বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও হতাশার ইঙ্গিত দিয়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জিল্লুর রহমান বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ফলাফল হতে পারে, এবং রাজনীতিতে নতুন একটি শক্তির আবির্ভাব ঘটতে পারে। তবে দেশের জনগণ এখনো—আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে বিকল্প চিন্তা করতে রাজি নয়। তিনি মনে করেন, নির্বাচনের ফলাফল শেষ মুহূর্তেও বদলে যেতে পারে এবং একটি ঘটনাই মানুষের মানসিকতায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
গত মঙ্গলবার (১৯শে আগস্ট) নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিও আলোচনায় তিনি এসব মন্তব্য করেন। আজ বৃহস্পতিবার (২১শে আগস্ট) দুপুর ২টা পর্যন্ত ভিডিওটি ইউটিউবে প্রায় ২৫ হাজার বার দেখা হয়েছে।
আলোচনায় জিল্লুর রহমান বলেন, ‘নানা রকম ধারণা ও সম্ভাবনা বাংলাদেশকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে ফেলছে। যারা এতদিন ধরে আশার কথা বলছিলেন, তারা এখন নিরাশার বার্তা দিচ্ছেন। তবে তাদের আবার নিজস্ব কিছু স্বপ্ন আছে, এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে আসন্ন নির্বাচন। অনেকের ধারণা, এই নির্বাচনে একটি অপ্রত্যাশিত ফলাফল হতে পারে। ইতিমধ্যেই অনেকে বলছেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থাকছে না, তারা নির্বাচন করতে পারবে না। বিএনপি ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে একটি নতুন শক্তির আবির্ভাব হতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতিতে, যেমনটি পৃথিবীর অনেক দেশে ঘটেছে। যদিও এমন নতুন শক্তি শেষ পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রেই সুবিধা করতে পারেনি, তবুও বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরকম একটি শক্তি আসার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।’
তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি এখনও সেটি মনে করি না। কারণ, এই নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করা সম্ভব হলেও, বাংলাদেশের মানুষের মানসিকতা এখনো দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের বাইরে ভাবতে প্রস্তুত নয়।’
জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখন তার নিজের ঘরেই সংকটে আছে। যদিও তারা জাতীয় রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু মূলত একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে।’
জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি সুসংগঠিত ও শৃঙ্খল রাজনৈতিক শক্তি হলেও, তারা যেসব আদর্শ বাস্তবায়ন করতে চায়, তা এখনও বাংলাদেশের মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারেনি। তাছাড়া ১৯৭১ সালের ইতিহাস তো আছেই।’
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ‘এনসিপি নিয়ে এখনো মানুষের মধ্যে তেমন কিছু তৈরি হয়নি। বরং অনেকে এটিকে ‘লস্ট কেস’ হিসেবে দেখেন, যদিও তাদের কণ্ঠস্বর অনেক চড়া। ইসলামী আন্দোলন ও হেফাজতে ইসলামের অবস্থান আছে, তবে তারা সুবিধাজনক জায়গায় নেই।’
ভোটারদের মনোভাব বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘অনেক জরিপে দেখা গেছে, অনেক মানুষ এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কাকে ভোট দেবে, অথবা তা প্রকাশ করছে না। এর পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে— হয়তো তারা আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জামায়াতের সমর্থক, কিন্তু তারা তা প্রকাশ করতে চাইছে না। এই সিদ্ধান্তহীনতা সময়ের সঙ্গে কেটে যেতে পারে।’
রাজনীতির অংক সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি গাণিতিক নিয়মে চলে না। রাজনীতির অঙ্ক একেবারেই আলাদা। মানুষের মন পড়া যায় না। একটি দুশ্চরিত্র অপরাধীরও মনের গতি থাকে যা জানা যায় না, আবার একজন সাধু সন্ন্যাসীর মনেও কী আছে, তা আমরা জানি না।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ভোটের ফলাফল নির্বাচনের আগের দিনেও বদলে যেতে পারে। মানুষের মনের অভ্যন্তরে একটিমাত্র ঘটনা বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে নির্বাচনের রেজাল্ট আগে থেকে বলা কঠিন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার উপলব্ধি থেকে বললে, বাংলাদেশের মানুষ এখনো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে কিছু চিন্তা করে না। যদি নির্বাচন এই বছরের মাঝামাঝি বা ডিসেম্বরের মধ্যে হতো, তাহলে বিএনপি হয়তো ভালো ফলাফল করতে পারত। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, বিএনপি ততটাই দূরে সরে যাচ্ছে।’
তরুণ ভোটারদের প্রসঙ্গে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সুইং ভোটারদের সমর্থন এখন আর আওয়ামী লীগের প্রতি নেই। বিশেষ করে তরুণদের কাছে আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা প্রায় শূন্যের কোঠায়। তবে আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী ভোটব্যাংক এখনও রয়েছে।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখা হচ্ছে। কিন্তু আদৌ কি তাদের বাইরে রাখা সম্ভব হবে? যদি রাখতে হয়, তার পরিণতি কী হবে? সেই নির্বাচন কি প্রশ্নবিদ্ধ হবে? এসব বিষয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি না ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। এই সরকারের মধ্যে অনেকেই আমার পরিচিত, শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি রয়েছেন। কিন্তু একটি নির্বাচন আয়োজনের জন্য যে ক্ষমতা থাকা দরকার, বর্তমান সরকারের সেই ক্ষমতা নেই। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও একেবারেই ভালো নয়, যাই বলা হোক না কেন।’
খবরটি শেয়ার করুন