মঙ্গলবার, ২৪শে জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১০ই আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারত কি বিএনপির বিষয়ে অবস্থান পাল্টাচ্ছে?

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৩:৫২ অপরাহ্ন, ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের ‘মিত্র রাজনৈতিক দল’ আওয়ামী লীগ এখন দৃশ্যপটের বাইরে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগের কারণে শিগগিরই ক্ষমতার রাজনীতিতে দলটি ফিরতে পারবে না বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্ব নেমেছে কট্টর আওয়ামী লীগ বিরোধিতায়। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ ভারত বিএনপি সম্পর্কে ‘প্রায় দেড় দশকের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাচ্ছে’ বলে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

তারা বলছেন, সময় গড়ানোর সঙ্গে ও বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা ভারত এখন বাস্তবতা মেনে নিচ্ছে। আগামী দিনে বিএনপি দেশের ক্ষমতায় আসছে ধরে নিয়ে দলটিকে আস্থায় নেওয়ার চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি। আগামীতে বিএনপির কাঁধে ভর করেই ঢাকায় স্বস্তি খুঁজতে চাইছে নয়াদিল্লির সাউথ ব্লক।

আমেরিকায় নিযুক্ত সাবেক এক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রসঙ্গে ২৫শে ফেব্রুয়ারি সুখবর ডটকমকে বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের সবচেয়ে চিন্তার কারণ পাকিস্তান, চীন ও ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো। ঢাকার ক্ষমতায় নয়াদিল্লি ইসলামপন্থী দলগুলোকে দেখতে যেমন অনাগ্রহী, তেমনই এই দেশে চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব বিস্তারও ঠেকিয়ে রাখতে চাচ্ছে। সেজন্য নয়াদিল্লির আপাতত ভরসা বিএনপির প্রতি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি বলে ভারত মনে করছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র সুখবরকে জানায়, বিএনপির নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ-বিরোধী দেশের আটটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ২৪শে ফেব্রুয়ারি চীন সফরে গেছেন। বিষয়টিতে গভীর নজর রাখছে নয়াদিল্লি। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর প্রতিনিধিদের সে দেশ সফরের বিষয়টিকে ভারত দেখছে বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা হিসেবে। চীনের বদলে বাংলাদেশে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে ভারত এখন বিএনপিকে তাদের পাশে চাচ্ছে।

বিএনপিও মনে করছে, ভারতের মতো বৃহৎ প্রতিবেশীর সঙ্গে বৈরিতা রেখে ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হবে। সম্পর্ক ভালো না থাকলে কাজ ফেলে প্রতিবেশী মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকতে হবে। এজন্য ভারতের সঙ্গে দর কষাকষির মনোভাবে রয়েছে বিএনপি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। পরে বিএনপি মহাসচিব জানান, ‘ভারতের হাইকমিশনার বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে চায়।’

ভারত যখন কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী, এমন অবস্থায় বিএনপি ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ শিরোনামে দুইদিনের কর্মসূচি পালন করে। কেউ কেউ এটাকে ‘ভারতবিরোধী কর্মসূচি’ বললেও বিষয়টিকে বিএনপির ‘রাজনৈতিক কৌশল’ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মজিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচির মাধ্যমে একই সঙ্গে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিএনপি সরকার ও জনগণকে বার্তা দিয়েছে। আন্দোলনকারী ছাত্ররাসহ দেশে সক্রিয় প্রায় সব দলই ভারতবিরোধী হিসেবে পরিচিত। এ কর্মসূচির মাধ্যমে তার নেতৃত্বটি বিএনপি নিতে চাইছে, যাতে অন্য কোনো দল ও সংগঠন বিষয়টি নিয়ে সুবিধা করতে না পারে।’

গত বছরের ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের ঠিক ১৫ দিন আগে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত কোটা পদ্ধতি বাতিল করার ঠিক পরদিন দিল্লির প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র সম্পাদকীয়র শিরোনাম ছিল ‘ডিসটার্বিং ইন ঢাকা’।

ওই সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে যে সহিংসতা দেখা যাচ্ছে, তা আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী রাজনীতিরই উপসর্গ। ভারতের এখন সময় এসেছে হাসিনার পর কী, তা নিয়ে ভাবার!’ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারত সেটাই ভাবছে বিএনপিকে ঘিরে।

হা.শা./ আই.কে.জে/  


বিএনপি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন