শুক্রবার, ২৭শে জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১২ই আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উন্নত রাষ্ট্র গড়তে তরুণদের মাদকমুক্ত রাখতে হবে

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৭:৫১ অপরাহ্ন, ২৬শে জুন ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

আজ বৃহস্পতিবার (২৬শে জুন) আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, ‘দ্য এভিডেন্স ইজ ক্লিয়ার: ইনভেস্ট ইন প্রিভেনশন। ব্রেক দ্য সাইকেল। স্টপ অর্গানাইজড ক্রাইম।’ মানে হলো, ‘প্রমাণ স্পষ্ট: প্রতিরোধে বিনিয়োগ করুন। চক্র ভেঙে ফেলুন। সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন করুন।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দেশের আটটি বিভাগের ১৬টি জেলা থেকে ৫ হাজারের বেশি মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে মাদকাসক্তের হিসাব তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে প্রাক্কলিত মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮৩ লাখ, যা দেশের মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটির মধ্যে  ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তাদের মধ্যে পুরুষ ৭৭ লাখ ৬০ হাজার এবং নারী ২ লাখ ৮৫ হাজার। এর বাইরে ২ লাখ ৫৫ হাজার শিশু-কিশোর মাদকে আসক্ত।

গবেষণায় আরো বলা হয়, মাদকাসক্তদের মধ্যে প্রায় ৬১ লাখ গাঁজায় (প্রায় ৫২ শতাংশ), ২৩ লাখ ইয়াবায় (প্রায় ২০ শতাংশ) ও ২০ লাখ ২৪ হাজার মদ্যপানে (১৭ শতাংশ) আসক্ত। ৩ লাখ ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ ফেনসিডিল ও সমজাতীয় মাদকে এবং ৩ লাখ ২০ হাজার মানুষ হেরোইনে আসক্ত।

তিন লাখের মতো মানুষ ঘুমের ওষুধ মাদক হিসেবে গ্রহণ করেন। ড্যান্ডির মতো আঠাকে মাদক হিসেবে ব্যবহার করেন ১ লাখ ৬০ হাজারের মতো মানুষ। শিরায় মাদক গ্রহণ করেন প্রায় ৩৯ হাজার মানুষ। সব মিলিয়ে ১ কোটি ১৭ লাখ মানুষ মাদকে আসক্ত ।

বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও ভৌগোলিকভাবে মাদকের ঝুঁকিতে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের পথ (রুট) গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল (মিয়ানমার, লাওস ও থাইল্যান্ডের সীমানা), গোল্ডেন ক্রিসেন্ট (ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান) এবং গোল্ডেন ওয়েজের (ভারতের হিমাচল, উত্তর ও অরুণাচল প্রদেশ, নেপাল ও ভুটানের কিছু অংশ) একেবারে কেন্দ্রে অবস্থান হওয়ায় এমন ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। 

দুঃখজনক হচ্ছে, কোনো সমস্যা, তা যতই গুরুতর হোক না কেন, দেশে যদি স্থায়ী রূপ ধারণ করে, তাহলে একটা সময় তা যেন গা সওয়া ব্যাপারে পরিণত হয়। দেশে মাদকাসক্তি তেমনই এক ভয়ংকর সমস্যা, যা সমাধানের তাগিদ আছে বলে মনে হয় না। মাদকাসক্তি স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিচারহীনতার কারণে। দেশের অসংখ্য স্থানে প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা চলে। 

মাদকে সর্বনাশ হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের। দেশের তরুণদের একাংশের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাদকাসক্তরা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। তারা নানা রোগে আক্রান্ত হন। যার কারণে পরিবার ও সমাজে অশান্তি বাড়ছে। সমাজে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।

তরুণ-যুবকদের বেশ বড় একটা অংশ এ আত্মঘাতী আসক্তির শিকার। মাদকাসক্তি শুধু এ বয়সীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, পূর্ণবয়স্ক, এমনকি শিশু-কিশোরদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তির এলাকাও সীমাবদ্ধ নেই—রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম-মফস্বল পর্যন্ত সারাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

মাদকাসক্তি দূর করার জন্য সামাজিক ও পারিবারিক প্রচেষ্টাও খুব জরুরি। প্রতিটি পরিবারের সন্তানদের দিকে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন; খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। উন্নত রাষ্ট্র গড়তে তরুণদের অবশ্যই মাদকমুক্ত রাখতে হবে।

মাদকাসক্তি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন