শনিবার, ২রা আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** মালিক-ডি ভিলিয়ার্সদের ফাইনাল আজ, খেলা দেখবেন কোথায় *** আমেরিকার বাজারে শুল্ক কমেছে, বাংলাদেশে স্বস্তি *** ফল দেখলেই বুঝবেন, কাজটা ঠিক হয়েছে কী না: খলিলুর রহমান *** ইনার হুইল ক্লাবের উদ্যোগে দরিদ্র ছাত্রীদের জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে টিকা দান *** চোরা শিকার রুখতে গন্ডারের শিংয়ে তেজস্ক্রিয় পদার্থ! *** দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না *** বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করল আমেরিকা *** জিম্বাবুয়েকে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে বাংলাদেশ *** মেসির কারণেই সেদিন চুপ ছিলেন উরুগুয়ের ফুটবলার *** সাংবাদিক হত্যা মামলার আসামি চেয়ারম্যান পদ ফিরে পাওয়ায় বকশীগঞ্জে বিক্ষোভ

দালাই লামার বিরুদ্ধে চীনের গভীর ষড়যন্ত্র 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, ১লা জুন ২০২৩

#

ম্যাগনাস ফিস্কেজো

চলতি বছরের ৮ এপ্রিল, দালাই লামার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করা হয়।

দালাই লামা হলেন তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা। চীনাদের আক্রমণের কারণে ১৯৫৯ সাল থেকে ভারতে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন তিনি। তিনি তিব্বতকে গভীরভাবে ভালোবাসেন কিন্তু সে তিব্বতেই তার একটি ছবি রাখাকেও ফৌজদারি অপরাধের অন্তর্ভুক্ত করেছে চীন সরকার। ১৯৫৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্নভাবে তাকে অপদস্ত করার চেষ্টা করেছে চীন।

সম্প্রতি চীন দালাই লামাকে যৌন নিপীড়নকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ষড়যন্ত্র করে এবং এ ষড়যন্ত্রে তারা অনেকাংশে সফলও হয়েছে কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এর বাইরের লক্ষ লক্ষ লোকেরা তিব্বতের প্রতি অজ্ঞতার কারণে তাদের এই প্রচারকে সত্য বলেই মেনে নিয়েছে।

তিব্বতের নির্বাসিত কর্মী, লাডন টেথং বলেন, চীন জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা জারি করেছে যে চীনা কর্তৃপক্ষ তিব্বতের শিশুসহ অনেক নাগরিকদেরকে আটক করে রেখেছে। তিব্বতের সংস্কৃতি মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রে নেমেছে চীন।

সম্প্রতি ভারতের ধর্মশালায় ৬০০ জন মঙ্গোল অতিথিদের উপস্থিতিতে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের তৃতীয় সর্বোচ্চ পদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া এক মঙ্গোল বালককে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ঘটনা তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্মের বৈশ্বিক প্রাণশক্তিকে প্রদর্শন করে, যা দূর করার জন্য চীন কয়েক দশক ধরে সংগ্রাম করে চলেছে।

২৮ ফেব্রুয়ারি, ধর্মশালার একটি অনুষ্ঠানে ভারতীয় এক মহিলা তার ৮ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে দালাই লামার সাথে সাক্ষাতে আসে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

চীন সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করেই নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল এবং মানুষদের বিভ্রান্ত করছিল। তাই এবারেও মানুষদের বিভ্রান্ত করার জন্য তারা এই ভিডিওবার্তাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের ষড়যন্ত্র করে। 

এই ভিডিওর একটি অংশ কেটে তারা ভিন্নভাবে প্রচার করে যেখানে দালাই লামা ৮ বছর বয়সী ছেলেটাকে চুম্বনের চেষ্টা করছিলেন।

ফেব্রুয়ারিতে খোলা একটি টুইটার একাউন্টে এই ভিডিও প্রকাশ করা হলে তা কয়েক মূহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ করেই দালাই লামা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে লোকেরা তার নিন্দা করা শুরু করে। 

আমি প্রথম এ ব্যাপারে আমার এক সহকর্মীর কাছ থেকে জানতে পারি, যে ভিডিওটি দেখে দালাই লামার নিন্দা করছিল।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেদিন কী ঘটেছিল? জানা যায় যে, প্রাচীন তিব্বতে জিভ বের করে বাচ্চাদের সাথে এমন কৌতুক প্রবীণেরা হরহামেশাই করে থাকতেন। সম্পূর্ণ ভিডিওতে যৌনতার কোনও চিহ্নমাত্র নেই।

ছেলেটিও তার সাক্ষাৎকারে অনুপযুক্ত কিছু ঘটেনি বলে স্বীকার করে। তার মা এবং সে বরং দালাই লামার সাথে সাক্ষাৎ করে নিজেদের আনন্দ ব্যক্ত করে।

একজন নৃবিজ্ঞানী হিসেবে আমার কাছে পুরো ঘটনাটি পশ্চিমা বিশ্বের নোংরা মনের পরিচায়ক। তাছাড়া এর থেকে বুঝা যায়, সাংস্কৃতিক পার্থক্য কী করে শারীরিক অভিব্যক্তির ভুল মানে বের করে।

পশ্চিমা অনেকেই তিব্বতের সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত নয়, আর তাই তাদেরকে ভুল বুঝানো এদিক দিয়ে সহজতর হয়েছে। পশ্চিমা মিডিয়া দালাই লামা সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্যও প্রকাশ করে।

দালাই লামার পক্ষ থেকেও উক্ত ঘটনার জন্য ক্ষমা চাওয়া হয় যা অনেক তিব্বতিকে হতাশ করে। দালাই লামার সমর্থনে ধর্মশালায় এবং লাদাখে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ হয়। সাংবাদিক তেনজিন পেমা চেয়েছিলেন বিশ্ব তিব্বতের কাছে ক্ষমা চাক।

এসব ভাবতে ভাবতে আমার নিজেরই এক অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ল। চীন-মায়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় কাজের সময়, আমি অদূরে এক ওয়া জনগোষ্ঠীর যুবতী মহিলাকে তার শিশুপুত্রকে নিয়ে বসে থাকতে দেখি। মহিলাটি হঠাৎ তার মুখে করে শিশুকে খাওয়াতে শুরু করেন। লজ্জায় আমি মুখ ফিরিয়ে নেই। যে কারো কাছে ঘটনাটি অন্যরকম মনে হলেও এটিই তাদের সংস্কৃতি।

আমার নিজের ক্ষণিকের বিভ্রান্তি দালাই লামার বিরুদ্ধে পশ্চিমা মানসিকতার প্রতিক্রিয়ার সাথে তুলনীয়। 

তিব্বতি প্রাপ্তবয়স্করা জিহ্বাকে অভিবাদন হিসেবেই ব্যবহার করেন, এ বিষয়টি অনেক পশ্চিমারাই জানে না।

চীনা শাসকেরা অবশ্য জানে যে তাদের এ ষড়যন্ত্রে তারা সফল হয়েছে। আমার নিজের দেশ সুইডেনের ভালো ভালো পত্রিকাতেও দালাই লামার বিরুদ্ধে খবর প্রকাশিত হয়। এমনকি দালাই লামাকে শিশুদের উপর অত্যাচারকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিব্বতের সভ্যতা-সংস্কৃতি সম্পর্কেও সমালোচনা করা হয়। চীনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ তিব্বতিদের জন্য এসব আরো অপমানজনক ছিল।

তবে এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যগুলোর স্বচ্ছতা সম্পর্কে আমাদের আরো যত্নশীল হতে হবে। এ ঘটনায় গণতন্ত্রের উপর আস্থা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তাছাড়া পুরো ব্যাপারটি আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে মানুষের আজকাল ধর্ম এবং ধর্মীয় লোকজনদের প্রতিও আস্থা নেই।

দ্য ডিপ্লোমেট ডট কম হতে অনুবাদকৃত

Important Urgent

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন