ছবি - সংগৃহীত
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সবসময় আলুই ছিল সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা। তবে বেশকিছু দিন ধরে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে আলুর বাজার চরম অস্থিতিশীল। ব্যবসায়ীরা কম দামে আলু আমদানি করলেও সেই আলুর দামও নাগালের বাইরে।
খুচরা বাজারে ৭৫-৮০ টাকার নিচে আলু মিলছে না। হাজার হাজার টন আলু আমদানি করা হলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। তারা কম দামে কিনলেও বেশি দামে বিক্রি করছে। অসাধু আলু ব্যবসায়ীরা সারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। তাদের কারণে আলুর দাম কমছে না। এক্ষেত্রে কোল্ড স্টোরেজ ব্যবসায়ীরাও কম দায়ী নয়।
বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। শুল্ক কমানোর এক মাস আগেও আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর গত বছরের এ সময় আলুর দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় আলুর দাম বেড়েছে ৪০ দশমিক ৮২ শতাংশ।
অথচ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে এক কেজি আলু বিক্রি হওয়ার কথা ১৯ টাকা ৪৮ পয়সা। আর পাইকারিতে এক কেজি আলু বিক্রি হওয়ার কথা ২৩ টাকা ৩০ পয়সা। সব ধরনের খরচ মিলে এক কেজি আলুর সর্বোচ্চ দাম হতে পারে ৪৬ টাকা। অথচ প্রায় দ্বিগুণ দামে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে।
গত ৫ই সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। একই সঙ্গে আলু আমদানিতে যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আছে, তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছে। এসব সুবিধা নিয়ে টনে টনে আমদানি করা আলু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। অর্থাৎ আমদানিতে সুফলও পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। অসাধু ব্যবসায়ীরা কম দামে আমদানি করে বাজারে প্রচলিত দামে বিক্রি করছে।
আলুর বেশির ভাগই এখন বড় মজুতদারদের হাতে। এছাড়া সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারা এবং ঢিলেঢালা বাজার মনিটরিংয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন সাধারণ ভোক্তারা। পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও অস্বাভাবিক দামে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
আলুর মতো পেঁয়াজের বাজারও অস্থির। এমন পরিস্থিতিতে গত ৬ই নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পেঁয়াজের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ও সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে আমদানির ওপর বিদ্যমান শুল্ক এবং রেগুলেটরি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ভ্যাট আর থাকছে না। এতে পেঁয়াজ আমদানি বৃদ্ধি পেয়ে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, পেঁয়াজের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এর তেমন কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। ভারতের পাশাপাশি মিশরের পেঁয়াজ মিলছে বাজারে। দেশি পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিক্রি হচ্ছে এসব পেঁয়াজ। তবু এর দাম খুব চড়া।
বর্তমানে বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, আর ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, শুধু এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৮ শতাংশ।
সরকারের নানান উদ্যোগের পরও কিছুতেই বাজারে দাম কমছে না। সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়েছে আলু-পেঁয়াজের বাজার। ভোক্তা অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে গঠিত টাস্কফোর্সসহ সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমেই একমাত্র বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
আই.কে.জে/