসব এলাকার শুমারি শুরু হবে।
'জাত' সংক্রান্ত প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা
তবে শুমারির কারিগরি বিষয়গুলোকে ছাপিয়ে আলোচনায় বেশি জায়গা পাচ্ছে জাত-ধর্ম-বর্ণ সংক্রান্ত প্রশ্ন থাকার বিষয়টি।
এই আধুনিক যুগেও ভারতীয়দের মধ্যে কে কোন জাতের প্রতিনিধি, তা সামাজিক মর্যাদার বড় মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত। জাত পরিচয়ের কারণে সম্পদ আহরণ, শিক্ষাগ্রহণ ও চাকরির সুযোগেও তারতম্য ঘটে।
ধারণা করা হয়, ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশই নিম্ন জাত বা বর্ণের অংশ, যাদেরকে যুগে যুগে নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্যের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
হাজারো বছর আগে থেকে প্রচলিত এই জাত-ব্যবস্থা ভারতের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিভাজন তৈরির সবচেয়ে বড় নিয়ামক।
নরেন্দ্র মোদির বিজেপি এর আগে মানুষকে জাতের ভিত্তিতে আলাদা করার বিষয়টির বিরোধিতা করেছে। তবে নতুন এই শুমারির ধারণাকে দলটি মে মাসে সবুজ সংকেত দেয়।
শুমারিতে জাত সংক্রান্ত প্রশ্ন রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে অনেকে বলছেন, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন বা সরকারি চাকরির কোটা নির্ধারণ করতে এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জরুরি।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন