ছবি: সংগৃহীত
প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব বাবা দিবস। সেই হিসাবে এ বছর আজ রোববার, ১৫ই জুন বিশ্ব বাবা দিবস। বাবাদের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান, কৃতজ্ঞতা ও আবেগ প্রকাশে বিশ্বের প্রায় ১১১টি দেশে দিবসটি উদযাপন করা হয়। তবে একই দিনে সব জায়গায় বাবা দিবস উদযাপন হয় না। অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে উদযাপন হলেও বাবা দিবসের গুরুত্ব একই রকম তাৎপর্যপূর্ণ।
পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশেও জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস উদযাপন হয়। সাধারণত বাবার সঙ্গে সন্তান শুভেচ্ছা বিনিময়, উপহার আদান-প্রদান ও বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করে।
মা দিবসের পরিপূরক হিসেবে বিশ শতকের গোড়ার দিকে আমেরিকায় পিতৃত্ব উদযাপনে 'ফাদার্স ডে'র প্রচলন। এর নেপথ্যে রয়েছে সনোরা স্মার্ট ডোড নামের এক নারীর অবদান। আরকানসাসে জন্ম নেওয়া সনোরা ১৯১০ সালে ওয়াইএমসিএ-তে ওয়াশিংটনের স্পোকানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফাদার্স ডে।
১৯১০ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে দিনটির প্রথম উদ্যাপন হয়। সনোরা খুব অল্প বয়সে মাকে হারান। তার বিপত্নীক বাবা গৃহযুদ্ধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সৈনিক উইলিয়াম জ্যাকসন স্মার্ট, তার ছয় সন্তানকে একাই বড় করেন।
১৯০৯ সালে সেন্ট্রাল মেথোডিস্ট এপিসকোপাল চার্চে আন্না জার্ভিসের ‘মা দিবস’ সম্পর্কে একটি ধর্মীয় ভাষণ শোনার পর সনোরা উৎসাহিত হন এবং তার যাজকের কাছে যান। যাজকদের কাছে তিনি আবেদন করেন যে, পিতাদের প্রতি সম্মান জানাতে একই রকম একটা ছুটি থাকা উচিত।
যদিও সোনোরা ৫ই জুন তার বাবার জন্মদিনকে ফাদার্স ডে হিসেবে উদযাপন করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন, কিন্তু এ সম্পর্কিত ধর্মীয় ভাষণ প্রস্তুত করার পর্যাপ্ত সময় ছিল না বলে যাজকরা আয়োজনটি জুনের তৃতীয় রোববারে পিছিয়ে দেন। সনোরা ও তার সঙ্গীরা ফাদার্স ডে-র সরকারি স্বীকৃতির জন্য দশকের পর দশক প্রচার চালিয়ে যান।
১৯২০-এর দশকে সনোরা শিকাগোর আর্ট ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করার কারণে ফাদার্স ডে উদযাপনের প্রচারটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলে স্পোকানে প্রাথমিকভাবে এর তেমন সফলতা আসেনি। ১৯৩০-এর দশকে সনোরা স্পোকানে ফিরে আসেন এবং জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে আবারও প্রচার শুরু করেন।
১৯৩৪ সালে নিউইয়র্ক অ্যাসোসিয়েটেড মেনস অ্যাওয়্যার রিটেইলারদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ফাদার্স ডে কাউন্সিলের সহায়তা পান সনোরা। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফাদার্স কাউন্সিলে লেখা হয়, ফাদার্স ডে সব পুরুষের জন্য উপহার-ভিত্তিক দ্বিতীয় ক্রিসমাসে পরিণত হয়েছে।
১৯১৩ সালে কংগ্রেসে ফাদার্স ডে'কে জাতীয় স্বীকৃতি দেওয়ার একটি বিল প্রবর্তিত হয়। ১৯১৬ সালে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন ফাদার্স ডে উদযাপনে স্পোকানে গিয়ে একে আনুষ্ঠানিক করতে চেয়েও ব্যর্থ হন। ১৯২৪ সালে তৎকালীন আমেরিকান রাষ্ট্রপতি ক্যালভিন কুলিজ জাতীয় পর্যায়ে ফাদার্স ডে পালনের পরামর্শ দেন।
বাবারা হন ভিন্ন রকমের এক মানুষ। তারা মায়ের মতো মমতার বহিঃপ্রকাশ করতে পারেন না। তারা উপরে কঠোর, ভেতরে ঠিক শিশুর মতো নরম। ভালোবাসেন অনেক বেশি, কিন্তু প্রকাশ করেন কম। যিনি শুধু অগাধ স্নেহ-ভালোবাসা নীরবেই প্রমাণ করে যান, তিনিই বাবা। আজকের দিনে বিশ্বের সব বাবাকে অভিবাদন। শুভেচ্ছা। বিনম্র শ্রদ্ধা।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন