রবিবার, ৩রা আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৯শে শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলবে ঐকমত্য কমিশন *** তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক: তারেক রহমান *** গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে হামলাকারীদের উসকানি, স্থানীয় সাংবাদিক গ্রেপ্তার *** যাত্রীর লাগেজটি নড়ছিল, খুলতেই ভেতরে ২ বছরের শিশু *** তারেক রহমান আসবেন, আমাদের নেতৃত্ব দেবেন, পথ দেখাবেন: মির্জা ফখরুল *** ১৮ তলা থেকে পড়ে বেঁচে গেল তিন বছরের শিশু *** ট্রাম্পের হুমকিতেও রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখবে ভারত *** নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদ উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা *** এলপিজি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম কমল ৯১ টাকা *** নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণে বিএনপির কমিটি

বিমসটেক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৩:৪৯ অপরাহ্ন, ৫ই এপ্রিল ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত হয় (২রা-৪ঠা এপ্রিল) বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলন। বিমসটেককে বলা হয় সার্ক ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধের জোট। ‘বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন’ বা বিমসটেক নামক আঞ্চলিক জোট। বাংলাদেশ এ জোটের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য।

১৯৯৭ সালের ৬ই জুন ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের’ (বিমসটেক) যাত্রা। ২০১৪ সালে ঢাকায় বিমসটেকের সচিবালয় চালু করা হয়।

১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ জোটের শীর্ষ সম্মেলনের পর বাংলাদেশ একাধিকবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পায়। থাইল্যান্ড ২০২২ সালের মার্চ থেকে এ দায়িত্বে রয়েছে। বাংলাদেশ এর আগে ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ এবং ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে এ দায়িত্ব পালন করে।

বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে একটি নতুন আন্তঃআঞ্চলিক জোট সৃষ্টি করা হয় এবং সভায় অংশগ্রহণকারী মূল আলোচকদের দেশের নামের আদ্যক্ষর অনুযায়ী এ জোটের নাম দেওয়া হয়- BIST-EC (Bangladesh, India, Sri Lanka & Thailand Economic Co-operation. 

মিয়ানমার প্রথম সভায় পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশ নেয়। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের ২২শে ডিসেম্বর প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মিয়ানমারকে পূর্ণ সদস্য হিসেব গ্রহণ করা হয়। মিয়ানমারের সদস্য হিসেবে যোগ দেওয়ার পর সংগঠনের নামটি কিছুটা পরিবর্তন করে BIMST-EC করা হয়। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিতীয় বৈঠকে নেপালকে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে নেপাল ও ভূটানকে সংগঠনটির পূর্ণ সদস্যের পদ দেওয়া হয়।

২০০৪ সালের ৩১শে জুলাই সংগঠনের প্রথম আনুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলনে নেতারা এর নাম পরিবর্তনের পক্ষে মত দেন এবং সংগঠনটির পরিবর্তিত নামটি দাঁড়ায়- BIMSTEC বা ‘Bay of Bengal Initiative for Multi-Sectoral Technical & Economic Cooperation.’ 

বিমসটেক সভাপতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলোর নামের আদ্যক্ষরের অগ্রক্রম নীতি অনুসরণ করে। তাই  বিমসটেকের সভাপতিত্ব পর্যায়ক্রমিকভাবে শুরু হয় বাংলাদেশকে দিয়ে (১৯৯৭–১৯৯৯, ২০০৫–২০০৬)। এরপর যথাক্রমে ভারত (২০০০, ২০০৬–২০০৮), মিয়ানমার (২০০১–২০০২, ২০০৯–২০১৪), শ্রীলঙ্কা (২০০২–২০০৩, ২০১৮–২০২২), থাইল্যান্ড (২০০৪–২০০৫, ২০২২–২০২৪) এবং নেপাল (২০১৫–২০১৮)।

পর্যায়ক্রমিক প্রথা অনুযায়ী ২০২৫ সালের থাইল্যান্ডের সভা শেষে আগামী দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ আবারও সভাপতিত্বের দায়িত্ব পেয়েছে।

বিমসটেকের ১৪টি সহযোগিতার ক্ষেত্র রয়েছে। এগুলো হলো- বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, জ্বালানি, জলবায়ু, পরিবহন ও যোগাযোগ, পর্যটন, মৎস্য, কৃষি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জনস্বাস্থ্য, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সন্ত্রাসবাদ দমন ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ। 

বিমসটেকের সহযোগিতার ক্ষেত্র সদস্য দেশগুলোর জন্য অত্যন্ত লাভজনক ও সময়োপযোগী। এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মুক্তবাজার এলাকা চুক্তি এফটিএ-সংক্রান্ত বিমসটেক ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি বাস্তবায়নের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর এবং পরিবহন সংযোগ সম্পর্কিত বিমসটেক মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় মিয়ানমারকে সম্পৃক্ত করার জন্য বিমসটেককে আরও দৃশ্যমান ও সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়, যাতে জোর করে বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের তাদের ভূমিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়।

এবারের সম্মেলনে সবচেয়ে বড় আকর্ষণের বিষয় ছিল, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ  ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক। অনেক জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে শুক্রবার (৪ঠা এপ্রিল) দুই নেতা একসঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন।

বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর  সরকারপ্রধানরা সর্বসম্মতিক্রমে ব্যাংকক ঘোষণাপত্র এবং বিমসটেক ব্যাংকক ভিশন গ্রহণ করেছেন, যা একটি কৌশলগত রোডম্যাপ। এটি সংগঠনটিকে টেকসই উন্নয়ন ও গভীর অর্থনৈতিক একত্রীকরণের দিকে পরিচালিত করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

এইচ.এস/


বিমসটেক

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন