দেশের রাজনীতিতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কলকাতায় ‘পার্টি অফিস’ (দলীয় কার্যালয়) চালুর গুঞ্জন ঘিরে নানা আলোচনা এবং গভীর বিশ্লেষণে উঠে এসেছে বাস্তবতা, যেখানে ভার্চুয়াল ও গোপন কাঠামো মিলিয়ে দলটি গড়ে তুলেছে রাজনৈতিক সক্রিয়তার নতুন ধরণ।
ঢাকা থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে, কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ভবনের অষ্টম তলায় চলছে নিরব রাজনৈতিক তৎপরতা। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, কিন্তু অভ্যন্তরে সেখানে নিয়মিত বৈঠক করছেন আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী।
গত শুক্রবার (৮ই আগস্ট) বিবিসি বাংলাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে আসে—এই তথাকথিত অফিসটি প্রচলিত কোনো দলীয় কার্যালয় নয়। নেই ব্যানার, পোস্টার কিংবা রাজনৈতিক ছবি। তবুও এটি একটি কার্যকর রাজনৈতিক সমন্বয় কেন্দ্র, যেখানে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দল পরিচালনার চেষ্টা চলছে।
ভার্চুয়াল মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রাণ
বড় সভা হলে ব্যাঙ্কোয়েট হল বা রেস্টুরেন্ট ভাড়া নেওয়া হয়। ছোট আলোচনা বাসাবাড়িতে হয়, আর প্রতিদিনের যোগাযোগে ভূমিকা রাখে হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, জুম ও ফেসবুক লাইভের মতো ডিজিটাল টুলস।
দলীয় নেত্রীর (শেখ হাসিনা) ভার্চুয়াল উপস্থিতি কিংবা ভিডিও বার্তা—সবই এখন সংগঠনকে কার্যকর রাখতে সহায়ক। একে অনেকেই বলছেন, ‘রাজনীতির ভার্চুয়াল রিইনভেনশন’।
সরকারি প্রতিক্রিয়ায় নজরদারি
গতকাল রোববার (১০ই আগস্ট) বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) প্রকাশিত সরকারি সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। তারা দেশের বাইরে কী করছে, আমরা তা মনিটর করছি। যদি কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রেও নজর রাখা হচ্ছে।’
এই বিবৃতি স্পষ্টভাবে বোঝায়, সরকার বিদেশে দলটির কর্মকাণ্ড নিয়ে সতর্ক এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।
গুজব-বাস্তবতায় ভারতের অবস্থান!
বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল ২৪’-এ রোববার (১০ই আগস্ট) রাতে প্রচারিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখনো পর্যন্ত ‘পার্টি অফিস’ বিষয়ক কোনো নিশ্চিত তথ্য দেয়নি। তারা একে ‘গুজব’ হিসেবে আখ্যা দিলেও বিষয়টি পুরোপুরি নাকচ করেনি।
যার মানে—ক্রিয়াশীল একটি কাঠামো রয়েছে, তবে তা এতটাই ‘গোপন’ যে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি।
রাজনৈতিক বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
এই গোপন দলীয় কার্যালয় একটি বিকল্প রাজনৈতিক কৌশলের অংশ, যেখানে দলটি (আওয়ামী লীগ) বাস্তব ও ভার্চুয়াল, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক, গোপন ও জনসম্মুখ—সব স্তরে নতুনভাবে সংগঠিত হচ্ছে। এটি এক ধরনের রাজনৈতিক 'রেজিস্ট্যান্স মডেল'—যা মূলধারার বাইরে গঠিত হলেও কার্যকর। রাজনৈতিক ভাষ্যে একে ‘সামান্তরাল রাজনৈতিক কাঠামো’ বলা যায়, যা প্রযুক্তিনির্ভর, কেন্দ্রীভূত নয়, কিন্তু তৎপর।
রাজনীতির বিকল্প ছায়াপথ
কলকাতার বিতর্কিত ‘পার্টি অফিস’ এখন আর কেবল গুঞ্জনের বিষয় নয়—এটি এক বাস্তবতা, যা প্রতিফলিত করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনেতিক দলের টিকে থাকার প্রচেষ্টা এবং নতুন রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার কৌশল।
গোপনীয়তা, ভার্চুয়াল সংযোগ এবং সীমান্তের ওপারে সংগঠন পরিচালনা—এই ত্রিপাঠেই এগোচ্ছে বর্তমানে আওয়ামী লীগের একাংশের কর্মকাণ্ড।
খবরটি শেয়ার করুন