ছবি: সংগৃহীত
আমেরিকার নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বাজে স্লোগান দেন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ধারণা করা হচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে এবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি সংক্ষিপ্ত পোস্ট দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের কট্টর সমর্থক ও ডানপন্থী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘প্রফেসর ইউনূস এভাবেই সবাইকে একা ফেলে চলে যাবেন। লিখে রাখতে পারেন।’ তার পোস্ট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানামুখী আলোচনা চলছে। এই পোস্টে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, এর চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন নেটিজেনরা।
কেউ কেউ বলছেন, অন্যদের বিপদের মুখে রেখে একটা সময় সরকারপ্রধান ড. ইউনূস বিদেশে চলে যেতে পারেন, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন পিনাকী। তবে কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই পোস্ট, তা উল্লেখ করেননি পিনাকী। আজ মঙ্গলবার (২৩শে সেপ্টেম্বর) রাত ৯টা পর্যন্ত চার ঘণ্টায় তার ফেসবুক পোস্টে লাইক পড়েছে তেতাল্লিশ হাজারের বেশি, মন্তব্য এসেছে পাঁচ হাজারের বেশি। এ সময়ের মধ্যে পোস্টটি শেয়ার করেন দুই হাজারের বেশি জন।
নিউইয়র্কে পৌঁছে ফ্লাইট থেকে নেমে বিমানবন্দর থেকে ড. ইউনূস সরকারপ্রধান হিসেবে বিশেষ নিরাপত্তায় বেরিয়ে যান। কিন্তু তার সফরসঙ্গী বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতারা সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে বের হওয়ার সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভের মধ্যে পড়েন। তাদের ঘিরে নানা স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি গালিগালাজ করা হয়। এনসিপির আখতার হোসেনের গায়ে ডিমও ছোড়া হয়। নেটিজেনদের ধারণা, এ ঘটনাকে ঘিরেই পিনাকী ভট্টাচার্য ওই পোস্ট দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হয়ে নিউইয়র্কে গেছেন তিনটি রাজনৈতিক দলের পাঁচজন নেতা।
তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারা।
আখতার হোসনের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনায় একজনকে আটক করেছে নিউইয়র্ক পুলিশ। জানা গেছে, আটক ব্যক্তির নাম মিজানুর রহমান। তিনি যুবলীগকর্মী বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র। তার বিরুদ্ধে বিএনপির কর্মীকে ছুরি দিয়ে 'হত্যাচেষ্টার' অভিযোগ রয়েছে।
২২শে সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ স্ট্রিট থেকে পুলিশ মিজানুরকে আটক করে। আগামীকাল বুধবার তাকে আদালতে নেওয়া হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র সুখবর ডটকমকে জানায়, নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও এনসিপির নেতাদের ওপর হামলার পর ড. ইউনূস ও সফরসঙ্গীদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের ওপর উদ্দেশ্যমূলক হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক নেতাদের সফরের সময় সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিক সতর্কতামূলক নিরাপত্তাব্যবস্থা সমন্বয় করেছিল। জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর প্রতিনিধিদলটিকে প্রথমে একটি নির্দিষ্ট ভিভিআইপি গেট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং একটি বিশেষভাবে সুরক্ষিত পরিবহন ইউনিটে ওঠানো হয়েছিল। তবে, অপ্রত্যাশিত এবং শেষ মুহূর্তের ভিসা-সম্পর্কিত জটিলতার কারণে প্রতিনিধিদলটিকে পথ পরিবর্তন করে বিকল্প পথে অগ্রসর হতে হয়।
বিমানবন্দরে রাজনৈতিক নেতাদের জন্য ভিভিআইপি প্রবেশাধিকার এবং নিরাপত্তা সুবিধা দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা সত্ত্বেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ দুঃখজনকভাবে সেই অনুরোধ রাখেনি। এর ফলে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ঝুঁকির মুখে পড়েন।
ঘটনার পরপরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে দ্রুত এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে যে, এরই মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বর্তমানে ঘটনাটির আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলমান।
এ ঘটনার পর প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রতিনিধিদলের সব সদস্যের নিরাপত্তাব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদেশে তার প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য আমেরিকার ফেডারেল এবং স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সার্বক্ষণিক ঘনিষ্ঠ এবং অবিচ্ছিন্ন সমন্বয় রেখে যাচ্ছে।
এদিকে, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সহিংসতা সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও পৌঁছে গেছে অনেক আগেই। যে–ই বিরোধী পক্ষে থাকে, সে–ই প্রবাসে চেষ্টা করেছে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে ও ক্ষমতায় থাকা মানুষদের প্রবাসে হেনস্তা করতে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়, আমেরিকা, ব্রিটেন ও ইউরোপসহ সবখানেই আওয়ামী লীগের (দেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সমর্থক দাবি করে এমন কিছু মানুষের সহিংস আচরণ।
সাম্প্রতিকতম ঘটনা হলো আমেরিকার নিউইয়র্কে জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়ার ঘটনা। সূত্র নিশ্চিত করে যে, এই হামলার সঙ্গে প্রবাসী আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাই জড়িত ছিলেন।
বিদেশে অবস্থানরত লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করে দেশে একটি ওষুধ কোম্পানি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কয়েক বছর ধরে তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। পিনাকী ভট্টাচার্য নানা বিষয়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে থাকেন। তিনি জামায়াত, হেফাজতের সমর্থক হিসেবে আলোচিত-সমালোচিত।
খবরটি শেয়ার করুন