ছবি: সংগৃহীত
কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। যত্ন ছাড়াই আমাদের দেশের যুগের পর যুগ ফলছে কাঁঠাল। পুষ্টিগুনেও অনেক বেশি শক্তিশালি ফল কাঁঠাল। আমাদের দেশের কাঁঠাল পাকে জৈষ্ঠ মাসে। অন্য সময়ে খুব বেশি কাঁঠাল ফলেনা। আবার আঠার কারণে অনেকেই কাঠাল খেতে চান না। কিন্তু সম্প্রতি দেশে শুরু হয়েছে ১২ মাসি আঠাবিহীন কাঁঠালের চাষ। শুরুতে ভিয়েত নামি জাতের এই কাঁঠাল চাষ হলেও বর্তমানে আমাদের কৃষি বিভাগও এই আঠাবিহীন ১২ মাসি কাঁঠাল উদ্ভাবন করেছে। সারাদেশেই এখন চাষে হচ্ছে এই ১২ মাসি কাঁঠাল।
আঠাবিহীন কাঁঠাল আবাদ করে সাড়া ফেলেছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটী ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের যুবক মাহমুদুল হাসান সবুজ । কম খরচে বেশি ফলন পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তিনি। এমন সাফল্য দেখে স্থানীয় অনেক চাষি এই জাতের কাঁঠাল আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
জানা গেছে, ইউটিউবে ভিডিও দেখে আঠা ছাড়া কাঁঠাল আবাদে উদ্বুদ্ধ হন সবুজ। কিন্তু কোথাও চারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না । এ অবস্থায় এক বন্ধুর সহায়তায় প্রায় এক বছর আগে ভারত থেকে চারা আনেন তিনি । পরে বাড়ির চারপাশে নানান ধরনের ফলদ গাছের ফাঁকে ফাঁকে ২৫টি চারা রোপণ করেন। এর মধ্যে একটিও মরেনি। সব গাছ বড় হয়েছে। সেগুলোতে এখন ফল ধরেছে।
রোপণের তিন মাসের মাথায় গাছে ফলন এসেছে বলে জানিয়েছেন মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘এটি মূলত ভিয়েতনামের আঠাবিহীন কাঁঠালের জাত। বারো মাস ফল দেয়। এরইমধ্যে দুবার ফল দিয়েছে। ভেতরের কোষগুলো রসালো এবং খুব মিষ্টি। তবে কোনও আঠা নেই। দুই মাস আগে আরও ২০টি গাছ লাগিয়েছি। এর মধ্যে একটি মারা গেছে। বাকি ১৯টি বড় হয়েছে। আশা করছি ৪৪টি গাছে ফল ধরলে বিক্রি করতে পারবো।’
আঠাবিহীন কাঁঠাল চাষ দেখে অনেকে উৎসাহিত হয়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিচ্ছেন। বাগান দেখতে প্রতিদিন তার বাড়িতে ভিড় করছেন আশপাশের মানুষজন। নিচ্ছেন পরামর্শ। নিতে চাচ্ছেন চারা।
হাজি ছোট কলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও মুলাইদ গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এক বছর ধরে আঠাবিহীন বারোমাসি কাঁঠালের গাছগুলো পরিচর্যা করে আসছেন প্রতিবেশী সবুজ। এখন গাছে গাছে কাঁঠাল। কিছু ছোট অবস্থায় ঝরে পড়ে। দেখে বোঝা যাচ্ছে ফলন ভালো হয়েছে। আমাদের বাড়িতে বাপদাদার আমলে রোপণকৃত কাঁঠাল গাছগুলো এখন প্রায় ধ্বংসের পথে। সবুজের বাগান দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই জাতের গাছ রোপণ করবো। এজন্য বাগান দেখতে এসেছি। তার পরামর্শ নিচ্ছি।’
আরও পড়ুন: পুকুরে মাছ ও ভাসমান লাউ চাষ, বাড়তি আয়ের স্বপ্নে মেহেদী
নয়নপুর এলাকার বাসিন্দা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী আতাউর রহমান সোহেল বলেন, ‘গাজীপুর কাঁঠালের জন্য পরিচিত। তবে মৌসুম ছাড়া পাওয়া যায় না। সবুজ বারোমাসি আঠাবিহীন কাঁঠাল গাছ রোপণ করে সফলতা পেয়েছেন। আমাদের এলাকায় দ্রুত শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় দেশি কাঁঠালের গাছ কমে যাচ্ছে। এই থেকে উত্তরণের জন্য আমরা বারোমাসি আঠাবিহীন কাঁঠাল চাষ করে সমৃদ্ধ হতে পারবো।’
এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশীয় জাতের কাঁঠালে প্রচুর আঠা থাকে। বছরে একবার ফলন দেয়। কিন্তু নতুন জাতের আঠাবিহীন কাঁঠালটি বারোমাস ফল দেয়। কৃষকরাও এটি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আমরাও তাদের পরামর্শ দিচ্ছি।’
বারি কাঁঠাল-৬ নামে আঠাবিহীন একটি জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কাঁঠাল গবেষক ড. মো. জিল্লুর রহমান। তিনি দেশে কাঁঠাল চাষ সম্প্রসারণে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিভিন্ন অমৌসুমি জাতের কাঁঠালের জাত সংগ্রহ করে জাতটি উদ্ভাবন করে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই জাতের চারা রোপণের দেড় বছরেই ফল পাওয়া যাবে। বছরের বারো মাসই ধরবে। থাকবে না আঠা।
এসি/কেবি