ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
জমি কেনাবেচার কর থেকে ১% থাকে এলাকার উন্নয়নের জন্য। এই টাকা জমা হয় উপজেলার ১%-এর ব্যাংক হিসাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এই টাকা বণ্টন করেন এলাকার ইউনিয়ন পরিষদগুলোর (ইউপি) মাঝে। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ইউএনও ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ১% এর টাকা বণ্টন করার সময় তিনি ২৫% ঘুষ নেন।
এ নিয়ে গত ২৭শে আগস্ট জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। উপজেলার ফরাদপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হামিদ বাবলু এই অভিযোগ করেন। তিনি উপজেলা বিএনপির সদস্য। অভিযোগের সঙ্গে ১০ পাতায় প্রায় এক হাজার মানুষের স্বাক্ষরও সংযুক্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে।
এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (২৫শে সেপ্টেম্বর) ইউএনও ফয়সাল আহমেদকে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় ইউএনও হিসেবে বদলি করা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জুবায়ের হোসেন ওই বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। তবে এই ইউএনওকে গোদাগাড়ীতেই রাখার দাবিতে তার অনুসারীরা আজ রোববার (২৮শে সেপ্টেম্বর) উপজেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে দেওয়া লিখিত অভিযোগে নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ১% এর টাকা বিভিন্ন ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে বণ্টন করা হয়। সেখান থেকে ইউএনও ঘুষ নেন ২৫%। এ বিষয়ে সাধারণ জনগণ ইউএনওকে কিছু বলতে গেলে তিনি সাধারণ মানুষকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখান।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ঈদে সরকারিভাবে বরাদ্দ করা ভিজিডি এবং ভিজিএফ চাল সাধারণ গরিব মানুষের মধ্যে বিতরণ না করে অবৈধভাবে আত্মসাৎ করার কারণে গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসলাম আলীকে হাতেনাতে ধরেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। কিন্তু কোনো আইনগত পদক্ষেপ না নিয়ে তার কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেন। আর সংশ্লিষ্ট গ্রাম পুলিশ সদস্য ও ভ্যানচালককে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে।’
এ ছাড়া চর আষাড়িয়াদহ ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বরাদ্দ করা ভিজিডি এবং ভিজিএফ খাতের চাল বিতরণে অনিয়ম হয়। বিষয়টি সম্পূর্ণ জ্ঞাত হওয়ার পরও ইউএনও কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেননি। পার্সেন্টেজ গ্রহণ করে তিনি পুরো নীরবতা পালন করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন ইউনিয়নে উন্নয়ন খাতের জন্য কোনো কার্যাদেশ না দিয়েই জনগণের কাছ থেকে আদায় করা রাজস্ব খাতের ট্যাক্সের টাকা সরকারি খাতে জমা করেন না ইউএনও। কোনো কাজ না করে খরচ দেখিয়ে এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। অবৈধ পুকুর খননের বিরুদ্ধেও ইউএনও ফয়সাল আহম্মেদ কোনো পদক্ষেপ নেন না বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, গোদাগাড়ীর কাপাশিয়াপাড়া এলাকার মো. হামিদুজ্জামান মোহনপুর ইউনিয়নের নলীগ্রাম মৌজায় আওয়ামী লীগের লোকজনকে নিয়ে খনন করছেন। বেআইনিভাবে এই পুকুর খনন বন্ধের জন্য ইউএনওকে লিখিতভাবে জানানো হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। তিনি পুকুর খননকারীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগকারী আবদুল হামিদ বাবলু জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মহিনুল হাসানকে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করেন। ১০ই সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা তাকে ডেকেছিলেন। তিনি এবং আরেকজন সাক্ষ্য দিয়ে এসেছেন। তাকে আরেক দফা ডাকা হবে বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে ইউএনওকে জয়পুরহাটে বদলি করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘এরা কেন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন বলতে পারব না।’
পাচার করা চাল উদ্ধার করলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। পুলিশ যদি তদন্তে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততা পায়, তাহলে পুলিই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
আর ১% এর টাকা থেকে ঘুষ নেওয়াসহ অন্য সব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। বদলি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘সরকারি চাকরি করি, যেখানে সরকার প্রয়োজন মনে করে, সেখানেই বদলি করতে পারে।’
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত ফয়সাল আহমেদ সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছিলেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় বদলি করা হয়। রাজশাহীতে এসেও তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠল।
খবরটি শেয়ার করুন