পাখিরা তাদের খাদ্য থেকে ক্যারোটিনয়েড নামক রঙিন পিগমেন্ট গ্রহণ করে, যা তাদের দেহে লাল, কমলা ও হলুদ রঙের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। ছবি: রিকার্ডো লোপেজ
বিশ্বের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন ও সমুদ্রের প্রাণিজগতের রঙিন বৈচিত্র্য চোখে পড়ার মতো। রেইন ফরেস্টের রঙিন তোতাপাখি থেকে শুরু করে প্রবালপ্রাচীরে থাকা উজ্জ্বল হলুদ, কমলা ও নীল রঙের মাছ পর্যন্ত—এ উষ্ণ অঞ্চলের প্রাণীরা কেন এত উজ্জ্বল রং ধারণ করে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই।
জার্মানির লেইবনিজ সেন্টার ফর ট্রপিক্যাল মেরিন রিসার্চের ইকোলজিস্ট অস্কার পুয়েবলা জানিয়েছেন, প্রাণীরা রঙের মাধ্যমে মূলত যোগাযোগ স্থাপন করে। কখনো এটি নিজেদের প্রজাতির সদস্যদের কাছে আকর্ষণ দেখানো বা সঙ্গী আকর্ষণের জন্য, আবার কখনো শিকারি থেকে রক্ষা পেতে সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে।
তবে প্রাণীদের রঙিন হওয়ার কারণ ও পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন। পাখিরা তাদের খাদ্য থেকে ক্যারোটিনয়েড নামক রঙিন পিগমেন্ট গ্রহণ করে, যা তাদের দেহে লাল, কমলা ও হলুদ রঙের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এ উজ্জ্বল রং তাদের সঙ্গী আকর্ষণ করতে বা অন্য পাখির প্রতি আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে মাছ ও শামুকরা তাদের কোষের জটিল সূক্ষ্ম কাঠামো ব্যবহার করে আলো বিকিরণ করে নিজেদের রং পাল্টাতে পারে, যা এদের শিকারি থেকে লুকানোর উপায়।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পরিবেশের বৈচিত্র্যই এ রঙের বিবর্তনে মূল ভূমিকা রেখেছে। পর্তুগালের রিসার্চ সেন্টার ইন বায়োডাইভার্সিটি অ্যান্ড জেনেটিক রিসোর্সেসের বিবর্তন বিজ্ঞানী রবার্তো আরবোরে বলেছেন, ‘একটি জীব সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যের সঙ্গে তার রঙের বৈচিত্র্যের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। যেমন: একটি রেইন ফরেস্টের মতো জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যা বেশি, সেখানে একই প্রজাতির সদস্যদের শনাক্ত করা প্রয়োজন। কারণ অন্য প্রজাতির সঙ্গে ভুল মিশে গেলে তা দাম্পত্য জীবনে বা সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’
বিশেষত পাখিরা তাদের দৃষ্টিশক্তির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। তাই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চলে পাখির প্রজাতির বিপুল বৈচিত্র্যের ফলে তাদের মধ্যে স্বতন্ত্রভাবে নিজেকে আলাদা করে উপস্থাপন করার প্রতিযোগিতা তীব্র হয়ে ওঠে। এর ফলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের তোতাপাখি, হামিংবার্ড, টুকানসহ অন্যান্য পাখির রং ও প্যাটার্নের অসাধারণ বৈচিত্র্যের সৃষ্টি করে।
তবে পুয়েবলা সতর্ক করে বলেন, ‘আমাদের রঙের ধারণা অন্য প্রাণীদের উপলব্ধি থেকে অনেক ভিন্ন হতে পারে।’
সামুদ্রিক পরিবেশেও একই কথা প্রযোজ্য। পানির মধ্য দিয়ে আলো যাওয়ার পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ায় লাল রং দ্রুত শোষিত হয়, তাই সেখানে লাল রং অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার জন্য আদর্শ। প্রবালপ্রাচীরে উজ্জ্বল প্যাটার্নগুলো আমাদের চোখে নজরকাড়া হলেও অনেক ছোট মাছের কাছে এগুলো তাদের আড়াল করার কাজ করে।
পুয়েবলা বলেন, ‘প্রবালপ্রাচীরে মাছেদের নীল ও হলুদ রং বেশি দেখা যায়, তবে অনেক মাছ সেগুলো দেখতে পারে না। এ রঙের তীব্র বৈপরীত্য তাদের আকার ও গঠনকে অস্পষ্ট করে, যা তাদের আড়াল হতে সাহায্য করে।’
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পরিবেশে প্রাণীদের মধ্যে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাত্রা অনেক বেশি। এ কারণে প্রাণীদের রঙিন হওয়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, কারণ এতে তারা সহজেই নিজেদের আলাদা করতে পারে। আর শারীরবৃত্তীয় দিক থেকেও এখানে অধিক শক্তি এবং খাদ্যের প্রাচুর্য থাকায় প্রাণীরা রং উৎপাদনে বেশি শক্তি ব্যয় করতে পারে।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন