ছবি: সংগৃহীত
সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের এক বক্তব্যের সূত্র ধরে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক আলোচনায় আসছে প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী খুশী কবিরের নাম। নেটিজেনরা বলছেন, বার্গম্যানের নাগরিক সমাজের তালিকায় অবশ্যই আছেন মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির। আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ও দলটির সরকারের সরকারের আমলে সুবিধা নেওয়া কয়েক সাংবাদিককে বর্তমান সরকার 'তথ্যপ্রমাণ ছাড়া মামলায়' কারাগারে রাখার অভিযোগ ডেভিড বার্গম্যানের। এ বিষয়ে নাগরিক সমাজ 'নীরব' থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে বার্গম্যানের বক্তব্যে।
আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার দায়ে ওই সময়ে বাংলাদেশে বসবাসরত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বিশিষ্ট এ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল অবমাননার বিচারের রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের ৫০ জন নাগরিক বিবৃতি দেন। ২০১৪ সালের ১৯শে ডিসেম্বর দেওয়া ওই বিবৃতি থেকে পরদিন ২০শে ডিসেম্বর নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন প্রগতিশীল নারী ব্যক্তিত্ব খুশী কবির। তখন অভিযোগ ওঠে, আওয়ামী লীগের সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে বিবৃতি থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন তিনি।
সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে কোনো কোনো নেটিজেন ডেভিড বার্গম্যানের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বলছেন, খুশী কবির বিগত শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছেন। নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গেও তিনি সম্পর্ক রাখতে চাচ্ছেন। ফলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের, মাসের পর মাস ধরে ১৩ সাংবাদিককে কারাবন্দী করে রাখা, সচিবালয়ের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল ও তাদের চাকরিচ্যুতি প্রসঙ্গে খুশী কবিরের মতো নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনও চুপ হয়ে আছেন।
তারা বলছেন, ডেভিড বার্গম্যানের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে সেদিন ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়তে চাননি খুশী কবির। কিন্তু, আওয়ামী লীগপন্থী যেসব সাংবাদিক একসময় ডেভিড বার্গম্যানের সমালোচনা করতেন, তাকে আক্রমণ করতেন, তিনি আজ তাদের পক্ষেই সোচ্চার। অবশ্য কারাবন্দী কোনো কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গত সরকার থেকে অনৈতিক নানা সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ আছে। ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা ও গঠনমূলক সমালোচনা করাই প্রকৃত সাংবাদিকতা। ডেভিড সেটাই করেছেন। ক্ষমতার সঙ্গে আপস করা সুবিধাবাদীদের কাজ। দেশের নাগরিক সমাজের অনেকেই তা করছেন। তারা বিগত সরকারের আমলেও একই কাজ করেছেন।
অনেকে এমনও বলছেন, খুশী কবির এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করতে চাইলেও কোনো মাধ্যম নেই। গত বছরের ৫ই আগস্টের পর থেকে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো বদলে গেছে। খুশী কবিরের বক্তব্য এসব সংবাদমাধ্যমের কাছে অপাংক্তেয়। তার বক্তব্য তারা ছাপবে না, প্রচারও করবে না। তাছাড়া আছে মবোক্রেসির ভয় ও আতঙ্ক। হয়তো এসব কারণে খুশী কবিররা চুপ করে আছেন। এ বিষয়ে একাধিক উপায়ে চেষ্টা করেও সুখবর ডটকম খুশী কবিরের বক্তব্য জানতে পারেনি।
গত ৫ই জুন জুন দৈনিক প্রথম আলোতে ডেভিড বার্গম্যানের একটি কলাম ছাপা হয় 'প্রমাণ ছাড়া এসব গ্রেপ্তার থামাতেই হবে' শিরোনামে। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের সময় সহিংসতার অভিযোগে আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত অনেকে, বিশেষ করে সাংবাদিকরা দীর্ঘদিন ধরে প্রমাণ ছাড়া কারাগারে আটক রয়েছেন। এ ধরনের আটক ও জামিন না পাওয়ায় বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও সরকারের সংস্কার প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ বিষয়েই লেখেন তিনি।
এতে ডেভিড বার্গম্যান বলেন, 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব অনিয়ম নিয়ে নাগরিক সমাজ ও মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো অস্বস্তিকর রকম নীরব।' লেখাটিতে খুশী কবিরের নাম তিনি উল্লেখ করেননি। তবে প্রথম আলোতে প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই সেটিকে শেয়ার করে অনেক নেটিজেন ২০১৪ সালে খুশী কবিরের বিবৃতি থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার আলোচিত ঘটনাটির কথা উল্লেখ করছেন। মূলত ডেভিড বার্গম্যানের এ লেখার সূত্র ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুশী কবিরের নাম আসছে নেটিজেনদের আলোচনা-সমালোচনায়।
তথ্যমতে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করলে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে ২০১৪ সালের ২রা ডিসেম্বর কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ওই দিন আদালতের কার্যক্রম চলাকালীন তিনি কারাদণ্ড হিসেবে এজলাসে এ সাজা ভোগ করেন। একই সঙ্গে বার্গম্যানকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে সাত দিনের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
সেদিন দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এ আদেশের কয়েক মিনিটের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শেষ হয়। বার্গম্যান তখন ঢাকা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এর বিশেষ প্রতিবেদনের সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে দেশের ৫০ বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দেন। পরদিন খুশী কবির বিবৃতি থেকে তার নাম প্রত্যাহার করেন। ২০১৫ সালের ১৪ই জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে বাকি ৪৯ জন বিবৃতিদাতার কাছে তাদের বিবৃতির বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চান। বিবৃতিদাতা ৪৯ জনের মধ্যে ১৪ জনকে ক্ষমা করে দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন