ছবি-সংগৃহীত
জামা কেনা হোক বা ফোন, গাড়ি, বাড়ি কিংবা সামান্য মাসকাবারির চাল কেনা, সবেতেই হাজারো প্রশ্ন করি আমরা, ভালো হবে তো, ছেঁড়া বা খারাপ হবে না তো? ইত্যাদি প্রভৃতি। প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিতে ভুলি না দোকানদারকে, ‘খারাপ হলে কিন্তু ফেরত দিয়ে যাব’ বা 'বুঝে নেব।'
আর পাঁচ বছরের জন্য যখন সরকার নির্বাচন করি তখন কতবার ভাবি বা জিজ্ঞেস করি নিজেকে? আদৌ করি কি? অল্প কথায় জওয়ানের রিভিউ বললে এই প্রশ্নের উত্তরটুকু।
এবার আসা যাক বাকি বক্তব্যে। লম্বা বিরতি কাটিয়ে এ বছর ফের বড় পর্দায় ফেরার পর শাহরুখের দ্বিতীয় ছবি জওয়ান কেমন হল, কী নিয়েই বা হল এই ছবি নিয়ে যত কথা।
পাঠান ছবি নিয়ে অনেক বিতর্ক, অনেক কিছু হয়েছিল, আর জওয়ান যেন পুরো আউট অব সিলেবাস এসে প্রতি বলে ছক্কা হাঁকিয়েছে।
কৃষক আত্মহত্যা থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা বা সমাজের অধঃপতন সবটাই, বলা ভালো সমাজের, সরকারের প্রতিটা সমস্যাকে এই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। সরকার বড় বড় ব্যবসায়ীদের সাহায্য করলেও, তাঁদের ঋণ মাফ করলেও বা তাঁরা ঋণ নিয়ে বিদেশ পালিয়ে গেলেও কিচ্ছুটি করতে পারে না অনেক সময়।
এদিকে কৃষকদের সুদ দিতে দেরি হলে তাঁদের উপর ব্যাংক কর্মীরা অকথ্য অত্যাচার চালায়। কিন্তু এই চলতে থাকা অবক্ষয় আটকাবে কে? কেই বা প্রতিরোধ করবে অন্যায়ের? আর কীভাবে?
বহু ছোটবেলায় আমরা রবিন হুডের গল্প পড়ে এসেছি। সেটার আঙ্গিকেই এই ছবিতেও ভয় দেখিয়ে চলে অন্যায়কে আটকানোর প্রচেষ্টা। কিন্তু আদতে এই মুখোশধারী কে? কোথা থেকেই বা তাঁর এই ৬ সঙ্গীকে পেলেন? কী-ই বা তাঁদের ইতিহাস? সেটা বলে দিলে তো সিনেমা দেখতে যাওয়া অর্থহীন। এই উত্তর পেতে চাইলে হলে যেতেই হবে।
তবে এটুকু বলা যায় গোটা ছবি জুড়ে শাহরুখের বিভিন্ন শেড দেখতে পাবেন। সে কখনও জেলার, কখনও জওয়ান, কখনও সাধারণ মানুষ আবার কখনও...। এক কথায় বলতে গেলে পাঠানের থেকেও জওয়ান ছবিতে বেশি নজর কেড়েছেন শাহরুখ।
রুদ্ধশ্বাস পৌনে তিন ঘণ্টা। এই পৌনে তিন ঘণ্টায় পর্দা থেকে এতটুকু চোখ ফেরানো যায়নি। মাঝের পনের মিনিটের ব্রেক অসহ্য মনে হয়েছে। এতটাই টানটান স্ক্রিপ্ট। এমনই গল্পের বাঁধুনি।
এবার আসা যাক অভিনয়ে। শাহরুখকে নিয়ে নতুন করে কী-ই বা আর বলার আছে। তাঁর ফার্স্ট লুক থেকে শেষের নাচের দৃশ্য পর্যন্ত হাঁ করে তাকিয়ে থাকা যায়। এই বয়সে এসেও মানুষটা যাঁর সঙ্গেই স্ক্রিন ভাগ করুন না কেন তাঁর সঙ্গেই পর্দাতে আগুন ঝরান।
নয়নতারার সঙ্গে এই প্রথম স্ক্রিন ভাগ করলেন কিং খান কিন্তু ভীষণ ভালো লাগল তাঁদের জুটি। নয়নতারা আলাদা ভাবে তাঁর ক্যারিশমা এবং অভিনয়ে নজর কেড়েছেন। দীপিকার রোল ছোট, কিন্তু জরুরি। কী রোল, সেটা দেখলে রীতিমত ছিটকে যেতে পারেন। মানে এমন টুইস্ট অনেকেই ভাবেননি।
অন্যান্য চরিত্রে সানিয়া মালহোত্রা, সঞ্জিতা ভট্টাচার্য, গিরিজা ওক, প্রমুখ বেশ ভালো। বরং সবার তুলনায় খলনায়ক হিসেবে বিজয় সেতুপতি।
এই ছবির অন্যতম ইউএসপি এর মেকআপ এবং মারকাটারি অ্যাকশন দৃশ্য। ওহ মাই গড! একটার পর একটা অ্যাকশন দৃশ্য । অ্যাকশন, মেকআপ বা স্ক্রিপ্টের মতো দুর্দান্ত হল সিনেমাটোগ্রাফি।
প্রতিটা দৃশ্য এত নিখুঁত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে যা বাহবা পাওয়ার যোগ্য। প্রথমদিকে গোটা গায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে মারপিট হোক বা জওয়ান রূপে শাহরুখের অ্যাকশন দৃশ্য কিংবা চেজিং সিকোয়েন্স, সবটা মিলিয়ে একটা পাওয়ার প্যাক প্যাকেজ এই ছবি।
আরো পড়ুন: আবারো মমতাজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি
অনেকেই ভেবেছিলেন এই ছবির গান হয়তো আপ টু দ্য মার্ক নয়। হয়তো খানিকটা সত্যি, কিন্তু গোটা ছবির সঙ্গে গানগুলো কিন্তু খাপে খাপে মিলে গেছে। জোর করে ঢোকানো হয়েছে বা এমন কিছু কিন্তু বিন্দুমাত্র মনে হয়নি।
সবশেষে রিভিউ বলুন বা শাহরুখের ছবির সংলাপের রেশ, সবটা ধরেই 'ইটস এ ওয়েক আপ কল। ও ধমকি দে কর নিন্দ সে জাগা রহে হে।'
তাই হাতের যা কাজ আছে সব ফেলে শাহরুখ ম্যাজিকে ভিজতে চাইলে এই উইকেন্ডে জওয়ানের একটা শো হয়ে যাক? এটুকু বলা যায় বিনোদন তো পাবেনই, সঙ্গে শিখবেন আরও অনেক বেশি কিছু। আমাদের মনের সুপ্ত রাগ, কথা ছবির সংলাপ হয়ে বেরিয়ে আসবে কোথাও একটা।
এসি/ আই.কে.জে