রবিবার, ২২শে জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** ইরানের বুশেহর শহরে হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে ‘ফুকুশিমা’ ঘটতে পারে *** র‍্যাপিডের আলোচনায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা: কালোটাকা তুলে দেওয়া হোক, অসুবিধা কী *** নতুন দল নিবন্ধনে আবেদনের সময় শেষ হচ্ছে আজ *** ধর্মীয় তিন নেতাকে উত্তরসূরি নির্ধারণ করেছেন আয়াতুল্লাহ খামেনি *** ইউআইইউ'র শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার *** ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁর ফোনালাপ *** আলটিমেটাম দিয়ে ৯ ঘণ্টা পর সড়ক ছাড়লেন ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা *** সরকার ভালো কাজ করছে, আমাদের পথ দেখাচ্ছে: মির্জা ফখরুল *** দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে ইরান *** প্রেম ও দ্রোহের আধুনিক কবি নির্মলেন্দু গুণ

শফিকুল আলম, এটাই কী নতুন বাংলাদেশ!

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৮:৫৭ অপরাহ্ন, ২১শে জুন ২০২৫

#

মুজতবা খন্দকার। ছবি: সংগৃহীত

মুজতবা খন্দকার

কিছুদিন আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবকে (শফিকুল আলম)) ঘটা করে বলতে শুনেছিলাম, গত দশ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে কোনো গুম, খুন হয়নি। ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেনি। এটা নতুন বাংলাদেশের বড় অগ্রগতি। শফিকুল আলম সেদিন কথাটা বলার আগে হয়তো নিজেকে আপডেটেড করে আসেননি বিধায় তিনি জানেন না যে, গত মার্চ মাসে বরিশালে একজনের ক্রসফায়ারে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। 

গণমাধ্যমে ফলাও করে সেটার প্রচার হয়েছিল। তবু সেদিন শফিকুল আলমকে মনে মনে ধন্যবাদ  জানিয়েছিলাম এটা মনে করে যে, শেখ হাসিনার (গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত) আমলে গুম, খুন যেখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল, সে তুলনায় ইনটেরিমের (অন্তর্বর্তী সরকার) দশ মাসে শুধু একজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু সত্যিই বড় অগ্রগতি। আশাবাদী হতে চেষ্টা করেছিলাম এই ভেবে যে, আমরা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে হয়তো একটা মানবিক বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। 

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের সেই ব্রিফিংয়ের পর পনেরো দিনও বোধ করি চলে যায়নি, এরপর শুনলাম আরো একজনের হেফাজতে মৃত্যুর খবর। ঘটনাটি কুমিল্লার। বহুল আলোচিত ছাত্র উপদেষ্টা সজিব ভূঁইয়ার (আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) নির্বাচনী এলাকায়। বিএনপির এক নেতাকে থানা হেফাজতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে যথারীতি হাসিনা জমানার পুলিশের মতো গল্প ফাঁদা হয়েছে। 

পুলিশ বলেছে, হঠাৎ বুকে ব্যথা ওঠে লোকটির। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তির পর তিনি মারা যান। অথচ আমার কুমিল্লা প্রতিনিধির (এনটিভি) তথ্য হচ্ছে, হেফাজতে মারা যাওয়া ব্যক্তি ছিলেন ডিশ ব্যবসায়ী। পুলিশ সকালে তাকে তুলে নেয়। খবর পেয়ে ভিকটিমের স্ত্রী থানায় গিয়ে তাকে কেন ধরে আনা হয়েছে, সেটা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে দেনদরবারে ব্যর্থ হয়ে বাসায় ফেরার পথেই শুনতে পান, হাসপাতালে তার স্বামীর মৃত্যুর খবর। এখন জনাব শফিককে (প্রেস সচিব) বলতে ইচ্ছে করে, এটাই কী আপনার নতুন বাংলাদেশ!

সরকার যায়, সরকার আসে। কিন্তু ল' ইনফোর্সমেন্ট এজেন্সির চরিত্র একই থাকে। গত বছর ৫ই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান আমাদের পরিবর্তনের একটা বড় সুযোগ করে দিয়েছিল, রাজনৈতিক দলগুলো ইচ্ছাকৃত হোক, কিংবা জনগণের কথা ভেবে হোক, নিজেদের অনেকটা শুধরে নিলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারের মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন আমরা দেখি না। ইনটেরিমের রাষ্ট্রীয় মেকানিজম, মেশিনারিজগুলো ধীরে ধীরে হাসিনা জমানার দিকেই হেলে পড়ছে।

এই কয়েক মাসে রাষ্ট্রের খোলনলচে না হলেও ব্যাপক পরিবর্তনের আশা করেছিল জনগণ। প্রথম দিকে সরকারের নীতিও এমন ছিল। খোদ সরকার থেকে বলা হয়েছিল, হাসিনার আমলে ইসরায়েল থেকে আনা আড়িপাতার যন্ত্র প্যাগাসাসকে নিস্ক্রিয় করা হবে। কারো ব্যক্তিগত কথোপকথনে আড়িপাতা হবে না। পুলিশ মানবিক হবে। মাফিয়া-ম্যান জিয়াউল আহসানের একচ্ছত্র রাজত্বের এনটিএমসি বিলুপ্ত করা হবে। র‌্যাব ভেঙে দেওয়া হবে। সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীকে  ভিন্নমত দমনে আর ব্যবহার করা হবে না। আরো কত গল্প, কত প্রতিশ্রুতি! কিন্তু ইনটেরিমের দশমাস পর এসে আমরা কী দেখছি! এসবের কোনো একটা কি বিলুপ্ত হয়েছে? হয়নি।

পুলিশ, র‌্যাবে নিয়োগ-বদলিতে যোগ্যতা, তার প্রিভিয়াস কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। খবর আমাদের কাছেও কম-বেশি আসে, যেহেতু আমরা সংবাদকর্মী। শুনতে পাই, পুলিশসহ সব বাহিনীতে তদবির বাণিজ্য, পদায়নে হাসিনার আমলের মতো দশ কোটি, বিশ কোটি টাকার লেনদেন এখনও চলছে। তবে এখনো কোনো 'মিস্টার টেন পার্সেন্ট' অথবা  হাসিনার এক সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের (১৯৯৬ সালে গঠিত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন প্রয়াত নাসিম) স্ত্রীর মতো 'টেন পার্সেন্ট লেডি'র নাম শোনা যায়নি।

তাহলে ইনটেরিম যে পরিবর্তন, সংস্কার নিয়ে প্রতিদিন জাবর কাটছে, সেটা কোথায়? রাষ্ট্র সংস্কার মানে কী কে কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন আর পারবেন না, সংবিধানের সত্তর অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে কি হবে না, নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন হবে কী হবে না, শুধু এসব?

আমাকে এই ইনটেরিম গত দশমাসে কোনো কাজেই আশাবাদী করতে পারছে না। বরং আমি দেখছি, একটি সরকার দানব হয়ে ওঠার জন্য যেসব মেশিনারিজকে ব্যবহার করে, অধ্যাপক ড. ইউনূসের ইনটেরিম তাদের পক্ষেই সাফাই গাইছে। তার মানে কি যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ? আমার বাংলাদেশে যে যায় ক্ষমতায়, সেই হোন হাসিনা? এটাই কি জাতির বিধিলিপি? তাহলে ৫ই থেকে আমরা কি শিক্ষাটা পেলাম? আমি আর  ভাবতে চাই না।

লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

মুজতবা খন্দকার

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন